সকালে আমার এখানে তুমি আসোনি; আসতে যদি তাহ’লে ভাবনার নীলিমায় শুভ্র জ্যোৎস্নাকে ছুঁয়ে নিস্তব্ধতা ভেঙে দিতাম; তুমি হয়তো জান না; বিচ্ছেদে শাদা মেঘের কত গভীরতা- জমা রয়েছে আমার বুকে শিশিরের জলে, ছুঁয়ে যাওয়া হিমে ভাবনার বিস্ময়ে; হৃদয়ের গভীর গহ্বরে-প্রজ্জলিত স্লিগ্ধতা প্রসারিত শেফালির বনে, মুগ্ধ আর অপূর্ব সৌন্দর্য নিস্তব্ধতার দিকে-দিকে; জোৎস্নার হলুদ বনে আমার হারানো শূন্য বুকে; তুমি আসলে; হেমন্তের হলুদ রঙে ভ’রে উ’ঠে নক্ষত্রবীথি নির্ঝরের গভীরে, হৃদয়ের প্রোজ্জ্বলিত ভেঙে পড়া সংগীতে দুপুরে আমার এখানে তুমি আসোনি; আসতে যদি তাহ’লে অলস দুপুরটা ওভাবে কাটতো না ঘাস আর সমুদ্রের ঢেউয়ে ; তুমি হয়তো জান না; বিস্ময়কর শীতল সম্পর্ক মূছে যায় মধুমতীর ঢেউয়ে আলো আর অন্ধকারের মসৃণ মেঘে-মেঘে ; তুমি কাছে থাকলে আমার কোনও নীলসন্ধ্যা জমে না চোখের কোণে; ছুঁয়ে যাওয়া শরীরে, সৌন্দর্যের আঙুলে; বিকালে আমার এখানে তুমি আসোনি; আসতে যদি তাহ’লে ‘গীতবিতান’-এর উপর পড়ে থাকতে পারতাম না সন্ধ্যার অন্ধকারে, নক্ষত্রের নীল আলোয় আমিও হারিয়ে যাই নিশীথের তীব্র হাওয়ায়; ...
মামুনুর রহমান, সমকালীন বাংলা সাহিত্যের এক অদ্বিতীয় সংবেদনশীল কণ্ঠ। তাঁর লেখায় জীবনের সাধারণ মুহূর্তগুলোও নতুন এক আলোর আভায় ফু’টে ওঠে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, কবিতা কেবল শব্দের খেলায় সীমাবদ্ধ নয়; এটি সেই নীরব ভাষা, যা অন্তরের গভীরে বাস ক’রে, পাঠকের অভ্যন্তরীণ অনুভূতির সঙ্গে মিশে এক অনন্য প্রতিধ্বনি সৃষ্টি ক’রে। তেমনি তাঁর গদ্য রচনা পাঠককে শুধু ভাবায় না, বরং অনুভব করায়, জীবনের ক্ষুদ্রতম ছোঁয়ায়ও গভীর মানসিক ধ্বনিতে স্পন্দিত ক’রে। তিনি খেয়াল রাখেন পাঠকের মন ও মননশীল দিকটি।