সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

মে, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

কবিতাঃ আমাকে ছুঁয়ে যাও

একটু ছোঁয়া দাও, আমার নষ্ট-আবর্জনাময় শরীরে, যে বড় প্রত্যাশী, অনেকদিন আমি উপলব্ধি করিনি, কী তার স্বাদ, আরক্ত শিশিরে, ঠোঁটের কোণে, কিভাবে ঢেউ খেলে যায় শরীর থেকে শরীরে, ধীরে-ধীরে আলিঙ্গনের পর কতক্ষণ কাঁপতে থাকে আমাদের অভ্যন্তরে ভেজা রক্তপদ্মে;     অমল জ্যোৎস্নায় ছুঁয়ে দেখছ তা-কখনও, কেঁপে-কেঁপে স্বপ্নের গভীরে   সব ভুলে গেছি রূপান্তরের স্বপ্নলোকে; আঙুলের কোমল ছোঁয়ায়-গ্রীবায়,   তোমার অপার্থিব হীরকখচিত স্বর্ণের শরীর, ঢেউ খেলানো মসৃণ চুল আর ঝর্ণাস্রোতে ব’য়ে যাওয়া গোলাপী আভা, যেন ছিটিয়ে-ছিটিয়ে দেখানো পথে   স্বর্ণ ছড়াচ্ছ ইস্পাতমিশ্রিত কঠিন শরীরে-পদ্ম আর জ্যোতির্ময় চোখের কোণে;         আমি হেঁটে যাচ্ছি মধুমতী, শৈলদাহ, বারাসিয়া আর ঘাঘর নদীর পাড় ধ’রে;       চাঁদ আর জ্যোৎস্নার সাথে কথা বলে-বলে নিসর্গপ্রদীপে, আশ্বিনের বাতাসে   মুহূর্তে ছুঁয়ে যাও, ঠোঁটের কোমল স্পর্শে, কেঁপে উঠা আঙুলের শ্রাবণ জলে,   তোমার সাম্রাজ্যেয় তুমি সম্রাজ্ঞী, মাতাল আমি বিবর্ণ মধ্যেদিনে-বিস্তৃত ভূমিতে       যদি চোখ রাখি তোমার নীল ঢেউয়ে, চাঁদ আর নরম ঘাস ফুলের সন্ধ্যাতারায়,   কোমল শিশিরে আমাকে ছুঁয়ে যা

কিশোর সাহিত্য ঃ কুয়াশা ও নিঃসঙ্গ বালক

কুয়াশাগুলো সাদা কেন ? তারা কি অন্য কোনো রঙের হতে পারত না ! এই যেমন লাল, হলুদ, সবুজ, গোলাপি বা   কালো রঙের। তাহলে কি ওই কুয়াশাগুলো দেখতে অনেক সুন্দর লাগতো, আমার জানতে বা দেখতে খুব ইচ্ছে করে। কিন্তু আমার ইচ্ছে করলেই কী সব কিছুর রঙের পরিবর্তন সাথে-সাথে হ’য়ে যাবে ! আমি জানি, এটা কখন সম্ভব নয়। বড় কোন যাদুকর হ’লে, সে হয়তো কিছুটা সময়ের জন্য আমার ইচ্ছেগুলো পূরণ করতে পারত। কিন্তু সব সময়ের জন্য সেটা সম্ভব নয়। কিন্তু মাঝে-মাঝে আমার যে খুব ইচ্ছে করে, সাদা কুয়াশাগুলোকে গাঢ় লাল রঙের করে দেখতে ! না, রঙটা লাল না, যদি সবুজ হতো তাহলে কেমন হতো। যদি হলুদ হতো, তবে কি আমার খুব খারাপ লাগতো ? আমি অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ব্যাপারটি ভাবতে থাকি। নীরব একটি রাস্তা দিয়ে আমি হাঁটছি; আর আমার চতুর্দিকে লাল রঙের কুয়াশায় ভ’রে আছে। আমি যেন অনেক লালের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার এই সুন্দর দু’চোখ যতদূর দেখতে পাচ্ছে, সেখানে যেন লাল ছাড়া অন্যকোন রঙ নেই। সেই লাল রঙের কুয়াশার জন্য পৃথিবীটা কী লাল হ’য়ে উঠবে ? সেই লাল কি আবার দেখতে আগুনের মতো ? আগুন তো দেখতে অনেক লাল। কিন্তু আগুন দেখতে তো আমার খারাপ লাগে না ! তাহ’লে কী লাল কুয়াশা

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসুঃ মরচে পড়া পেরেকের গান ও কিছু কবিতা

বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪), তার অন্যান্য সকল কাব্য থেকে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ হ’য়ে দেখা দেয় মরচে পড়া পেরেকের গান (১৯৬৬)- কাব্যগ্রন্থটি। কাব্যটি যখন প্রকাশ পায়, বুদ্ধদেব বসু অতিক্রম করেছেন পঞ্চাশ। ব্যক্তিত্ব- ভাব-গাম্ভীর্য ও অন্যান্য দিকে অর্জন করেছেন নানা অভিজ্ঞতা। তার রচিত অন্যান্য কাব্য থেকে স্পষ্ট চিহ্ন দেখতে পাই এ-কাব্যতে। দীর্ঘ পাঁচ বছরের, নিরন্তর কাব্য সাধনায় ১৯৬৬-তে, ২৬টি কবিতা নিয়ে প্রকাশ পায় এ-গ্রন্থটি। এ-কাব্যর, কবিতাগুলোর দিকে আমরা যদি একটু দৃষ্টি দেই, দেখতে পাব অনেক বেশী স্পষ্ট, অন্য অনেক কাব্যের কবিতা থেকে। এ-সকল কবিতার; শরীর জুড়ে গেঁথে থাকে মসৃণতার ছাপ। অনেক বেশী মৌলিক হ’য়ে ফু’টে উ’ঠে এ-কাব্যের কবিতাগুলো। সেই সাথে আরও একটি দিক স্পষ্ট হ’য়ে দেখা যাচ্ছে, দিন-দিন তার কবিতা থেকে যেন ঝ’রে পড়ছে মৌলিক কবিতার সংখ্যা। যে আঁধার আলোর অধিক (১৯৫৮)-এর পরবর্তী সময়ে; তেমন ভাবে দেখা দিচ্ছে না মৌলিক কবিতা। সেই সব কবিতার সৌন্দর্য যেন দূরে সরে যাচ্ছে, কবিতার পাতা থেকে। কিন্তু একটি কথা না বললেই নয় যে, ১৯৫৮-এর পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, তিনি অবস্থান করছিলেন দেশ থেকে বিদেশে। সেই সময় তিনি কী দূরে ছ

কবিতাঃ হাওয়ার রাত

 চৈত্রের বাতাসে কেঁপে-কেঁপে ধরা দেয় আমার মসৃণ দেহে, জীবনের রঙে,   সে বড় হাওয়ার রাত, কল্পনায় বেজে উ’ঠে পুরাতন ঢেউ দিগন্তের শেষে-   মাটির দেয়ালে লেপে দিই কঠিন চিত্র, শিল্পীর তুলিতে, হারানো গল্প বলি   মনের শূন্য বুক থেকে, ফিরে আয় আমার হারানো স্মৃতি- যা নিভে গেছে   কয়েক দশক পূর্বে বুকের গভীর থেকে, অথচ অনেক আবর্জনা জ’মে গেছে   কোমল আর শুভ্র বেষ্টিত সবুজ অরণ্যেয়; আমার দীর্ঘশ্বাস, তাদের খুঁজে ফিরি   জ্যোৎস্না আর রাশি-রাশি রৌদ্রজ্জ্বল দিনের শেষে, কোমল বাহুতে ধরা দাও;   স্তব্ধ প্রতীক্ষার অবসান ঘুচে যাক অগ্নিগিরির উত্তাপে পার্থিব জ্যোতির্ময়ে,   আশ্রয় পাক আমার অলৌকিক হৃদয়ের নক্ষত্রে, শ্রাবণের অমল শিশিরে-             আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রাখ, নিশ্চয়তা দাও সকল সৌন্দর্যের                     শব্দ গেঁথে থাকবে অতল বু’কে; শিশিরের মতো শব্দ ক’রে ঝ’রে প’ড়ে                  আমার গাঢ় অশ্রুকণা, স্লিগ্ধ চোখের কোণে ঘুরে ফিরে আলো ও আঁধারে,                  হাওয়ার রাতে ধরা দেয় শাদা হাত, শ্রাবণের সন্ধ্যায়, আমি জ্বেলে দিই                  উজ্জ্বল আলো আমার চতুর্দিকে; স

কবিতাঃ মন ভালো নেই

  আজ মন ভালো নেই, রবিরারে দিন ক্লান্ত মাখা, মিলিত ভাবনায়-       ফিরে-ফিরে আকাশের দিকে তাকাই ; বাসের শব্দ, মানুষের কোলাহল,   আর নিত্য দিনের ফেরিওয়ালার চীৎকার মিশে থাকে দিনের প্রতিমুহূর্তে,   আবার ফিরে আসি লুপ্ত স্মৃতিতে, যেখানে বাসা বাধে বিভিন্ন রঙের স্বপ্ন,   শাদা রঙের অট্টালিকায় দাঁড়িয়ে থাকে কিছু অচেনা তরুণী, আমার মতো   নিঃসঙ্গ ও একাকী, আপন শরীরটা তারা দুলিয়ে দেয় রেলিঙে ভর ক’রে,   আকাশের সেই চিলটা, সারাদিন উ’ড়ে উ’ড়ে ক্লান্ত হ’য়ে ফিরে আসে   দীর্ঘ মাঠের পাশে, একটু উষ্ণতার জন্য সে তাকিয়ে থাকে আমার   দৃষ্টির দিকে, ভাঙা স্বপ্নের মাঝে তাকে মিলিয়ে নিই সবুজ হৃদয়ের সাথে-   রাত্রি গভীর হয়, চাঁদ জেগে উ’ঠে, অচেনা কণ্ঠস্বর ভেসে আসে কানে,   হলুদ মেঘে ভর ক’রে ছায়া মেখে দেয় আমার উত্তরতিরিশ যৌবনে-   ভেঙে প’ড়ে সব স্থাপত্য, নগরীর প্রধান সড়কে জড় হয় কিছু নির্মম চোখ   কয়েক মুহূর্তে, তাদের কী আমি চিনি ? আপনজন-বন্ধু-আত্মার আত্মীয় ?   কিছুই জানা নেই আমার ! তীব্রবেগে পথ ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ি নিজস্ব গন্তব্যেয়     ঝরা চাঁপা ফুলের গন্ধ মেখে থাকে আমার স্নিগ্ধ শরীরে, জ্যোতির্ময় আভাসে-

কবিতাঃ রূপান্তরের চিহ্ন

               বিস্তৃত স্বপ্নলোকে সবুজ উদ্যান, অরণ্য আর জেগে উঠা একফালি চাঁদ-                যার সৌন্দর্যে কবির বু’কে রচিত হ’লো শতাব্দীর অমরকাব্য;                বিষাদ আর প্রেমময় সেই কবিতায় বলা হ’লো তোমারই কিংবদন্তীর কথা,                  দীপ্তিমান, আশ্চর্য আর উজ্জ্বল সেই প্রেমময় শ্লোক, স্বপ্নবেগে নির্ঝরের বু’কে,                  যেখানে তোমার বন্দনাই গাওয়া হ’লো অনেক বেশী অশ্রুভেজা চোখে-                নিরিবিলি জলের প্রবাহিত ধারায় নিজেকে উৎসর্গ করলাম নিঃশব্দে                  রূপসীর অমল বাহুতে, লাবণ্য ছুঁয়ে গেল শ্রাবণ জলের ঢেউয়ে,                আমার নষ্ট শরীরে গেঁথে নিলাম শিশিরের শুভ্রতা, ভরা পূর্ণিমায়                হারিয়ে গেল আমার মধ্যেযৌবন, আশ্চর্যজনক রূপান্তরিত শিল্পের অস্তিত্বে; প্রাজ্ঞ উপলব্ধি ধারণ করলাম নিবিড় বু’কে, তীব্র প্রেমের স্মৃতিতে- কেঁপে উঠি ধীরে-ধীরে, ঘাসের শিশিরে স্তব্ধ চোখের নীলাকাশে, গভীর অন্ধকারে ডুবে ছিলাম জ্যোতির্ময় শরীরে, পাখির ডাক, রোদের ঝিলিক,                    স্বরহীন কণ্ঠ, জলের গভীর শব্দ, স্নিগ্ধ শিশির, শ্রাবণের বৃষ্টির ফোঁটা-