সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

সেপ্টেম্বর, ২০১৯ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

কবিতাঃ অনিঃশেষ প্রত্যাবর্তন

সকালে আমার এখানে তুমি আসোনি; আসতে যদি তাহ’লে ভাবনার নীলিমায় শুভ্র জ্যোৎস্নাকে ছুঁয়ে নিস্তব্ধতা ভেঙে দিতাম;   তুমি হয়তো জান না; বিচ্ছেদে শাদা মেঘের কত গভীরতা- জমা রয়েছে আমার বুকে শিশিরের জলে, ছুঁয়ে যাওয়া হিমে ভাবনার বিস্ময়ে; হৃদয়ের গভীর গহ্বরে-প্রজ্জলিত স্লিগ্ধতা   প্রসারিত শেফালির বনে, মুগ্ধ আর অপূর্ব সৌন্দর্য নিস্তব্ধতার দিকে-দিকে; জোৎস্নার হলুদ বনে আমার হারানো শূন্য বুকে;   তুমি আসলে; হেমন্তের হলুদ রঙে ভ’রে উ’ঠে নক্ষত্রবীথি নির্ঝরের গভীরে, হৃদয়ের প্রোজ্জ্বলিত ভেঙে পড়া সংগীতে দুপুরে আমার এখানে তুমি আসোনি; আসতে যদি তাহ’লে অলস দুপুরটা ওভাবে কাটতো না ঘাস আর সমুদ্রের ঢেউয়ে ; তুমি হয়তো জান না; বিস্ময়কর শীতল সম্পর্ক মূছে যায় মধুমতীর ঢেউয়ে আলো আর অন্ধকারের মসৃণ মেঘে-মেঘে ; তুমি কাছে থাকলে আমার কোনও নীলসন্ধ্যা জমে না চোখের কোণে; ছুঁয়ে যাওয়া শরীরে, সৌন্দর্যের আঙুলে; বিকালে আমার এখানে তুমি আসোনি; আসতে যদি তাহ’লে ‘গীতবিতান’-এর উপর পড়ে থাকতে পারতাম না সন্ধ্যার অন্ধকারে, নক্ষত্রের নীল আলোয় আমিও হারিয়ে যাই নিশীথের তীব্র হাওয়ায়;   চন্দনের সুঘ্রান

প্রবন্ধঃ স্বর্ণকুমারী দেবীঃ সাহিত্যের পথে

রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত ভাইবোন ছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ১৮৪০ - ১৯২৬ ), সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ১৮৪২ - ১৯২৩ ), জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ১৮৪৯ - ১৯২৫ ) এবং স্বর্ণকুমারী দেবী ( ১৮৫৬ - ১৯৩২ ) । রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি; তাঁরা সবাই জড়িত ছিল শিল্প-সাহিত্যে ও সংস্কৃতি পরিবেশের সাথে। ভাইদের মধ্যে কেউ ছিল চিত্রশিল্পী ; বোন ছিল লেখক ।   রবীন্দ্রনাথের জ্যোতির্ময় আলোয়; তাঁদের মেধা আর প্রাজ্ঞতা যেন অনেকটা ম্লান হ’য়ে আসে, তারপরও তাঁরা থেমে থাকেননি ; এগিয়ে গেছেন আপন মহিমায়। রবীন্দ্রনাথ থেকে পাঁচ বছরের বড়ো ছিলেন স্বর্ণকুমারী দেবী । এখানে উল্লেখ্য যে,   স্বর্ণকুমারী দেবীই ছিলেন আধুনিক বাঙলা সাহিত্যের প্রথম উল্লেখযোগ্য মহিলা সাহিত্যিক।   জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে’ই স্বর্ণকুমারী দেবীর জন্ম। তিনি ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮১৭-১৯০৫) চতুর্থ কন্যা। তাঁর শিক্ষা শুরু হয় তৎকালীন ঠাকুর পরিবারের রীতি অনুযায়ী। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে শিক্ষার পরিবেশ ছিল। দেবেন্দ্রনাথের তৃতীয় পুত্র, হেমেন্দ্রনাথ শিক্ষার প্রসারের বিষয়ে বিশেষ উৎসাহী ছিলেন।   ব্রাহ্মসমাজ প্রবর্তিত অন্তঃপুরে স্ত্রী শিক্ষা আইন ত

প্রবন্ধঃ ‘যে আধার আলোর অধিক’ ও বুদ্ধদেব বসু

বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪), বাঙলা সাহিত্যের অন্যতম সাহিত্যিক। সাহিত্যের সকল দিকেই তিনি বিচরণ করেছেন। বাদ দেননি ; বাঙলা সাহিত্যের এমন কোন স্থান নেই বললেই চলে। কিন্তু কবিতার প্রতিই তাঁর অনুরাগ বেশী। ‘ যে আধার আলোর অধিক’ তাঁর অন্যতম একটি কাব্য। বুদ্ধদেব বসুর এ - কাব্যটি ; অন্যান্য অনেক কাব্য থেকে , দেখা দেয় স্বতন্ত্র হ ’ য়ে। যার রচনাকাল হিশেবে পাওয়া যায় (১৯৫৪-১৯৫৮)। দীর্ঘ এই পাঁচ বছরে ; তিনি রচনা করেন এ - কাব্যটি। পঞ্চান্নটি কবিতা নিয়ে ১৯৫৮-এর মে - তে ; প্রথম প্রকাশিত হয় ‘ যে আধার আলোর অধিক’ কাব্যগ্রন্থটি। বুদ্ধদেব বসুর অন্যান্য কাব্য থেকে ; সম্পূর্ণ পৃথক হ’য়ে দেখা দেয় এ - কাব্যটি। কারণ হিশেবে পাওয়া যায়, বুদ্ধদেব বসুর পরিপূর্ণ বয়সেই এটি কাব্য হিশেবে আত্মপ্রকাশ পায়। তাই অন্যান্য কাব্যের কবিতা থেকে; অনেক বেশী গভীরতা রয়েছে এ-কাব্যের কবিতাগুলোর মধ্যে । যে প্রেমের উৎস প্রসারিত হয়েছিল ‘ বন্দীর বন্দনা’ থেকে ‘শীতের প্রার্থনাঃ বসন্তের উত্তর’ পর্যন্ত। তার অনেকটা ধীর-স্থিতি ভাব দেখতে পাই এ-কাব্য পর্যন্ত। কাব্যটি, দ্বিতীয়বার মুদ্রিত হয়, ঠিক আট বছর পর ১৯৬৬-এর মে’তে। দ্বিতীয় সংস্করণে এসে বুদ

কবিতাঃ কোন ছায়া নেই

হাঁটতে শুরু করেছি অনেক দূর থেকে, যেন অনেকগুলো কোমল ছায়া দেখেই আমি হাঁটতে শুরু করেছিলাম; চেনা পথে পা রাখলাম আশ্চর্য কল্পনার শরীরে; খুব আস্তে আস্তে, ধীর আর শান্তভাবে; সবুজ বন পেড়িয়ে নিস্তব্ধতার অরণ্যেয় এগিয়ে গেলাম অনেকদূর, অতীতের হিমগর্ভে ফাল্গুনের বাতাসে, সন্ধ্যার হিমে,     গভীর সৌন্দর্যময় চেনা মুখগুলোও খুব বেশী অচেনা হ’য়ে উ’ঠে অমল নক্ষত্রে ; পাশের অচেনা মানুষটি, যে পবিত্র শ্লোক উচ্চারণ ক’রে চেয়ে নিল রঙিন মুদ্রা, আমার স্বপ্নিল বাহুতে তাঁর ছোঁয়া, গভীর অন্ধকারে নক্ষত্রের আলোতে ভেসে আসে নিরর্থক প্রার্থনা; তাঁর অলৌকিক বাণী আমাকেও দীর্ঘজীবী ক’রে তোলে;     ছায়াগুলো বহুদুর এগিয়ে গেল স্বপ্নের নিবিড়তায়, নির্জনতা র হারানো শিশিরে;   কোন ছায়া নেই নিজস্ব পথে, আমাকে নিঃসঙ্গ ফেলে, শূন্যলোকে আলো-স্বপ্ন আঁধারে শরীর ছুঁয়ে যায় সমুজ্জ্বল গাঢ় কুয়াশা র নির্জনে, ভাবনার সিঁড়িতে রেখে যাই তরঙ্গের নীল আলো ; সকল প্রেমিকারা চ’লে গেল সুঘ্রাণ ছড়িয়ে, আমার ইন্দ্রিয়ে তাঁদের অলৌকিক সৌন্দর্য গেঁথে থাকে স্নিগ্ধ স্ফীত আভাসে; ব্যর্থ আর কোমল ধ্বনি আমার মনে; শতাব্দীর দীর্ঘ পথে হেঁটেছি

জীবনীঃ একজন মৃণালিনী দেবী

বিয়ের পূর্ব নাম ভবতারিণী। বিয়ের পর, রবীন্দ্রনাথ নাম রাখেন মৃণালিনী দেবী । মৃণালিনীর জন্ম বাংলাদেশের খুলনা জেলার দক্ষিণডিহির ‘ফুলতলা’ গ্রামে, ১৮৭৪ সালের মার্চ মাসে, বাবা বেণীমাধব রায়চৌধুরী আর মাতা দাক্ষায়ণী দেবী। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মৃণালিনী দেবী শিরোনামের লেখাতে মৃণালিনী সম্পর্কে বলেন, ‘খুলনা জিলার দক্ষিণডিহি গ্রামের শুকদেবের বংশধর, বেণীমাধব রায়চৌধুরীর প্রথমসন্তান ভবতারিণী। তাহার জন্ম বাংলা ১২৮০ সালে। খেলাঘরে ঘরকণ্ণার সময় মৃণালিনীর স্বভাবের একটি বিশেষত্ব সকলেই লক্ষ করিতেন, ইহা সঙ্গিনীদের উপর তাঁহার কর্তিতের সখীসুলভ অধিকার, ইহাতে কর্তিতের সহজাত তাপ-চাপ ছিল না, সখী সুলভ প্রণয় প্রবণতায় ইহা সুস্নিগ্ধ কোমল সহনীয়; সঙ্গিনীরা তাই সখীর নির্দেশ মানিত, খেলা ও চলিত সখী ভাবে অবিরোধে। দক্ষিণডিহি গ্রামে এমন কি গ্রামের চতুর্দিকে ক্রোশের মধ্যেও উচ্চশিক্ষার বিদ্যালয় ছিল না।  গ্রামে একটি প্রাইমারি পাঠশালা ছিল, এই পাঠশালায় মৃণালিনীর বিদ্যাশিক্ষার সূত্রপাত হয়। প্রথম বর্গ পর্যন্ত  অবাধে পড়াশুনা চলিয়াছিল। কিন্তু সমাজে নিন্দার ভয়ে সুদূর পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হইয়া পরীক্ষা দেওয়া তাঁহার পক্ষে সম্ভব হইয়া