সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ কোন ছায়া নেই


হাঁটতে শুরু করেছি অনেক দূর থেকে, যেন অনেকগুলো কোমল ছায়া দেখেই
আমি হাঁটতে শুরু করেছিলাম; চেনা পথে পা রাখলাম আশ্চর্য কল্পনার শরীরে;
খুব আস্তে আস্তে, ধীর আর শান্তভাবে; সবুজ বন পেড়িয়ে নিস্তব্ধতার অরণ্যেয়
এগিয়ে গেলাম অনেকদূর, অতীতের হিমগর্ভে ফাল্গুনের বাতাসে, সন্ধ্যার হিমে,   
গভীর সৌন্দর্যময় চেনা মুখগুলোও খুব বেশী অচেনা হ’য়ে উ’ঠে অমল নক্ষত্রে;
পাশের অচেনা মানুষটি, যে পবিত্র শ্লোক উচ্চারণ ক’রে চেয়ে নিল রঙিন মুদ্রা,
আমার স্বপ্নিল বাহুতে তাঁর ছোঁয়া, গভীর অন্ধকারে নক্ষত্রের আলোতে ভেসে
আসে নিরর্থক প্রার্থনা; তাঁর অলৌকিক বাণী আমাকেও দীর্ঘজীবী ক’রে তোলে;   
ছায়াগুলো বহুদুর এগিয়ে গেল স্বপ্নের নিবিড়তায়, নির্জনতার হারানো শিশিরে;  
কোন ছায়া নেই নিজস্ব পথে, আমাকে নিঃসঙ্গ ফেলে, শূন্যলোকে আলো-স্বপ্ন
আঁধারে শরীর ছুঁয়ে যায় সমুজ্জ্বল গাঢ় কুয়াশার নির্জনে, ভাবনার সিঁড়িতে
রেখে যাই তরঙ্গের নীল আলো; সকল প্রেমিকারা চ’লে গেল সুঘ্রাণ ছড়িয়ে,
আমার ইন্দ্রিয়ে তাঁদের অলৌকিক সৌন্দর্য গেঁথে থাকে স্নিগ্ধ স্ফীত আভাসে;
ব্যর্থ আর কোমল ধ্বনি আমার মনে; শতাব্দীর দীর্ঘ পথে হেঁটেছি বিস্তীর্ণ দিকে,   
একাকী রুপালি জ্যোৎস্নায়, নক্ষত্রের নীল মেঘে, রাতের আঁধারের নিবিড়তায়,
অন্ধকারে শরীরের আবেদন তীব্র হ’য়ে উঠে শাদা হিমে; আশ্চর্য গাঢ় বিস্তীর্ণ
ভেসে আসা আমার পৃথিবীর কোমল ধ্বনি উচ্চারিত হৃদয়ের ব্যর্থ প্রলাপ;
নিবিড় হ’য়ে উ’ঠে সকল বাহু তার কঠিন স্পর্শে; স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা মিশে যায়
বিলুপ্ত হৃদয়ে ছায়াময় সবুজ পল্লবে, মায়াময় ভেসে উঠা আকাঙ্ক্ষার শরীরে;
কয়েক শতাব্দী ধ’রে আমি কোন ছায়া দেখি না আমার অভ্যন্তরে, নিঃশব্দে
হৃদয়ের গভীরে সমুদ্রের জল আমাকেও পুণ্যময় ক’রে তোলে গভীর গহ্বরে-
ছায়াগুলো মিশে গেছে রূপসীর শরীরের শেফালীর বনে আশ্চর্য কুয়াশায়;
হৃদয়ের নীল সমুদ্রে তাঁরা উড়িয়ে দিল প্রান্তরের দুর্দান্ত উচ্ছ্বাস শব্দহীন
জ্যোৎস্নার গলিত হিমে; শতাব্দীর নীল অন্ধকারে রেখে গেল অমলধারা;  
কোন ছায়া নেই আমার চতুর্দিকে অন্ধকার পৃথিবীর রাতের গাঢ় আঁধারে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধ সংগ্রহ

সুধীন্দ্রনাথ , সাতটি কাব্যগ্রন্থের মতো সাতটি প্রবন্ধের গ্রন্থ লিখলে খারাপ হতো না , বেশ ভালোই হতো । সুধীন্দ্রনাথের প্রবন্ধগুলো হালকা মানের নয় , যদিও তাঁর কোন রচনাই হালকা নয় । সাহিত্যে বিচারে তা অনেক উঁচুমানের । তার উপর ভাষার ব্যাপারটি তো রয়েছেই । সুধীন্দ্রনাথ মাত্র দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন । গ্রন্থ দুটো ‘ স্বগত ’ ( ১৩৪৫ ঃ ১৯৩৮ ), অপরটি ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’ ( ১৩৬৪ : ১৯৫৭ ) । ‘ স্বগত ’- তে রয়েছে ষোলটি প্রবন্ধ । গ্রন্থ দুটি তিনি রচনা করেছেন দু ’ ভাগে । লরেন্স বা এলিয়ট এর প্রবন্ধ যেমন পাওয়া যাবে না ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’- এ ; তেমনি রবীন্দ্র সম্পর্কিত প্রবন্ধ নেওয়া হয়নি ‘ স্বগত ’- এ । প্রকাশ কাল অনুযায়ী ‘ স্বগত ’- এর প্রবন্ধসমূহ : ‘ কাব্যের মুক্তি ’ ( ১৯৩০ ); ‘ ধ্রুপদ পদ - খেয়াল ’ ( ১৯৩২ ), ‘ ফরাসীর হাদ্য পরিবর্তন ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লিটনস্ট্রেচি ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লরেন্স ও ভার্জনিয়া উল্ফ্ ’ ( ১৯৩২ ), ‘ উপন্যাস তত্ত্ব ও তথ্য ’ ( ১৯৩৩ ), ‘ উইলিয়ম ফকনর ’ ( ১৯৩৪ ), ‘ ঐতিহ্য ও টি , এস , এলিয়ট ’ ( ১৯৩৪ ), ...