সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

জুন, ২০২২ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

কিশোর গল্পঃ দীপনের পেন্সিল

আমাদের ক্লাসটা কখনও এমন নীরব হয়ে উঠে না, আজ যেভাবে রয়েছে। সবাই খুব চুপচাপ। যেন কারও মুখ দিয়েও শ্বাস-প্রশ্বাস পড়ছে না। এতগুলো ছাত্র, কিন্তু কারও মুখে কোন কথা নেই। ক্লাসের চতুর্দিকে যেন একপ্রকার গভীর নীরবতা বয়ে যাচ্ছে। যদিও ক্লাসের এমন আচরণ কখনও কারও জন্য কাম্য হয়ে উঠে না। স্যার ক্লাসে ঢুকা মাত্রই সবাই যেন আরও বরফ হয়ে উঠল। না জানি কার কপালে আজ কি আছে। একজন আর একজনের মুখের দিকে শুধুই তাকিয়ে আছে। সাথে-সাথে সকলের বুকটা কেঁপে উঠছে। কিন্ত কোন কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। স্যার অন্যদিনের তুলনায় খুবই গম্ভীর হয়ে আছেন। চেয়ারে বসে আবার একটু চুপ করে রয়েছেন। এবার ডাকলেন, ‘সুমন, তুই এদিকে আয় ?’ তাকে ডাকা মাত্রই সে উত্তর দেয়, স্যার, ‘আমি তো কিছু করিনি?’,  স্যার বলে, ‘আমি তো তোকে কিছু করার কথা বলিনি। তোকে এদিকে আসতে বলেছি।‘ ‘সুমন বলে, ‘স্যার, কাজটা কে করেছে তাও আমি জানি না।‘ স্যার বলে, ‘আমি তোর কাছে এত কথা শুনতে চায়নি। তুই এদিকে আয়।’ সুমন ভয়ে-ভয়ে ডেস্ক ছেড়ে স্যারের দিকে এগিয়ে যায়।  কিছু বুঝার আগেই, তার যে ডাক পড়বে সে কখনও তা ভাবেনি। মনে মনে সুমন ভাবতে থাকে, না জানি কি কপালে আছে! হোক না

কিশোর গল্পঃ ঘড়ির বোবা কান্না

ঘড়িও যে মানুষের মত কাঁদতে পারে এটা মিতু কখনও লক্ষ্য করেনি। তার মনোযোগ ওদিকে যাইনি বললেই চলে। ঘড়ি আবার কাঁদে ? একথা কাউকে বললে, তারা আমাকে পাগল বা মাথা খারাপ ছাড়া আর কিছুই বলবে না। কিন্তু ব্যাপারটি আমারও আগে জানা ছিল না। জানা থেকেও যেটি বেশি দরকার ছিল তা হলো খেয়াল করা। হয়তো আমি এবারের মত, এর আগে সেটি খেয়াল করিনি, তাও হতে পারে। ব্যাপারটি বুঝার পর আমি অন্য কারও সাথে আলাপ করিনি। আমার ভাল লাগে যে, অনেকদিন পর হলেও আমি নতুন একটি জিনিস আবিষ্কার করলাম। ব্যাপারটিকে কী আবিষ্কার বলা যাবে ? অন্যরা যা মনে করুক না কেন, আমার ভাষায়, আমার জন্য এটি একটি নতুন আবিষ্কার। ব্যাপারটি ভাবতেই আমার বেশ ভাল লাগছে। কিন্তু এখনতো অন্যদেরও বলতে হবে। কাকে প্রথম বলবো, তা ভাবতে-ভাবতে অনেকটা সময় আমার কেটে গেল। রাতুলকে বলি, ও আমার সব কথাই বিশ্বাস করে। ও জানে যে, আমি যা বলি বা করি তা কখনও মিথ্যা হয় না। কিন্তু যে ব্যাপারটি নিয়ে এত চিন্তা করছি, সেটা আবার একটু ভাল ভাবে পরীক্ষা করা উচিৎ নয় কী ? তাই, নিজে-নিজে আবার সিদ্ধান্ত নিই, আবার একটু মনোযোগ দিয়ে জিনিসটি লক্ষ্য করি। কিন্তু সমস্যা যে একটি আছে। তা কিভাবে সরাব। যদিও এটি তেমন

কিশোর গল্পঃ স্বপ্নের বাড়ী ও একজন সুখী মানুষ

পুকুর পাড়েই একক একটি বাড়ী। যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা সেই বাড়ীটি। দেখলেই যেন আরও বেশী দেখতে ইচ্ছা করে। অনেকে চোখ মেলে বাড়িটিকে দেখে , অনেকে আবার ফিরেও তাকায় না। এ রকম চমৎকার বাড়ী সর্বদা সব জায়গায় দেখা যায় না। অনেক গ্রাম ঘুরেও , আমার মনে হয় এ রকম একটি সুন্দর বাড়ীর দেখা মিলবে কিনা কিঞ্চিত সন্ধেহ  আছে। এ-রকম বাড়ী অনেকে দেখেছে , আবার অনেকে দেখেনি। কেউ কেউ হয়তো স্বপ্নে দেখতে পারে। বাস্তবে এ-রকম একটি বাড়ী দেখা খুবই কষ্টকর। আবার অনেক সময় হঠাৎ করে দেখা মিলে। বাড়িটির চতুর্দিক দিয়ে শুধু সৌন্দর্য আর সৌন্দর্য। অনেক রকম সৌন্দর্যে পরিবেষ্টিত রয়েছে বাড়ীটি। তার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যা-যা দরকার সবই যেন রয়েছে বাড়িটির চতুর্দিকে। সন্ধ্যার সময় ওখানটাতে গিয়ে দাঁড়ালে মনে হয় যেন এক অজানা দেশে চলে এলাম। রাতে যেন এক গভীর অন্ধকারের মধ্যে সে বাড়িটি এককভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঘন অন্ধকার যেন তাকে নিয়ে যাবে , তার অতলে। সেই বাড়িটির কোন সঙ্গী বা বন্ধু নেই , মানে তার আশে-পাশে আর কোন বাড়ী নেই। তার মত সে একাই দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির আশে-পাশের সমস্ত গাছগুলো যেন তার বন্ধু হ’য়ে , তার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ীটি বর্ষার সময় দাঁড়িয়ে থাকে ,

কিশোর গল্পঃ সাদা মেঘের ভেলা

নদীর পাশে, দাঁড়িয়ে থাকি একা-একা অনেকক্ষণ ধ’রে। আমার স্বপ্নের গভীর থেকে কে যেন আমাকে ডাক দিয়ে যায়, খুব নীরবে শান্ত ভাবে। তার কোনো শব্দই যেন আমার কানে পৌঁছে না। আমি তার কোনো উত্তর দিতে পারি না। আমি উত্তর দেওয়ার খুব যে চেষ্টা করি, তা-ও কিন্তু নয়। চুপ করে তাকিয়ে থাকি; বয়ে যাওয়া নদীর ঢেউয়ের দিকে। তার বহমান ধারার দিকে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে যেন সব কিছু মুছে যাচ্ছে আমার দু’চোখের কোণ থেকে। আমি কি তাঁকে ধরে রাখবো ? তার সমস্ত সৌন্দর্য কি ধরা দিবে আমার মধ্যে ! আমার কি কিছুই বলার নেই এই সৌন্দর্য নিয়ে। নাকি শুধুই দেখে যাব, আমার চোখের কোণে, যা কিছু এসে জড়ো হয় আপন মনে। আমি কিছু বলি না। আসলে সেই মুহূর্তে আমার বলার মতো কিছুই ছিল না। সব শব্দমালা যেন আমার মধ্যে থেকে স্তব্ধ হ’য়ে মুছে যাচ্ছে। আমি চারিদিকে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। কোন মানুষ নেই এখানে। আমি একা-একা দাঁড়িয়ে আছি। আমি কী আমাকেও দেখতে পাচ্ছি না ? হয়তো পাচ্ছি, হয়তো আবার পাচ্ছি না। কোন একটা তো অবশ্যই হবে। আমি অনেক টুকরো-টুকরো মেঘ দেখতে পাচ্ছি। তারা যেন সাদা আকাশটাকে তুলি দিয়ে রঙ করে যাচ্ছে, নিজের মতো করে। আর আমি সেদিকেই তাকিয়ে আছি অনেকক্ষণ ধ’রে। আমার

কিশোর গল্পঃ ফুলের ঘ্রাণ ও আমার ছোট বাগান

কোন-কোন ফুল আমার খুব প্রিয় তা কী আমি নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো ? আমিতো একসাথে অনেক -অনেক ফুল ভালোবাসি। আমি কী বলবো গোলাপ আমার প্রিয়, হাসনাহেনা আমার প্রিয়, কামিনী আমার প্রিয়, রজনীগন্ধা আমার প্রিয়, কাঁঠালচাঁপা আমার প্রিয়, শাপলা আমার প্রিয়, বকুল আমার প্রিয়। আরও তো কতফুল রয়েছে ; যাদের আমি অনেক -অনেক ভালোবাসি। আমার চারিদিকে, আমি অনেক ফুল দেখতে পাই। সেই সব ফুল যেন আমার আঁখিজুড়ে গেঁথে থাকে বসন্তের রঙে । তাদের আমি দেখতে পাই আমার চোখজুড়ে। যেদিকেই তাকাই শুধু ফুল আর ফুল।  তাদের ঘ্রাণ যেন আমার স্বপ্নকে আরও বেশী শুভ্রতা দিয়ে যায়। আমার খুব ভাল লাগে যে, অনেক ফুল ফোঁটা দেশে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। আমার দেশের মত সব দেশে কী এতো ফুল ফোটে ? আমি জানি না, আমি জানি যে; আমার দেশেই সবচেয়ে বেশী ফুল ফোটে। এটা ভাবতে আমার খুব ভাল লাগে। তাদের পাপড়ি আর বোঁটার দিকে আমি কোমল হ’য়ে তাকিয়ে থাকি। জবা আর সূর্যমুখী ফুলকে দেখলেই আমার মনে হয়; তারা যেন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে যাচ্ছে ! ব্যাপারটি ভাবতেই আমার মাঝে একপ্রকার শিহরণ খেলা ক’রে যায়। আমি নিশ্চুপ হ’য়ে ভাবতে থাকি; ফুলগুলো এতো সুন্দর হ’লো কিভাবে ! তারা কী আগে থেকেই এত

কিশোর গল্পঃ ছায়া আছে, ছায়া নেই

সুন্দর ঘরটিতে রাফিন ঘুরাঘুরি করছে । সে মাঝে মধ্যে অনেক রাত জাগে; আবার কখনও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমোতে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারটি তার নিজের উপর নির্ভর ক ’ রে। এমনও অনেক সময় গেছে; সে সারারাত জেগে ছিল, পরীক্ষার পড়ার জন্য ; পাশ করার জন্য। রাত জেগে শুধুই পড়েছে। যেকোন ভাবে পরীক্ষায় ভাল তার করতেই হবে। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়ে; রাত বাড়ার সাথে-সাথেই। অনেকে আবার জেগে থাকে। তাদের বাড়িটি তিনতলার একটি ছোট দালান। এই দালান বাড়িটি রাফিনের অনেক প্রিয়। প্রিয় এই জন্য যে, সে এই বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেছে। বেশ কিছু গাছপালা রয়েছে বাড়িটির চতুর্দিকে। নারকেল, আম, সুপারি আরও কত কি। বেশ কিছুটা খালি জায়গাও রয়েছে, বাড়িটির ভিতরে। সময় পেলেই আমরা ওখানে খেলাধূলা করি। কিন্তু পরীক্ষার কারণে; আপাতত সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে। অন্য বন্ধুরা খুব বেশী একটা তাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করে না। যেহেতু, তাদের সাথে প্রতিনিয়তই দেখা হচ্ছে তার। তাই কারও বাড়িতে কেউ না গেলেও চলে। আজ কয়েকদিন রাফিনের বেশ রাত জাগতে হচ্ছে। ঘুম আসলেও, সে ঘুমকে বাঁধা দিচ্ছে। সে যেন ঘুমকে বলছে; ‘ঘুম তুমি আমার উপর ভর ক’র না। সামনে আমার পরীক্ষা, আমাকে একটু পড়াশুনা করত