সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

বাংলাদেশ, অদ্ভুত আঁধারের পথে

  বাংলাদেশ, আজ এমন এক সময় অতিক্রম করছে, যেখানে বাতাসের ভেতরেও অস্থিরতার গন্ধ, তার ভিতরে   মিশে থাকে গভীর আঁধার, আর রাস্তার নীরবতার মধ্যেও অদৃশ্য উত্তাপের স্রোত। বাংলাদেশ যেন এক দীর্ঘশ্বাস;   দীর্ঘদিনের ক্লান্তি, আবার নতুন ভোরের ক্ষীণ আলো। রাজনৈতিক পালাবদল, জনমনের ক্ষোভ, অপ্রকাশিত ভয়, সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন অভ্যন্তরীণ এক পুনর্গঠনের অদ্ভুত যাত্রায় এগোনো, কোন এক নতুন আগন্তুক। এ-যাত্রায় আশা আছে, কিন্তু উদ্বেগের ছায়াও তার সমান সঙ্গী। বাংলাদেশ, আজ এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে প্রতিটি সকাল নতুন এক অনিশ্চয়তার রেখা টেনে দেয় আকাশে, আর প্রতিটি সন্ধ্যা পেছনে ফেলে যায় এক মুঠো জ্যোৎস্না, ক্ষত-বিক্ষত দেহ, তবু আশাবাদী একটি জনগোষ্ঠীর দীর্ঘশ্বাস। বাংলাদেশকে; এখন বিশ্লেষণ করতে গেলে কেবল রাজনৈতিক পরিভাষা তার জন্য যথেষ্ট নয়, অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানও নয়; সমাজের ভিতরে ভিতরে জমে থাকা আকাঙ্ক্ষা, ভয়, ক্ষোভ, আশা-প্রত্যাশা, মায়া, তার প্রেম-ভালবাসা, এসব মিলিয়েই আজকের বাংলাদেশের প্রকৃতি নির্ধারণ করতে হয়। যেন বিশাল এক নদী, যার উপরিভাগে প্রসারিত অশান্ত ঢেউ; ভিতরে নরম স্রোত, দোদুল্যমান,...

দ্বারকানাথ ঠাকুরের মৃত্যু-রহস্য

  উনিশ শতকের বাংলার আধুনিকতা, বাণিজ্যিক উন্মেষ, সামাজিক সংস্কার ও বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণের যে ইতিহাস নির্মিত হয়েছিল, তার কেন্দ্রে অন্যতম উজ্জ্বল নাম দ্বারকানাথ ঠাকুর (১৭৯৪-১৮৪৬)। ঠাকুর পরিবারের বাণিজ্যিক পুনর্জাগরণ, জমিদারি সংস্কার, ঔপনিবেশিক আমলে ভারতীয়দের আর্থিক স্বাবলম্বনের চিন্তা এবং ইউরোপীয় শিল্প-সভ্যতার সঙ্গে বাঙালির প্রত্যক্ষ সংযোগ এসবের পেছনে তিনি ছিলেন একাধারে উদ্যোক্তা, দূরদর্শী এবং তৎকালীন সমাজবোধে ব্যতিক্রমী এক প্রতিভা। তাঁর শৌখিনতা, উদারতা, সাহসিকতা এবং অতুলনীয় ব্যয়বহুল জীবনযাপন তাঁকে যেমন সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় এনেছিল, তেমনি ব্রিটিশ কোম্পানির প্রশাসনের কাছেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক অস্বস্তিকর চরিত্র। এই অসামান্য জীবনের আকস্মিক সমাপ্তি ১৮৪৬ সালের ১ আগস্ট লন্ডনে তাঁর মৃত্যু আজও নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়, কারণ ঘটনাপ্রবাহের অসংগতি, নথির অনুপস্থিতি এবং প্রশাসনিক তৎপরতার অস্বাভাবিক দ্রুততা সন্দেহকে আরও ঘনীভূত করে তুলেছে। তাঁর মৃত্যু-রহস্য তাই শুধু জীবনীমূলক অধ্যায় নয়, বরং ঔপনিবেশিক ভারতের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক খণ্ডচিত্রেও গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক। দ্বারকানাথ ঠাকুরের মৃত্যু-রহস্য বোঝার জন্য...

আকাশের গভীরতা

রাতের আকাশে অসংখ্য তারা ঝলমল করে, প্রতিটি তারায় লুকানো অজানা স্বপ্ন আমি তাকাই, হারাই নিজেকে অন্ধকারে, মনে পড়ে তোমার হাত, তোমার হাসি চাঁদের আলো দিয়ে আঁকা পথ ধরে, আমি হেঁটে যাই অচেনা শহরের নিঃশব্দে প্রতিটি ছায়া, প্রতিটি বাতাসের সুর, বলছে, ভয় করো না, জীবন এগিয়ে চলে  প্রতিটি নদী, প্রতিটি পাহাড়, প্রতিটি ঝর্না আমাকে শেখায়, আমি একা নই  আকাশের গভীরতা জানে আমার গোপন কথা, প্রতিটি নক্ষত্রে ভেসে আসে স্মৃতির রং আমি হেসে বলি, এটাই জীবন, যেখানে ভয়, আশা, ভালোবাসা মিশে যায় চোখ বন্ধ করলে, আবার নতুন আকাশ, প্রতিটি সূর্যোদয় আমাকে জন্ম দেয় নতুন।

ফিরে দেখা এক দুপুর

বেলা তিনটার নরম আলোয় আমি ফিরি পুরোনো গলিতে, যেখানে বিকেলের হাওয়ায় ভেসে আসত কাঁঠালচাপার গন্ধ;  একটা ছেলেকে দেখি, ঠিক আমার মতো, কিন্তু আমি নই  খালি পায়ে দৌড়ে যায় মাঠের দিকে, সমস্ত ছায়াকে ছেড়ে  হাতে তার পলিথিনের ঘুড়ি, চোখে আগুন, দুরন্তপনা মুখে;  আমার মনে হয়, আমি তাকেই খুঁজে ফিরছি এতদিন, নিজের হারানো সময়টাকে ধরার চেষ্টা করি তার মধ্যে  কিন্তু সে আমার চোখের সামনে অদৃশ্য হ’য়ে যায়  ধুলোর কুয়াশায়, সমস্ত কিছুকে যে নিজের মত ভাবে,  পথের ধারে পুরোনো চায়ের দোকানটা আজ বন্ধ, তিনি হয়তো অনেক আগেই বাড়ি চলে গেছেন,  তবু আমি এখনো শুনি তার গলার সেই উচ্চ কণ্ঠস্বর  একটা চা দে ভাই, কম চিনি, পারলে একটু কাচাপাতি,   বাতাসে ভাসে তামাকের গন্ধ, উত্তর আর দক্ষিণে  আর আমি বুঝি, সব কিছু হারিয়ে যায় জীবন থেকে  নস্টালজিয়া মানে হলো ফিরে যাওয়া নয়, স্মৃতিচারণ,  যা হারিয়ে গেছে, জীবন থেকে আর আসে না ফিরে;  তাকে মনের ভেতর নতুন ক’রে বাঁচিয়ে রাখা সর্বদা। 

শহরের নিশ্বাস

শহর জাগায় আলো, রাস্তাঘাটে ধুলো আর বৃষ্টি মিশে যায় মানুষেরা ছুটে চলেছে, এক দিকে হাঁটছে স্বপ্ন, অন্যদিকে ভেঙে পড়া আশা, বাতাসে, সম্মুখে   যে হাওয়া-চোখের ক্যানভাস, সৌন্দর্যের দিকে  পাখিরা যেন হারিয়েছে গন্তব্য, আমি দাঁড়িয়ে দেখি, একটি ল্যাম্প পোস্টের নীচে, একটি শিশু কাঁদছে নিঃশব্দে তার চোখে মেঘ, তার হাতে ছায়া, জ্যোতির্ময় আলো,  আমি জানতে চাই, কেন মানুষ এত দ্রুত হারায়, সময় কোনো উত্তর আসে না, শুধু গাড়ির হর্নের শব্দ চতুর্দিকে;  রাত্রি আসে, শহরের রঙ বদলায়, কথার শব্দ ঝ’রে প’ড়ে  লাল, হলুদ, নীল, সব মিলেমিশে একটিমাত্র নিঃশব্দ হ’য়ে যায় আমি হেঁটে যাই, শহরের গলি উপগলি ধরে অন্য পথের দিকে।  

তোমার চোখে নীল জ্যোৎস্না

তোমার চোখে যে নীল জ্যোৎস্না তা কোনো আকাশের নয়, কোনো সাগরের নয়,  ওটা এক অনন্ত নিঃশব্দ পৃথিবী, আমার শেষ গন্তব্য !  যেখানে আমি হারিয়ে গেছি নিজের ইচ্ছেতে তুমি যখন চুপ করে তাকাও আমার দিকে,  আমার ভিতরের সব অন্ধকার, আলো জ্বলে ওঠে আমি তখন বুঝি, ভালোবাসা আসলে এক নীরব ভাষা, যেখানে শব্দ নয়, স্পর্শই উচ্চারণ আর হারিয়ে যাওয়া,  তোমার পাশে বসে থাকা মানেই সময়কে ভিন্নভাবে দেখা;  ঘড়ির কাঁটা চলে, কিন্তু মুহূর্ত থেমে থাকে  তোমার হাসির ঠিক নিচে, শ্যামল রেখাতে  তোমার কণ্ঠ যখন বাতাসের মতো নরম হ’য়ে আসে;  আমার বুকের ভেতর এক পাখি ডানা ঝাপটে ওঠে, যে পাখি কেবল তোমার নামেই ডাকে, গভীর সুরে  ভালোবাসা আমার কাছে কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, এ এক বহমান নদী, যার জলে আমরা দুজন সাঁতার কাটি, কেউ কারও আগে নয়, পরে নয়, সমান তালে,  শুধু পাশাপাশি, নিঃশব্দে, একটানা, দীর্ঘক্ষণ ধরে,  তুমি যদি কখনো হারিয়ে যাও আমার বুক থেকে  আমি আলো খুঁজব না, আমি খুঁজব সেই ছায়া যেখানে তুমি একদিন দাঁড়িয়ে বলেছিলে, তুমি আছো তো আমার বুকের ঘ্রাণে?  হ্যাঁ, আমি আছি, অমল শিশিরে, মাঘের বাতাসে  তোমার...

নিঃশব্দ, খোলা জানালা

জানালার বাইরে হালকা বৃষ্টি প’ড়ে, প্রতিটি ফোঁটা মনে করায় অতীতের ছোঁয়া আমি বসে থাকি, নিঃশব্দে স্মৃতি আঁকি, যেখানে তুমি ছিলে, আমি চুপচাপ পাশে বসি,  বাতাসের নীরব খেলা, ঘরভর্তি ছায়া, সবকিছু ব’লে কিছু হারায়, কিছু থাকে পুরনো বইয়ের কোণে লুকানো চিঠি, যা আর কেউ পড়েনি, শুধু আমি জানি প্রতিটি পাতা তার মত শব্দ ক’রে, যেন হারানো দিনের ডাক শুনিয়ে যাচ্ছে;  চোখ বন্ধ করলে ভেসে আসে তোমার মুখ  যা বাতাসে মিশে যায়, নীরব নিঃশ্বাসের মতো জানালার বাইরে গভীর রাত, দু’চোখে অনিদ্রা   আমি হেসে বলি সবকিছু চলে যায়, স্মৃতি স্থায়ী;  নিঃশব্দ জানালা, হারানো দিনের আলো, আমি বাঁচি, শুধুই স্মৃতির গভীর আড়ালে।