সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা


রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে।
ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতাটি আমার ভালো লাগে এটাকেই হয়তো আমি বেশি প্রাধান্য দিব। আমার অনেক ভালোলাগা কবিতা সবসময় শ্রেষ্ঠ কবিতায় পাই না, সব সময় পাবো এটাও আশা করি না। শ্রেষ্ঠ কবিতায় ওই কবিতাটি থাকলে ভালো লাগে, না থাকলে খারাপ বা দুঃখবোধ লাগে তা-ও নয়। আমার ভালো লাগার এমন প্রথম কবিতাটি আমি একবার পড়তে চাই:
অন্ধকার মধ্যদিনে বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে ॥
বৃষ্টি ঝরে রুক্ষ মাঠে, দিগন্ত পিয়াসী মাঠে, স্তব্ধ মাঠে,
মরুময় দীর্ঘ তিরাষার মাঠে, ঝরে বনতলে,
ধনশ্যাম রোমাঞ্চিত মাটির গভীর গূঢ় প্রাণে
শিরায় শিরায় স্নানে, বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে।
ধানের ক্ষেতের কাঁচা মাটি, গ্রামের বুকের কাঁচা বাটে,
বৃষ্টি পড়ে মধ্যদিনে অবিরল বর্ষাধারা জলে ॥
যাই ভিজে ঘাসে-ঘাসে বাগানের নিবিড় পল্লবে
স্তম্ভিত দিঘির জলে, স্তরে স্তরে, আকাশে মাটিতে ॥
অন্ধকার বর্ষাদিনে বৃষ্টি ঝরে জলের নির্ঝরে
গতির অসংখ্যা বেগে, অবিশ্রাম জাগ্রত সঞ্চারে, স্বপ্নবেগে
সঞ্চলিত মেঘে, মাঠে, কম্পিত মাটির অনুপ্রাণে
গেরুয়া পাথরে জল পড়ে, অরণ্য তরঙ্গশীর্ষে, মাঠে
ফিরে নামে মর্মজল সমুদ্রে মাটিতে।
বৃষ্টি ঝরে ॥
মেঘে মাঠে শুভক্ষণে ঐক্যধারে
বিদ্যুতে
আগুনে
ঘূর্ণাঝড়ে-
সৃজনের অন্ধকারে বৃষ্টি নামে বর্ষাজল ধারে ॥
রুচিত বৃষ্টির পারে, রৌদ্রমাটি, রুদ্র দিন, দূর,
উদাসীন মাঠে-ঘাঠে আকাশেতে লগ্নহীন সুর ॥

অমিয়, এই কবিতায় বৃষ্টির আগমন শুরু করেন এভাবে: “অন্ধকার মধ্যদিনে বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে।” ‘বৃষ্টি ঝরে মাটিতে’ এভাবে শুরু না করে এই পঙ্ক্তির সাথে জুঁড়ে দেন ‘অন্ধকার মধ্যদিনে।’ বৃষ্টিঝরা তিনি দেখতে পান সর্বত্র। তাঁর দু’চোখ যতোদূর যায় ততদূর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে বৃষ্টির ফোঁটা। রুক্ষ মাঠ, বনতল, ক্ষেতের কাঁচা মাটি থেকে মনের মাটি পর্যন্ত তিনি অবিরল বর্ষা ধারা জলে দেখতে পান বৃষ্টিকে। বাগানের নিবিড় পল্লব থেকে স্তম্ভিত দিঘীর জল পর্যন্ত সর্বত্র পৌঁছে যায় বৃষ্টির ঝরণা ধারা। কবিতাটির মধ্যস্থানে এসে আবার বলেন এভাবে: ‘অন্ধকার বর্ষাদিনে বৃষ্টি ঝরে জলের নির্ঝরে।’ এখানে কিন্তু পূর্বের মতো বলেন না ‘অন্ধকার মধ্যদিনে’ ওই অন্ধকার মধ্যদিনে অগ্রগামী হ’য়ে দেখা দেয় ‘অন্ধকার বর্ষাদিনে’।
একই পঙ্ক্তিতে ‘মনের মাটির’ স্থানে নতুন ক’রে আসে ‘জলে নির্ঝরে’। অন্ধকার মধ্যদিনে, অন্ধকার বর্ষাদিন থেকে আবার পাওয়া যাবে ‘সৃজনের অন্ধকারে।’ মনের মাটি, জলের নির্ঝর থেকে আবার পাওয়া যাবে ‘বর্ষাজল ধারে।’ বৃষ্টি, সমস্ত কিছু দূর করার পর উদাসীন মাঠে মাঠে কবি শুনতে পান লগ্নহীন সুর। যে সুরের জন্যে তিনি অপেক্ষায় ছিলেন দীর্ঘদিন যাবত।
‘বৃষ্টি’ শিরোনামে ভালো লাগার দ্বিতীয় কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘পারাপার’-এ। ‘একমুঠো’-তে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার চৌদ্দ বছর পর আবার এ নামে কবিতাটি পাই ‘পারাপার’-এ। এখানেও কবিতাটির শিরোনাম হয় ‘বৃষ্টি’। ‘পারাপার’ থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতা হিশেবে নির্বাচন করা হয় পনেরোটি কবিতা। যেখানে পূর্বের ন্যায় ওই শ্রেষ্ঠ কবিতায় উঠে আসে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি। নরেশগুহ, তিরিশি কবিদের শ্রেষ্ঠ সম্পাদক হিশেবে আখ্যায়িত করলে ভুল হয় না। ‘কবিতা’ পত্রিকায় অমিয় চক্রবর্তীর ‘পারাপার’ প্রসঙ্গে উপস্থাপন করেন এ রকম বক্তব্য: “অমিয় চক্রবর্তীর মধ্যে কবি এবং কল্যাণব্রতীর ভাবনা এক হ’য়ে দেখা দিয়েছে। আধুনিক জ্যেষ্ঠ কবিদের মধ্যে এ বিষয়ে তিনি স্বতন্ত্র এবং একক।”
তিরিশি অন্যে কোনো কবিদের জন্য এটা কী প্রযোজ্য নয়? অমিয় চক্রবর্তীর ‘বৃষ্টি’ নামক দ্বিতীয় কবিতাটি:
কেঁদেও পাবে না তাকে বর্ষার অজস্র জলাধারে।
ফাল্গুন বিকেলে বৃষ্টি নামে।
শহরের পথে দ্রুত অন্ধকার।
লুটোয় পাথরে জল, হাওয়া তমস্বিনী;
আকাশে বিদ্যুৎ জ্বলা বর্শা হানে
ইন্দ্রমেঘ;
কালো দিন গলির রাস্তায়।
কেঁদেও পাবে না তাকে অজস্র বর্ষার জলধারে।
নিবিষ্ট ক্রান্তির স্বর ঝরঝর বুকে
অবারিত।
চকিত গলির প্রান্তে লাল আভা দুরন্ত সিঁদুরে
পরায় মুহূর্ত টিপ,
নিভে যায় চোখে
কম্পিত নগর শীর্ষে বাড়ির জটিল বোবা রেখা।
বিরাম স্তম্ভিত লগ্ন ভেঙে
আবার ঘনায় জল।
বলে নাম, বলে নাম, অবিশ্রাম ঘুরে ঘুরে হাওয়া
খুজেঁও পাবে না যাকে বর্ষার অজ্রস জলধারে।

আদিম বর্ষণ জল, হাওয়া পৃথিবীর।
মত্তদিন ম্গ্ধুক্ষণ, প্রথম ঝঙ্কার
অবিরহ
সেই সৃষ্টিক্ষণ
স্রোত: স্বর্ণা
মৃত্তিকার সত্তা স্মৃতিহীনা
প্রশস্ত প্রাচীন নামে নিবিড় সন্ধ্যায়
এক আর্দ্র চৈতন্যের স্তব্ধ তটে।
ভেসে মুছে ধুয়ে ঢাকা সৃষ্টির আকাশে দৃষ্টিলোক।
কী বিহ্বল মাটি গাছ, দাঁড়ানো মানুষ দরজায়
গুহার আঁধারে চিত্র, ঝড়ে উতরোল।
বারে বারে পাওয়া, হাওয়া, হারানো নিরন্ত ফিরে-ফিরে
ঘনমেঘলীন
কেঁদেও পাবে না যাকে বর্ষার অজস্র জলধারে ॥

অমিয় তাঁকে না পাওয়াকে তুলনা করেছেন বর্ষার অজস্র জলধারার সঙ্গে। যার সাথে সম্পর্ক রয়েছে কান্নার। কবিতাটির ভিতরে প্রবেশ করলে পাওয়া যাবে ‘কালো দিন গলির রাস্তায়’ নামক একটি পঙ্ক্তি। কবি এখানে দিনটাকে ‘কালো’ বলেছেন; ‘অন্ধকার দিন’ বলেননি। যদিও তিনি ‘কালো দিন’ এবং ‘অন্ধকার দিনকে’ ব্যবহার করেছেন সমার্থকরূপে। পূর্বের কবিতায় এ রকম স্থানগুলোতে আমরা পাবো অন্ধকারকে যে ‘অন্ধকার’ অনেকটা প্রিয় হ’য়ে ওঠে কবির কাছে। এই কবিতায় সেই অন্ধকারকে প্রত্যাখান করে বেছে নেন ‘কালোকে’। পরের পঙ্ক্তিটির দিকে দৃষ্টি দিলে দেখতে পাই কবিতাটি প্রথম পঙ্ক্তিটির কিছুটা পরিবর্তিত রূপ। প্রথম পঙ্ক্তিটি এরকমঃ ‘কেঁদেও পাবে না তাকে বর্ষার অজস্র জল ধারে’। বর্ষার পরে একটি বিশেষণ ব্যবহার করা হয়। আর পরের সেই একই পঙ্ক্তিটিতে বিশেষণটি চলে আসে বর্ষার পূর্বে। এ রকম পরিবর্তন অমিয়-র কবিতায় প্রায়ই দেখা যায়। কবিতাটির দ্বিতীয় অংশের শেষের পঙ্ক্তিটি এরকমঃ ‘খুঁজেও পাবে না যাকে বর্ষার অজস্র জলধারে’। ‘কেঁদেও পাবে না তাকে’ থেকে অগ্রগামী হ’লে পাবো ‘খুঁজেও পাবে না যাকে’। শুধু বর্ষার অজস্র জলধারে কাঁদলেই হবে না, যদি এই অজস্র জলধারার মধ্যে তাঁকে খুঁজি তাহ’লে হয়তো পাবো না। তাই অমিয়, ‘কেঁদেও’ থেকে চ’লে আসে ‘খুঁজেও’-এর মধ্যে। তৃতীয় অংশের প্রথম পঙ্ক্তিটি: আদিম বর্ষণ জল, হাওয়া পৃথিবীর। বর্ষণ জলের পূর্বে একটি বিশেষণ ব্যবহার করা হয় ‘আদিম’। বিশেষণটি বর্ষণজলের পূর্বে বসে বাক্যটিকে কতোটা উজ্জ্বল করে তোলে? তাহ’লে বর্ষণ জলের মধ্যেও তিনি খুঁজে পান আদিমতা আর নতুনত্ব।
অমিয় চক্রবর্তীর তৃতীয় কবিতাটি পাওয়া যাবে ‘পারাপার’-এর দু’বছর প’রে প্রকাশিত ‘পাল-বদল’এ। এখানে নামধারণ করে না, করে ‘এই বৃষ্টি।’
‘পালা-বদল’ থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় পাওয়া যায় চৌদ্দটি কবিতা। বুদ্ধদেব বসু, অমিয় চক্রবর্তীর কোনো না কোনো কবিতার কাব্য ভূমিকায় ফিরে ফিরে আসেন। অমিয় চক্রবর্তী যাঁর কবিতায় পাওয়া যাবে না প্রচলিত ধ্যান ধারণার সন্নিবেশ, বা সাধারণ  চিন্তা-চেতনা নির্ভর কবিতা। আধুনিক নাগরিক জীবন তাঁর কবিতায় উঠে আসে সর্বত্রভাবে অমিয়র ‘পালা-বদল’ পর্যন্ত বুদ্ধদেব বসু উৎকৃষ্ট আলোচনা করেন। আর তার প্রকাশ পায় ‘কবিতা’ পত্রিকার বিভিন্ন প্রবন্ধে। এখানে আমি কবিতাটি দেওয়ার আগে ‘পালা-বদল’ সম্পর্কে বুদ্ধদেবের মূল্যবান বক্তব্যটি ঃ ‘সমকালীন বাংলাদেশের সবচেয়ে আধ্যাত্মিক কবি অমিয় চক্রবর্তী।...অভাব, প্রশ্ন, তর্ক বোমা’, ভাঙা শহর, বাংলার দারিদ্র, মার্কিন সভ্যতা, প্রেমিকের বিচ্ছেদ;-এই সব কষ্টময় জটিলতা-একটি স্থির হ্যাঁ-ধর্মের অন্তর্ভূক্ত হ’য়ে আছে; রক্তবীজের মতো ‘না’-এর গোষ্ঠী গজিয়ে উঠলেও তারা এক আরো বিরাট পরিকল্পনার মধ্যে সুষমভাবে, বিনীত ভাবে অবস্থান লাভ করছে, কোনো দুর্জয় বিরোধের জন্ম দিতে পারছে না।...কলা কৌশলের নূতনত্ব, ভাষায় চমকপ্রদ ভঙ্গিমা, এই সব আবরণ ভেদ ক’রে তাঁর রচনার মধ্যে গ্রন্থিত হ’তে পারলে আমরা তৎক্ষণাৎ উপলব্ধি করি যে তিনি আর রবীন্দ্রনাথ একই জগতের অধিবাসী, যে জগৎ অন্যান্য সমকালীন কবিদের পক্ষে অপ্রাপনীয়। রবীন্দ্রনাথ, এবং তাঁর জগৎ মূলত এক হ’লেও উপাদানেও বিন্যাসে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। প্রধান কথাটা এই যে রবীন্দ্রনাথে স্থিতিবোধ, অর্থাৎ ব্যক্তিগত জীবনে স্থায়িত্বের ভাব অমিয় চক্রবর্তীতে নেই কোনো আধুনিক কবিতেই তা সম্ভাব নয়।...উপাদানের আয়তন ও বৈচিত্র্য তাঁকে বৈশিষ্ট্য দিয়েছে, রবীন্দ্রনাথের কাছে যা পেয়েছেন তার ব্যবহারের ক্ষেত্র আলাদা ব’লে তাঁর কবিতার রসবস্তু স্বতন্ত্র; তাঁর কাছে আমরা যা পাই, রবীন্দ্রনাথ তা দিতে পারে না। ‘বৃষ্টি’ শিরোনামের শেষ কবিতাটি :
‘চিন্তার সমস্ত রং ধুয়ে গেছে শাদা হ’য়ে
মনের প্রহরী ভিজছে ছাতি হাতে নিঃঝুম প্রহরে,
ঝুপঝুপ বৃষ্টির গলিতে
বাসনার আলোগুলো ঝিমিয়ে ঝাপসা জ্বলে পাশে।
হে বিরতি,
ঘনরাত্রে কোনখানে একা স্তব্ধ চেয়ো আছে ঃ
মেঘে মেঘে ভয়ংকর আসন্নতা,
‘বোবা বুক চিরে ঝলে বর্ষার বিজলী শঙ্কহারা,
শুধু মেনে নেওয়া বেলা, প্রবাসে যেমন,
বসন্তের মাঝামাঝি এই বর্ষাকাল,
প্রস্তুত ছিলো না, তবু এলো যেই, ব্যস্ত মন
রাজি হ’লো ঘোরাফেরা চেনার কল্পনা ফুল ভুলে,
ফেলে গিয়ে ঘরে-ফেরা সুদূর কাহিনী,
শুধু ভিজতে, খানিকক্ষণ ধারাবাহী মগ্ন অবকাশে।
মাটির প্রতীক্ষা আর ঘাসের শ্যামতা সঞ্চারিত
নির্মম নতুন পাওয়া
অষ্ফুট স্বদেশী ছাপ রেলিঙের ধারে’॥

অমিয় চক্রবর্তীর কাছে ‘বৃষ্টি’ কতোটা প্রিয় ছিলো তা তাঁর কবিতাগুলো পড়লেই বুঝতে পারি, বিশেষ করে ‘বৃষ্টি’ শিরোনামের কবিতাগুলো। যদিও ওই কবিতাগুলো কারো কাছেই অপ্রিয় নয়। তিনি বৃষ্টিকে এনেছেন সময়ে-অসময়ে। ‘বৃষ্টি’ কখনো তাঁর কবিতায় দেখা দেয়া ফাল্গুন বিকেলে, আবার কখনো তার পরিপূর্ণ রূপ বসন্তের মাঝামাঝি সময়ে। এই ভাবধারার অনাকাংক্ষিত বৃষ্টির জন্যে তিনি হৃদয় চিত্তে অপেক্ষা করতে থাকেন। যে বৃষ্টি তাঁর হৃদয় চিত্তে দোলা দিয়েই বিদায় জানায়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...

প্রবন্ধঃ সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধ সংগ্রহ

সুধীন্দ্রনাথ , সাতটি কাব্যগ্রন্থের মতো সাতটি প্রবন্ধের গ্রন্থ লিখলে খারাপ হতো না , বেশ ভালোই হতো । সুধীন্দ্রনাথের প্রবন্ধগুলো হালকা মানের নয় , যদিও তাঁর কোন রচনাই হালকা নয় । সাহিত্যে বিচারে তা অনেক উঁচুমানের । তার উপর ভাষার ব্যাপারটি তো রয়েছেই । সুধীন্দ্রনাথ মাত্র দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন । গ্রন্থ দুটো ‘ স্বগত ’ ( ১৩৪৫ ঃ ১৯৩৮ ), অপরটি ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’ ( ১৩৬৪ : ১৯৫৭ ) । ‘ স্বগত ’- তে রয়েছে ষোলটি প্রবন্ধ । গ্রন্থ দুটি তিনি রচনা করেছেন দু ’ ভাগে । লরেন্স বা এলিয়ট এর প্রবন্ধ যেমন পাওয়া যাবে না ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’- এ ; তেমনি রবীন্দ্র সম্পর্কিত প্রবন্ধ নেওয়া হয়নি ‘ স্বগত ’- এ । প্রকাশ কাল অনুযায়ী ‘ স্বগত ’- এর প্রবন্ধসমূহ : ‘ কাব্যের মুক্তি ’ ( ১৯৩০ ); ‘ ধ্রুপদ পদ - খেয়াল ’ ( ১৯৩২ ), ‘ ফরাসীর হাদ্য পরিবর্তন ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লিটনস্ট্রেচি ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লরেন্স ও ভার্জনিয়া উল্ফ্ ’ ( ১৯৩২ ), ‘ উপন্যাস তত্ত্ব ও তথ্য ’ ( ১৯৩৩ ), ‘ উইলিয়ম ফকনর ’ ( ১৯৩৪ ), ‘ ঐতিহ্য ও টি , এস , এলিয়ট ’ ( ১৯৩৪ ), ...