সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রবন্ধঃ সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধ সংগ্রহ


সুধীন্দ্রনাথ, সাতটি কাব্যগ্রন্থের মতো সাতটি প্রবন্ধের গ্রন্থ লিখলে খারাপ হতো না, বেশ ভালোই হতো সুধীন্দ্রনাথের প্রবন্ধগুলো হালকা মানের নয়, যদিও তাঁর কোন রচনাই হালকা নয় সাহিত্যে বিচারে তা অনেক উঁচুমানের তার উপর ভাষার ব্যাপারটি তো রয়েছেই সুধীন্দ্রনাথ মাত্র দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন গ্রন্থ দুটোস্বগত’ (১৩৪৫ ১৯৩৮), অপরটিকুলায় কালপুরুষ’ (১৩৬৪ : ১৯৫৭)স্বগত’-তে রয়েছে ষোলটি প্রবন্ধ গ্রন্থ দুটি তিনি রচনা করেছেন দুভাগে লরেন্স বা এলিয়ট এর প্রবন্ধ যেমন পাওয়া যাবে নাকুলায় কালপুরুষ’-; তেমনি রবীন্দ্র সম্পর্কিত প্রবন্ধ নেওয়া হয়নিস্বগত’- প্রকাশ কাল অনুযায়ীস্বগত’-এর প্রবন্ধসমূহ : ‘কাব্যের মুক্তি’ (১৯৩০); ‘ধ্রুপদ পদ-খেয়াল’ (১৯৩২), ‘ফরাসীর হাদ্য পরিবর্তন’ (১৯৩২), ‘লিটনস্ট্রেচি’ (১৯৩২), ‘লরেন্স ভার্জনিয়া উল্ফ্’ (১৯৩২), ‘উপন্যাস তত্ত্ব তথ্য’ (১৯৩৩), ‘উইলিয়ম ফকনর’ (১৯৩৪), ‘ঐতিহ্য টি, এস, এলিয়ট’ (১৯৩৪), ‘উইঞ্জাম ল্যুইস এজরা পাউন্ড’ (১৯৩৫), ‘ডব্ল্যু বি, য়েটস কলাকৈবল্য’ (১৯৩৬), ‘বার্নার্ডশ’ (১৯৩৬), ‘জেরাড ম্যানলি হপকিন্স’ (১৯৩৭), ‘দোটানা’ (১৯৩৭), ‘ম্যাক্সিম  গোর্কি (১৯৩৭), ‘গুরুচন্ডাল’ (১৯৪০) এবংপুনশ্চ’ (১৯৫৬) এর মধ্যে ১৯৩২- রচনা করেছেন বেশি সংখ্যক প্রবন্ধ উপরোক্ত থেকে ষ্পষ্ট যে, তিনি ধারাবাহিক ভাবে রচনা করেননি প্রবন্ধ যখন যেটা ভালো লেগেছে তখনই তা রচনা করেছেন কিন্তু এখানে স্মরণ যে, তিনি একটি রচনা বা যে কোনো রচনা সৃষ্টি রে অপর রচনায় দ্রুত হাত দিতেন আমরা বুদ্ধদেব থেকে জানতে পারি তিনি একই দিনে শেকসপিয়রের একাধিক সনেট অনুবাদ করেছেন, যদিও এর মধ্যে কবিতাও রচনা করেছেনস্বগতপ্রবন্ধ গ্রন্থটি সুধীন্দ্রনাথ উৎসর্গ করেছিলেন ধুর্জ্জটি প্রসাদ মুখোপাধ্যায় কেস্বগতদ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৩৬৪ বঙ্গাব্দে বা ১৯৫৭ খ্রীষ্টাব্দে
স্বগত’-এর প্রবন্ধগুলোর যে তালিকা উপস্থাপন করলাম তা দ্বিতীয় সংস্করনের অর্থাৎ, ১৯৫৭ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত গ্রন্থ সূচি থেকে প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থটি এখন দু®প্রাপ্য বললেই চলে যেহেতু দ্বিতীয় সংস্করণই এখন দুলর্ভ কিন্তু প্রথম প্রবন্ধ গুলা কিরূপ ছিল বা কোনগুলো ছিল তার একটি তথ্য দেওয়া যেতে পরে প্রকাশিতস্বগতএর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থে সুচীপত্রে সূচনার পরে মোট প্রবন্ধগুলোকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল এখানে উল্লেখ্য যে, ‘কুলায় কালপুরুষ’-এর কিছু প্রবন্ধ গ্রন্থে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল, যা পরেকুলায় কালপুরুষেস্থানান্তর করা হয় প্রথম প্রকাশেকুলায় কালপুরুষেরযে প্রবন্ধগুলোস্বগত ছিল তা অর্থাৎ দ্বিতীয় সংস্করণে (বর্তমানে যে গ্রন্থটি প্রচলিত) ‘স্বগতথেকে সেগুলো বাদ দিয়েকুলায় কালপুরুষেদেওয়া হয় পাঁচটি ভাগের মধ্যে যেমন প্রবন্ধগুলো দেওয়া ছিল: . (কাব্যের মুক্তি, ধ্রুপদ, খেয়াল, ছন্দোমুক্তি রবীন্দ্রনাথ), . (ডি-এইচ লরেন্স ভর্জিনিয়া উল্ফ্, ফরাসীর হার্দ্দ্য পরিবর্তন, ‘উইলিয়াস্ ফক্নর, উপন্যাস তত্ত তথ্য’, ম্যাক্সিম গোর্কি, দোটানা), . (বার্নার্ডশ, লিটন্ ষ্ট্রেচি, উইঞ্জাম, ল্যুইস, এজ্রাপাউন্ড) . (ঐতিহ্য টি এস এলিয়ট, ডব্লিউ বি য়েটস, কলাকৌশল, জোরার্ড ম্যানলি হপকিন্স) . (বাংলা ছন্দের মূল সূত্র, অন্তঃশীল, চোরাবালি, সূর্য্যাবত্ত) এবং সর্বশেষ শুদ্ধিপত্র
সুধীন্দ্রনাথ দত্তেরস্বগতপ্রবন্ধ গ্রন্থের প্রবন্ধগুলোসূচনা’, ‘পুনশ্চ’, ‘কবিতাপত্রিকায় প্রকাশ পায় এছাড়া বাকী সমস্ত অর্থাৎ, ‘স্বগত’-এর প্রবন্ধগুলোপরিচয়পত্রিকায় প্রকাশ পায় প্রথম প্রকাশের বর্ষ সংখ্যাগুলো উল্লেখ করা হল কাব্যের মুক্তি’ [ শ্রাবণ ১৩৩৮, ১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা], ‘ধ্রুপদ-খেয়াল’ (কার্ত্তিক ১৩৩৮ : ১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা], ‘ডি. এইচ লরেন্স ভর্জিনিয়া উলফ’ [বৈশাখ ১৩৩৯, ১ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা], ‘ফরাসীর হার্দ্য পরিবর্তন’ [কার্ত্তিক ১৩৩৯: ২য় বর্ষ, ২য় সংখ্যা], ‘উইলিয়ম ফকনর’ [মাঘ ১৩৪০ : ৩য় বর্ষ, ৩য় সংখ্যা], ‘উপন্যাসে তত্ত্বও তথ্য’ [বৈশাখ, ১৩৪০, ২য় বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা], ‘ম্যাক্সিম গোর্কি’ [আশ্বিন ১৩৪৩: যষ্ঠ বর্ষ, ৩য় সংখ্যা], ‘দোটানা’ [ভাদ্র ১৩৪৪, ৭ম বর্ষ (১ম খন্ড) ২য় সংখ্যা], ‘গুরুচন্ডাল’ [ফাল্গুন ১৩৪৬: ১ম বর্ষ (২য় খন্ড), ২য় সংখ্যা], ‘বার্নার্ডশ’ [কার্ত্তিক ১৩৪৩, ৬ষ্ঠ, ৪র্থ সংখ্যা], ‘লিটন স্টোচি’ [ মাঘ ১৩৩৮: ১ম বর্ষ, ৩য় সংখ্যা] ‘উইগাম ল্যুইস এজ্রা পাউন্ড’, [ শ্রাবণ ১৩৪২, ৫ম বর্ষ, ১ম সংখ্যাঐতিহ্য ওটি এবং এলিয়ট’, [আশ্বিন ১৩৪১: ৪র্থ বর্ষ, ১ম সংখ্যা]’ ‘ডব্ল্যু.বি. য়েটস কলাকৌশল্য’ [অগ্রহায়ন ১৩৪৩: ৬ষ্ঠ বর্ষ, ৫ম সংখ্যা]’ এবংজেরার্ড ম্যানলি হেপকিন্স’ [চৈত্র ১৩৪৩: ৬ষ্ঠ (২য় খন্ড) ৩য় সংখ্যা]
ছন্দমুক্তি রবীন্দ্রনাথ’, ‘সূর্যাবর্ত’, ‘অন্তঃসীলা’, ‘চোরাবালিএবংবাংলা ছন্দের মূল সূত্রএই পাঁচটি প্রবন্ধ প্রথম প্রকাশেস্বগত’-এর অন্তর্ভূক্ত ছিল
স্বগত’-এর প্রবন্ধগুলো বেশি দীর্ঘ নয় ক্ষুদ্র প্রবন্ধই বেশি পাওয়া যাবে কয়েকটি প্রবন্ধ বেশ বড় যেমনকাব্যের মুক্তি’, ‘ধ্রুপদ-খেয়াল’, ‘ঐতিহ্য টি.এস এলিয়ট’, ‘ওব্লু বি য়েটস কলাকৌশলএবংজোরড ম্যানলি হপ্কিসএসব প্রবন্ধগুলো একটি থেকে অপরটি ছোট বা বড় অবশিষ্ট যে সব প্রবন্ধগুলো রয়েছে তা প্রত্যেকটি সমমানের কোনটিই কোনটা থেকে বেশি বড় বা বেশি ছোট নয়
কাব্যের মুক্তি’-তে পাওয়া যাবেকাব্য’-সম্পর্কিত প্রাথমিক বা পরবর্তী  সময়ের কবিদের ভাবনা বা চিন্তা-চেতনা কবি এবং তাঁর সৃষ্টি কাব্য সম্পর্কে চিন্তা-চেতনার সংমিশ্রণ কাব্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিতে পারে কবির কাছে যেমন: সুধীনন্দনাথ প্রকাশ করেছেন: কাব্যের জন্মবৃত্তান্ত আমাদের প্রয়োজন নেই, সে সন্ধান নৃতত্ত্ববিদের আমরা শুধু এতটুকু জানলেই সন্তুষ্ট যে, ‘কাব্য কবির পূর্ব পুরুষ, কবি কাব্যের জন্মদাতা নয় প্রথম কবিতার প্রসার শুধু একটি মানুষের উপর নয় সমগ্র জীবনের উপর; প্রাথমিক কবিতার উদ্দেশ্য বিকলন নয়, সঙ্কলন সেই থেকে আজ পর্যন্ত কাব্যের বিশ্বম্ভর মূর্তি কেবল ক্ষয়ে গেছে, তার সেই নীহারিকার মতো আয়তন সৃষ্টির রীতিতে আজ কবিরূপ উল্কাখণ্ডের মধ্যে আবদ্ধকবির কর্তব্য বা দায়িত্ববোধ হওয়া উচিত তার চারপাশের অপৃথক জীবনের সঙ্গে চলমান জীবনের তুল্য বা একজাতীয়করণ গত শতকের কাব্যের মরুভূমিতে ব্রাউনিং বা ওয়ার্ডসওয়র্থ বা কোলরিজের চিন্তা চেতনায় কাব্যের মুক্তির অবস্থান কিরূপ ছিল বা কে কতটা সার্থকভাবে তা বুঝেছিলেন তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এখানে ওয়ার্ডসওয়র্থ কোলরিজের কবিতা ছাড়া একমাত্র ব্রাউনিং- কতটা বুঝেছিলেন তা তাকে বাঁচতে হলে রূপকথার রাজপুত্রের স্বপ্ন দেখা কাব্যের আর বেশি সচল অবস্থান নেই তাকে যেমন বেরিয়ে আসতে হবে পোকায় খাওয়া শিরোপা মরচে-পড়া সাজোয়া ফেলে নতুন অবস্থানে সুধীন্দ্রনাথ কবি বা কাব্য বা মহাপুরুষের কথকের কথা তুলে ধরেছেন এবং কবিতে কবিতে কতটা পার্থক্য বা প্রভেদ আছে বা নেই তা প্রকাশ করেছেন মহাকবি শেক্সপীয়র গ্যোটেকে নিয়ে, আর অপর দিকে কাব্য কবির সম্পর্ক কি হওয়া উচিত বা হয় নিদ্বিধায় প্রকাশ করেছেন সুধীন্দ্রের ভাষায়: ‘কাব্য সমুদ্রের মতো এবং কবি নদীমাত্র সুধীন্দ্রনাথ থেকে এটা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সকল কবিতায় আর যা কিছু থাকুক বা না থাকুক, ব্যক্তিত্বের যে ছড়াছড়ি ছিল তা তিনি স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করেছেন যতটা না তিনি এখানকার কবি বা সাহিত্যিকদের নিয়ে বলেছেন, তার চেয়ে বেশি বলেছেন বা চিন্তা করেছেন পশ্চিমের কবিদের নিয়ে
ছাড়া সাহিত্যের বাজারে বা উনবিংশ শতকে ওয়ার্ডসওয়র্থ কতটা মূল্যবান হয়ে দেখা দেয় গদ্যের ভাষা এবং কাব্যের সংমিশ্রণ থেকে তাদেরকে পৃথক করে বলেছেন গদ্যের অবলম্বন বিজ্ঞান, কাব্যের অন্বিষ্ট প্রজ্ঞান এছাড়া গদ্যেও কাব্যের চলার যে প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা অতুল্য গদ্য চলে যুক্তির সঙ্গে পা মিলিয়ে, আর কাব্য নাচে ভাবের তালে তালে; গদ্য চায় আমাদের স্বীকৃতি, আর কাব্যে খোঁজে আমাদের নিষ্ঠা তিনি শুধু গদ্য বা কাব্য নিয়ে তাঁদের চিন্তা শেষ করেননি, বেঁছে নিয়েছেন তাদের শব্দসমষ্টিও যেমনভাবে প্রকাশ করেছেন শব্দের দুটি দিকের কথা একটি তার অর্থের দিক আর অপরটি তার রস প্রতিপত্তির গদ্যের সঙ্গে শব্দের সম্পর্ক ওই প্রথম দিকটার খাতিরে; গদ্য শব্দগুলো চিন্তার আধার কিন্তু কাব্য শব্দের শরণ নেয় ওই দ্বিতীয় জনের লোভে; কাব্যের শব্দ আবেগবাহী
কিভাবে কাব্যের জন্ম বা কি হওয়া উচিত কাব্যের ভাষা তা- তিনি বর্ণনা করেছেন রূপ আর প্রসঙ্গের পরিপূর্ণ সঙ্গমেই কাব্যের জন্ম খুব ভালো লাগে সংমিশ্রন বা অন্যে কোন শব্দ ব্যবহার না করে...তার সঙ্গে তুলনা করেছেন কিংবা যখন দেখতে পাই আধুনিক কাব্য এতটা প্রাধান্য হয়ে উঠে কেন কিংবা উপর দিকে ভাষা কতটা শাসন করে কবিতা বা কাব্যকে রুপ আর সঙ্গমের পরিপূর্ণ থেকে কাব্য সৃষ্টি হলে রূপ আর প্রসঙ্গে কী থাকে তা- ব্যক্ত করা হয়েছে ভাষা, ভাব আর ছন্দে এই তিনের সংমিশ্রণে যদি কাব্য সৃষ্টি হয় তবে একে রূপ আর প্রসঙ্গ বললে অতুক্তি হয়?
সুধীন্দ্রনাথ প্রকাশ করেছেন, ছন্দ আর মিলের বৈসাদৃশ্যমিলবলতে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন অপেক্ষাকৃত নূতন অলঙ্কার আর ছন্দ অনাদি যেমন বলেছেন তিনি প্রাথমিক অবস্থায় আবেগের সঙ্গে ছন্দের সংমিশ্রণই কাব্যের উৎপত্তি য়ে থাকে ভেবে নিয়েছিলেন, তা-যে একেবারে নির্ভূল নয় তা- প্রকাশ পেয়েছে ছন্দ এবং আবেগের সম্পর্ক কী হওয়া উচিৎ তা প্রকাশ পায়
প্রবন্ধটিতেওয়েনকিংবাএজরা পাউন্ডছাড়াও আরো কিছু ইরেজি কবিতা রয়েছে এসব কবিতা নিয়ে তাদের কবি চিন্তা কতটা ষ্ফুরণ ঘটেছে তার ব্যাখা বিশ্লেষণ রয়েছে, এছাড়া পরিশেষে রয়েছে টি.এস. এলিয়টের রবীন্দ্রনাথকৃত একটি কবিতার অনুবাদ
ধ্রুপদ খেয়ালেরপ্রাথমিক দিকে রয়েছে কবি এবং পাঠকের মধ্যেকার সম্পর্ক সৃষ্টি কী রকম ভাবে তে পারে পাঠকের পাশে কে এসে দাঁড়াবে: ‘লেখক আধা গতির ধাপে নেমে পাঠকের পাশে দাঁড়াবে, না পাঠক সিঁড়ি বেয়ে লেখকের স্তরে উঠবে? পাঠক কখন বা কোন স্তরে এসে কবির কাছে মর্যাদা পায় সম্পর্কে সুধীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘সামাজিক জীবনের প্রতিনিধি হিসেবেই পাঠক কবির কাছে মর্যাদা পায় এছাড়া স্তরে রয়েছে . কামিংস এর একটি ইংরেজি কবিতার বিন্যাস, এবং কামিংস-এর কবিতাটির সম্পূর্ণ ব্যাখা বিশ্লেষণ ছন্দ কতটা তন্ময়তা প্রকাশ পায় বা স্ব-কীয়তা হিসেবে কতটা সার্থক তা উল্লেখ করা হয়েছে ছন্দ সম্পর্কে কামিংস এর কবিতায় তা কতটা স্পষ্টতা প্রকাশ পায় এবং শেক্সপিয়র-এর ছন্দে ভাবনা কী ছিল? অধ্যায়ে স্টিওয়েল-এর ছন্দ যেমনভাবে আলোচনা করা হয়েছে তেমনিভাবে স্থান দেওয়া হয়েছে-সেপা কিংবাদি ওয়েস্ট ল্যান্ডএর সর্ববাদিসম্মত দুর্বোধ্যতা ভাবী পাঠককে কতটা চিহ্নিত করে সম্পূর্ণ প্রবন্ধটি জুঁড়ে বার বার তিনি ফিরে এনেছেন স্টিওয়েল-এর কবিতা এবং তাঁর উদ্ধৃতি প্রবন্ধটি পড়ার পর বার বার মনে হয়েছে স্টিওয়েল এর ছন্দ নিয়ে তিনি কাতর হয়েছেন বেশি কিংবা স্টিওয়েল এর লেখার আসল ব্যাখা কোথায়? যেমনভাবে তিনি প্রকাশ করেছেন তাঁর লেখার ভঙ্গি নৈর্ব্যক্তিক বটে, কিন্তু ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যই তাঁর কাব্যের প্রাণ য়ে রয়েছে অর্থাৎ স্টিওয়েল এর কবিতার মূলসুর তিনি প্রকাশ করেছেন এভাবে জগৎ সম্বন্ধে তাঁর ঔৎসুক্য শুধু মৌখিক; বস্তুত তিনি ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের নেশায় এতোই বিভোর যে দিকমণ্ডলে তাঁকাবার প্রবৃত্তি বা অবসর কোনওটা তাঁর নেই যার ফলে তাঁর রচনার মধ্যে একটা স্বপ্নসুলভ অসমাঞ্জস্য এসে জোটে, যার হেতু জানতে চাইলে, মনস্তাত্ত্বিক নেবেন আশা ভঙ্গের নাম ক্ষণিক পরেই আবার দেখা যাবে স্টিওয়েল এর সাথে রবার্ট ফ্রস্ট-এর সাদৃশ্যতা উল্লেখ্য যে, যখন তিনি ফ্রস্ট-এর কবিতার তুলনা করছেন স্টিওয়েল সাথে, তখনই বার বার ব্যবহার করা হয়েছে ফ্রস্টকে কবি ফ্রস্ট বা ব্যক্তি ফ্রস্ট মানুষ হিসেবে অপর মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য বা মানুষের কোন দিকটাকে তিনি বেশি তুলে এনেছেন তা পাওয়া যায়
প্রবন্ধটার শেষের দিকে পাওয়া যাবে শেলিরস্কাইলাক’-শীর্ষক কবিতাটি ছাড়া এই কবিতাটি অন্যসকল কবিতা থেকে কখন বা কোন জিনিসের জন্য পৃথক য়ে রয়েছে! শুধু শেলি অন্য কবিতা নয়, এইস্কাইলাকপড়ে কবির যে অনন্য সাধারণ কবি প্রতিভা ছিল তার বহিঃপ্রকাশ রয়েছে
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধ গ্রন্থের আরেকটি হলোকুলায় কালপুরুষ যদিও নামটি পূর্বে কয়েকবার উল্লেখ করা হয়েছে তবুও আবার এখানে স্মরণ করিয়ে দিতে চাইকুলায় কাল পুরুষমুখবন্ধ ব্যতীত প্রবন্ধের সংখ্যা উনিশটি, সংযোজন অধ্যায়ে রয়েছেবুড়োর চোখে রাগী ছোকরার দলনামক পৃথক একটি প্রবন্ধকুলায়ও কালপুরুষপ্রকাশিত হয় ১৩৬৪ বঙ্গাব্দে বা ১৯৫৭ খ্রীষ্টব্দে
কুলায় কালপুরুষ’-এর প্রবন্ধগুলে হলো: ‘রবীন্দ্র প্রতিভার উপক্রমনিকা’, ‘রবিশস্য,’ ‘ছলোমুক্তি রবীন্দ্রনাথ’, ‘সূর্যাবর্ত,’ ‘দিনান্ত’, ‘উক্তি উপলব্ধি’, ‘অন্ত:শীলা’, ‘চোরাবালি’, ‘বাংলা ছন্দের মূল সূত্র’, ‘শিল্প স্বাধীনতা’, ‘মনুষ্য ধর্ম’, ‘অদ্বৈতের অত্যাচার’, ‘বিজ্ঞানের আদর্শ’, ‘উদয়াস্ত’, ‘আঠারো শতকের আবহ’, ‘ভিক্টেরীয় ইংল্যান্ড’, ‘অনার্য সভ্যতা’, ‘পিতা-পুত্র’, এবংপ্রগতি পরিবর্তন প্রগতি পরিবর্তনচতুরঙ্গ’-অন্ত:শীলা’-বিচিত্রায় এবংউক্তি উপলব্ধি’-বার্ষিক বৈশাখী-তে প্রকাশ পায় এছাড়া অন্য যেসকল প্রবন্ধগুলো রয়েছে তা সুধীন্দ্রনাথেপরিচয়’- প্রকাশিত হয়
অন্যান্য প্রবন্ধগুলো যে সংখ্যা বা বর্ষ-তে প্রকাশ পেয়েছে তা উল্লেখ করা হল: ‘রবীন্দ্রপ্রতিভার উপক্রমণিকা’ [অগ্রায়ন ১৩৪৬: বর্ষ, (১ম খন্ড) ৫ম সংখ্যা, ‘রবিশস্য; [ভাদ্র ১৩৪৭: ১০ বর্ষ (১ম খন্ড) ২য় সংখ্যা], ‘ছন্দেমুক্তি রবীন্দ্রনাথ’ [মাঘ ১৩৩৯: ২য় বর্ষ, ৩য় সংখ্যা], ‘সূর্যাবর্ত’ [শ্রাবণ ১৩৪৩, ৬ষ্ঠ বর্ষ, ১ম সংখ্যা], ‘দিনান্ত’ [ ভাদ্র ১৩৪৮: ১ম বর্ষ (১ম খন্ড) ২য় সংখ্যা], ‘উক্তি উপলব্ধি’ [১৩৫৩: ?] ‘অন্ত:শীলা’ [ আশ্বিন ১৩৪২: বর্ষ (১ম খন্ড) ৩য় সংখ্যা], ‘চোরাবালি’ [বিষ্ণু দে চোরবালির মুখবন্ধ ১৯৩৭], ‘বাংলাছন্দের মূলসূত্র’ (বৈশাখ ১৩৪০: ২য় বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা), ‘শিল্প স্বাধীনতা’ (শ্রাবণ ১৩৪৪: ৭ম বর্ষ (১ম খণ্ড) ১ম সংখ্যা], ‘মনুষ্য ধর্ম’ [বৈশাখ: ১৩৩১: ১ম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা], ‘অদ্বৈতের অত্যাচার’ [কার্ত্তিক ১৩৪১: ৪র্থ বর্ষ, ২য় সংখ্যা], ‘বিজ্ঞানের আর্দশ’, [বৈশাখ ১৩৪৩ : ৫ম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা], ‘উদয়াস্ত’ [মাঘ ১৩৪২, ৫ম বর্ষ, ৩য় সংখ্যা; [ভাদ্র ১৩৪৩: ৬ষ্ঠ বর্ষ, ২য় সংখা], ‘আঠারো শতকের আবহ’ [শ্রাবণ ১৩৪৭, ১০ বর্ষ) ১ম সংখ্যা] ‘ভিক্টোরীয় ইংল্যান্ড’ [বৈশাখ ১৩৪৫ ৭ম বর্ষ (২য় খন্ড) ৪র্থ সংখ্যা, ‘অনার্য সভ্যতা’ [ পৌষ ১৩৪৬, ৯ম বর্ষ (১ম খন্ড) ৬ষ্ঠ সংখ্যা], ‘পিত-পুত্র’ [কার্ত্তিক ১৩৪৬, ৯ম বর্ষ (১ম খন্ড) ১ম সংখ্যা] ‘প্রগতি পরিবর্তন’, [আশ্বিন ১৩৪৫: ১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা, এবংবুড়োর চোখে রাগী ছোকরার দল’ ‘দেশ’- [বৈশাখ ১৩৬৭: ২৭ বর্ষ, ২৭শ সংখ্যা ]
কুলায় কালপুরুষ’-এর দীর্ঘ প্রবন্ধটি হচ্ছেছন্দমুক্তি রবীন্দ্রনাথ হর্বর্ট স্পেন্সর থেকে শুরু করে শেকসপিয়র অ্যারিস্টটল, মাইকেল সহ আরো অনেকের কাব্যচিন্তা বা ছন্দ সম্পর্কিত আলোচনা রয়েছে আরো অনেকের কবিতা এবং তাঁর সাথে সম্পর্কিত চিন্তা চেতনা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আর যখন তিনি প্রকাশ করেন দুটি মহাকাব্যের সঙ্গে মিলটনী ভাষার কতটা সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য রয়েছে সুধীন্দ্রনাথ আরো যখন দৃঢ়চিত্তে প্রকাশ করেন, মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে এমন এক কবির দেহান্তর ঘটল তিনি শেক্সপীয়র এর সমকক্ষ না হলেও, পদমর্যাদায় ঠিক তাঁর নিচে এরপরে কাব্যকে ঠেকিয়ে রাখা গেল না নিরবিচ্ছিন্ন সু-সময়ের প্রশ্রয়ে কবিদের মধ্যে আবার উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা দিলে পদ্যে-গদ্যের পূর্ণবিবাহে পৌরোহিত্য রেও ব্রাউনিং জাত খোয়ালেন না, টেনিসন গ্রাম্য ভাষায় কাব্য রচনার প্রয়াস পেলেন; এবং স্বয়ং সুইনবর্ণ না মেনে পারলেন না যে গদ্য কবিতার জন্মদাতা হুইটম্যান বিদ্রোহী নন, মুমূর্ষু কাব্যের ত্রানকর্তা তিনি এই প্রবন্ধের নামছন্দো মুক্তি রবীন্দ্রনাথদিলে তুলে ধরেছেন বিভিন্ন দেশের কবিদের কবিতা এবং তাঁদের কাব্যের ভাষান্তর কী ছিল বা কী হওয়া উচিত চীনা, জাপানী থেকে বাঙলা কাব্যের গতানুগতিক প্রবাহের দিক দেখিয়েছেন আরো যখন প্রকাশ করেন, বাঙলা কাব্যের উৎপত্তির কোন ছায়ায় বা তাঁর ভাষার ব্যবহার
বাঙলা ছন্দ এবং মাইকেল সম্পর্কে তিনি যখন একের পর এক প্রকাশ করতে থাকেন মাইকেল ইংরেজি শিক্ষার প্রথম যুগের মানুষ এবং নিজ বাসভূমি পরবাসী হওয়াই ছিল তদানীন্তন চিৎপ্রকর্ষের পরাকাষ্ঠ সুতরাং এমন সন্দেহ হয়তো অনুচিত নয় যে মাইকেল ভাষাকে ভালোবাসতেন বটে, কিন্তু তাঁর প্রকৃতি বুঝতেন না, তাই তিনি বা ভারতীয়রা সেবক মাত্র তার ত্রাণকর্তা নন, আমি জানি যে, তিনি শুধু নিয়ামক হিসাবে অদ্বিতীয় নন, চরিত্রগুলোর অনটনে তাঁর বিরাট কবি প্রতিভার অনেক খানি যদিও অপ্রকাশিত, তবু এক জন মহাকাব্যের মহাকবি যতদিন বাংলা কাব্যের অনুকম্পায়ী জুটবে, ততদিন তাঁর নাম কীর্তনে লোকাভাব ঘটবে না শুধু তা- তিনি প্রকাশ করেননি-এর পরবর্তীতে বাঙলা কাব্যের পরিস্থিতি কতটা উজ্জ্বল তা প্রকাশ করেছেন মাইকেল শুধু ম্রিয়মান বাঙলা কাব্যকে জাগিয়ে তুলে ঝিমিয়ে পড়েননি বাঙালী কবিদলকে এর জাওয়ালার দল থেকে বাঁচিয়েছিলেন তিনিই; এবং তাঁর অব্যবহিত পরেই বঙ্গাকাশে যতগুলি জ্যোতিষ্ক উঠেছিল, তারা যদিও নিতান্তই আকাশ প্রদীপ, তবু বাঙালী মনীষীরা সেই নগন্যদের জন্য যে অকৃপণ সংবর্ধনার ব্যবস্থা করেছিলেন, তা বোধ হয় মৃন্ময় দ্রোনের চরণে একলব্যের অর্ঘ্যনিবেদন পক্ষান্তরে, মাইকেলকে পথ পরিচয়ক হিশেবে না পেলেও, বঙ্গ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাব হয়তো যথাসময়ে ঘটতো এবং তাঁর সমান কবি যেমন শতবর্ষে একবার জন্মায়, তেমনই তাঁদের আগমন ধুমকেতু মতো স্বয়ংবশ স্বতঃসিদ্ধ তৎসত্ত্বেও কথা অতি সত্য যে মাইকেলে বৈফল্য তাঁর সামনে অধিকাংশ শক্তি ফুরাত তার মানে এমন নয় যে মৌলিক প্রতিভায় মাইকেলের অগ্রগণ্য কবি -দেশে বা বিদেশে অসংখ্য, এবং বিশুদ্ধ কল্পনার সোমের প্রতি তারা, ‘বিদায় অভিশাপ’-এর চেয়ে উৎকৃষ্ট হোক বা না হোক, মনস্তত্ত্বের দিক দিয়ে প্রথম বীরাঙ্গনা দেবযানীর চেয়ে অনেক বেশি বিশ্বাস্য মাইকেলের প্রতি অসুলভ অবিচারের জন্যে রবীন্দ্রনাথ পরে একাধিক বার লজ্জা জানিয়েছেন, কিন্তু তাঁর কাছে নিজের ঋণ কখনও মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেননি, যেমন করেছেন বিহারীলাল-এর প্রসঙ্গে, এবং সে মিতভাষণের ব্যাখা বোধ হয় এই যে, শেষোক্তের সঙ্গে তাঁর যে সম্পর্ক বর্তমান, তাঁর সঙ্গে তুলনীয় শুধু পতঙ্গ আর প্রদীপের নিজেকে অন্যের কাজে লাগানোই যেন বড় কাজ য়ে দেখা দেয় রবীন্দ্রনাথের কাছে
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, প্রত্যেক উৎকৃষ্ট কবিতাই কালোপযোগী, কিন্তু শ্রেষ্ঠ কবিতার আরও একটা বাড়তি গুণ আছে, যেটা কালাতিরিক্ত কাব্যের মূল্য সম্পর্কে আরও যখন তুলে ধরেন, ওয়র্ডওয়র্থ, শেলি, টেনিস্ন ইত্যাদির মতো প্রথম শ্রেণীর কবিরাও কাব্যে বিচিত্রায় মূল্য বোঝেননি এবং সেই জন্য তাঁদের কাব্য নির্বিকার ব্যক্তিত্বের মূল্য বোঝেননি; এবং সেই জন্য তাঁদের কাব্য নির্বিকার ব্যক্তিত্বের নিরবকাশ বাহন সুধীন্দ্রনাথ, তাঁর প্রবন্ধগুলোতে কবি, কাব্য, এবং ছন্দ-এর এতো ব্যাপক আলোচনা করেছেন যে, তা হয়তো উল্লেখ রে শেষ করা যাবে না প্রবন্ধের প্রতিটি লাইনে তিনি বারবার বিভিন্ন জনকে এনে দাঁড় করিয়েছেন যেভাবে, পরে দেখা যায় তাঁর সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন বিশ্লেষাত্মক ভাবে কোন সাহিত্য বৈচিত্র্যের পরিমাপে অপেক্ষাকৃত অধিক যেমন তিনি প্রকাশ করেন, যে- কবির বক্তব্য ব্যক্তিকে ছেড়ে, বিশ্বের আশ্রয় নেয় কিংবা যখন দেখতে পাই, রবীন্দ্র প্রতিভার অদ্ভূত অধৈর্য্য, অশেষ পরিবর্তন এবং অনবতুল বৃদ্ধি তাঁকে তীব্রভাবে আকর্ষণ করে অপর শ্রেণীর কবিদের থেকে যখন তিনি পৃথক রে দেখেন রবীন্দ্রনাথকে এবং প্রকাশ করেন, প্রথম শ্রেণীর কবিদের রচনায় একটা সুনির্দিষ্ট ধারা ষ্পষ্ট, একটা সীমাবদ্ধ সরনী বেয়ে তাঁরা উৎকর্ষে ওঠেন, এবং একবার গন্তব্যে পৌঁছালে, তাঁদের আর কোনও দ্বিধা, দ্বন্দ্ব বা চাঞ্চল্য থাকে না কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যেয় তিনি এই কঠিন সন্তোষ অবর্তমানছন্দোমুক্তি রবীন্দ্রনাথশীর্ষক নামকরণের প্রবন্ধটি রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত ধাপটি এখান থেকেই শুরু হয়
সুধীন্দ্রনাথ, এই পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথেরমানসী’, ‘কল্পনা’,‘ক্ষণিকা’, ‘গীতাঞ্জলি’, ‘বলাকা’, ‘লিপিকা’, ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থের কিছু কিছু কবিতা ব্যবহার করেন সেই সাথে তুলে ধরেন কবিতাগুলোর ছন্দের দিকটি রবীন্দ্রনাথের গদ্যে যেমন পদ্যের কাছে ঋণী, তদ্রƒ; পদ্য গদ্যের কাছে ঋণী শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথের কাব্যেয় ছন্দের উপস্থিতি কতটুকু এবং কিভাবে তিনি তা ব্যবহার করে দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ শুধু বাক্যে নিয়ে খেলেননি, খেলেছেন ছন্দ নিয়ে-


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...