সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ এসো যদি তবে আমার হৃদয়ে এসো



                      এসো তবে আমার হৃদয়ের গভীরে অনন্ত ফাল্গুনির নীল মেঘে; 
                      এসো হৃদয়ের গভীর থেকে আরও গভীরে সবুজ পল্লব হিমে,  
                      এসো সকালের শিশির হ’য়ে, আমার গভীর ভাবনায়, স্নিগ্ধ হ’য়ে,  
                      এসো সন্ধ্যায় রজনীগন্ধার গন্ধ হ’য়ে, সুনিবিড় নীলবীথি হৃদপিণ্ডে; 
                      এসো সব উদ্যান, অরণ্য, নদী, জ্যোৎস্না, নিসর্গ সন্ধ্যা পিছে ফেলে,
                      এসো তুমি মেঘে ভর ক’রে মেঘদূত হ’য়ে, গোলাপ আর পাপড়িতে;  
                      এসো তুমি সুদূর নীলিমা আর নীরব নির্জন শিশির সিক্ত শিউলি ফুলে;
                      এসো তুমি শুভ্র জ্যোতির্ময় মৃদু জ্যোৎস্নার সন্ধ্যার বাতাসে, হিম ঠোঁটে;
                      এসো তুমি লাল মেঘ আর তুষারের প্রোজ্জ্বল অমল শুভ্রতার প্রাণে;
                      এসো তুমি উজ্জ্বল রুপালী জলে, নিঃশব্দ ঢেউ আর ভালোবাসার চিত্তে;  
                      এসো তুমি দীপ্ত প্রাণে, সজীব গাছে, মৌন আকাশের লৌকিক কাহিনী হ’য়ে
                      এসো তুমি মৃদু সুর মূর্ছনার কামনার ভেসে আসা সুরে, মর্মে আর আশ্চর্য ঠোঁটে,
                      এসো তুমি রৌদ্রময় শস্যের ভূমিতে, জলজ উদ্ভিদের সঞ্চারিত চন্দ্রমল্লিকার বনে,
                      এসো তুমি শাদা মেঘের মৌলিক ভাবনায়, শূন্যলোকে হারানো আমার স্বপ্নজলে;     
                      এসো তুমি একফোঁটা নিটোল শিশিরে জন্ম নেওয়া অরণ্যের রচিত শোভায়; 
                      এসো তুমি সোনালী সুতোয় বাঁধা আমার নকশিকাঁথার নিপুণ অম্লান সূচিতে,
                      আহ্বান করি তোমাকে, এসো আমার হৃদয়ের গভীরে জন্ম নেওয়া বসন্তের অর্পিত
                      আবেগে। আমার বিস্ময় সোনালী নিবিড় হৃদয়ে জন্ম নেয়া পদ্মগুলো আরও বেশি
                      রক্তিম হোক তোমার স্মৃতির বিশাল আকাশে। স্বপ্ন, জ্যোৎস্না, শুভ্রতায় ধূসর হিমে,
                      এসো যদি তবে আমার হৃদয়ে এসো, এসো তুমি প্রবাহিত ঝর্নাধারায়, অতীন্দ্রিয় মনে
                      এসো তুমি বোশেখের উত্তাল হাওয়ায়, গভীর ব্যাপক আমার রচিত প্রাজ্ঞতায়,
                      এসো তুমি  আষাঢ়ের ঘন বৃষ্টি হ’য়ে, আমার শব্দ ও তরঙ্গের কম্পিত বাস্তবতায়,
                      তবুও তুমি এসো, আমার এ শূন্য হৃদয়ের মাঝে রূপসীর মানবিক শিল্পকলায়;
                      এসো যদি তবে আমার হৃদয়ে এসো চাঁদ, জ্যোৎস্না আর অমল অশ্রুমালায়।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বিষ্ণু দে : ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’ থেকে ‘চোরাবালি’

বিষ্ণু দে , তিরিশি কবিদের অন্যতম । কবিতা রচনাই যাঁর কাছে এক এবং অদ্বিতীয় হ ’ য়ে দেখা দেয় । কাব্যে সংখ্যার দিক থেকে অতিক্রম করেছেন সতীর্থদের । বিষ্ণু দে , যাঁর কবিতা রচনার সূচনা পর্বটিও শুরু হয় খুব দ্রুততম সময়ে । কবিতা সৃষ্টির পর্বটি অব্যাহত রেখেছেন সর্বদা । পঁচিশটি কবিতা নিয়ে ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এ নিজেকে প্রকাশ করেন স্ব - মহিমায় । যে কবিতাগুলা বিস্ময়বিমুগ্ধ ক ’ রে অন্যেদেরকেও । ওই কবিতা শুধু বিষ্ণু দে ’ কে নয় , বরং নতুনতর হ ’ য়ে দেখা দেয় বাঙলা কবিতা । বিষ্ণু দে ’ র ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’ রবীন্দ্রনাথকে পড়তে হয়েছিল দু ’ বার । ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এর কবিতাগুলির রচনাকালের ব্যাপ্তি দেওয়া আছে ( ১৯২৮ - ১৯৩৩ ) সময়ের মধ্যে , এবং গ্রন্থকারে প্রকাশ পায় ওই একই বছরে অর্থাৎ , ১৯৩৩ - এ । কিন্তু রচনাকালের ব্যাপ্তি ১৯২৮ দেওয়া থাকলেও প্রকৃত পক্ষে এ সকল কবিতাগুলো রচনা পর্ব শুরু হয় আরো দু ’ বছর পূর্বে অর্থাৎ , ১৯২৬ - এ । যখন কবি হিশেবে বিষ্ণু দে একেবারেই নতুন এবং নবীন । ১৯৩৩ - এ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...