সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রবন্ধঃ বিষ্ণু দে : ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’ থেকে ‘চোরাবালি’


বিষ্ণু দে, তিরিশি কবিদের অন্যতম কবিতা রচনাই যাঁর কাছে এক এবং অদ্বিতীয় য়ে দেখা দেয় কাব্যে সংখ্যার দিক থেকে অতিক্রম করেছেন সতীর্থদের বিষ্ণু দে, যাঁর কবিতা রচনার সূচনা পর্বটিও শুরু হয় খুব দ্রুততম সময়ে কবিতা সৃষ্টির পর্বটি অব্যাহত রেখেছেন সর্বদা পঁচিশটি কবিতা নিয়েউর্বশী আর্টেমিস’- নিজেকে প্রকাশ করেন স্ব-মহিমায় যে কবিতাগুলা বিস্ময়বিমুগ্ধ রে অন্যেদেরকেও ওই কবিতা শুধু বিষ্ণু দেকে নয়, বরং নতুনতর য়ে দেখা দেয় বাঙলা কবিতা বিষ্ণু দেউর্বশী আর্টেমিসরবীন্দ্রনাথকে পড়তে হয়েছিল দুবার
উর্বশী আর্টেমিস’-এর কবিতাগুলির রচনাকালের ব্যাপ্তি দেওয়া আছে (১৯২৮-১৯৩৩) সময়ের মধ্যে, এবং গ্রন্থকারে প্রকাশ পায় ওই একই বছরে অর্থাৎ, ১৯৩৩- কিন্তু রচনাকালের ব্যাপ্তি ১৯২৮ দেওয়া থাকলেও প্রকৃত পক্ষে সকল কবিতাগুলো রচনা পর্ব শুরু হয় আরো দুবছর পূর্বে অর্থাৎ, ১৯২৬- যখন কবি হিশেবে বিষ্ণু দে একেবারেই নতুন এবং নবীন ১৯৩৩- গ্রন্থটি প্রকাশ পায়, কিন্তু লেখার পর্বটি শেষ হয় এর এক বছর পূর্বে অর্থাৎ, ১৯৩২- তাহলেউর্বশী আর্টেমিস’-এর রচনা কালের ব্যাপ্তি দাঁড়ায় (১৯২৬-১৯৩২) সময়ের মধ্যে এই সাত বছরে বিষ্ণু দেউর্বশী আর্টেমিস’- অন্তর্ভূক্ত করেন পঁচিশটি কবিতা সতের থেকে বত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে তিনিউর্বশী আর্টেমিসরচনা রে বাঙলা কবিতায় নিজের স্থানটি করে নেন পরবর্তীতে  চলে ওই স্থানটির মজবুত করনউর্বশী আর্টেমিস’-এর পঁচিশটি কবিতার মধ্যে শ্রেষ্ঠ কবিতায় উঠে আসে ছয়টি কবিতা যদিও ওই কাব্য গ্রন্থের আরো কিছু কবিতা শ্রেষ্ঠ হওয়ার যোগ্যতা রাখে কিন্তু পঁচিশটি কবিতা থেকে ছয়টি শ্রেষ্ঠ হওয়াতে বা ততোধিক না হওয়ার ব্যাপারটি ওই পঁচিশটির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেউর্বশী আর্টেমিস’-এর শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলো হলো: ‘পলায়ন, ‘প্রত্যক্ষ’, ‘অভীপ্সা’, ‘উর্বশী’, ‘সন্ধ্যাএবংসোহবিভেওস্মাদেকাকী বিভেতি কিন্তুউর্বশী আর্টেমিস’-এর প্রত্যেকটি কবিতার নিচে রচনা কাল দেওয়া রয়েছে এই রচনাকাল দেওয়া হয় বৈশাখ ১৩৬৭-তে (১৯৬০)- সিগনেট সংস্করণে তাহলে ১৯৩৩- যখন প্রথম প্রকাশিত হয় কবিতাগুলি তখন তিনি রচনাকাল দেননি কেন তা আমার জানা নেই দ্বিতীয় সংস্করণ- এটা উল্লেখ করা হয় আমি পূর্বেই বলেছিউর্বশী আর্টেমিস’-এর রচনাকাল (১৯২৬-১৯৩২)- কিন্তু দ্বিতীয় সংস্কারণে১৯২৬-রচনা কোন কবিতা পাওয়া যাবে না
আমি ১৯২৬ সালের কথা বলেছিশ্রেষ্ঠ কবিতারনির্বাচন এর তথ্যানুযায়ী তাহলে তিনি কী দ্বিতীয় সংস্করণে ওই কবিতার কোনো পরিমার্জন করেন? ‘উর্বশী আর্টেমিস’- ১৯২৮-এর সময় কালের রচিত কবিতা পাওয়া যাবে চারটি আবার বলেছি ১৯৩২-উর্বশী আর্টেমিস’-এর রচনাকাল শেষ হয়, কিন্তু গ্রন্থেই পাওয়া যাবে ১৯৩৩- রচিত দুটি কবিতা সেই তথ্যমতে বলতে হয় রচনাকাল শেষ হয় ১৯৩৩-উর্বশী আর্টেমিস’-এরঅর্ধেক কল্পনাকবিতাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় রবীন্দ্রনাথের রচিত কবিতার কথা যদিও তিনি সম্পূর্ণটি গ্রহণ করেননি, গ্রহণ করেছেন আংশিক
বিষ্ণু দে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থচোরাবালি”- যার রচনাকাল (১৯২৬-১৯৩৬)-এর মধ্যে গ্রন্থ য়ে প্রকাশ পায় তার পরবর্তী বছরেই অর্থাৎ ১৯৩৭- পূর্বের কাব্যের ন্যায় প্রথম প্রকাশে কাব্যটির রচনা কাল উল্লেখ ছিল না দ্বিতীয় সংস্করণে এসে তা দেখা দেয় ১৯২৬-এর রচনাকালনুযায়ী-“চোরাবালিএর কিছু কবিতা চলে আসার কথাউর্বশী আর্টেমিস’- কিন্তু পৃথক দুটি কাব্য হওয়াতে প্রথম কাব্যের কবিতাগুলো পৃথক য়ে যায় কবিতা রচনার দিক থেকে ১৯৩৩- পর্যন্ত সমস্ত কবিতাগুলো অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিলউবর্শী আর্টেমিস’- এর পরবর্তী  তিন বছরের কবিতা অন্তর্ভূক্ত হবেচোরাবালিতে যেহেতুউর্বশী আর্টেমিস’-এর কবিতাগুলো চোরাবালির সাথে সংমিশ্রণ না ঘটালে উভয় দুটি কাব্যের রচনাকালের ব্যবধান হয় তিন বছর আর এই তিন বছরের কবিতাগুলো সম্পূর্ণরূপে দেখা দিবেচোরাবালিতে কিন্তু বিষ্ণু দে চিন্তায় বা নির্বাচনে দুটি কাব্য হওয়াতে কবিতাগুলো ব্যাপক ভাবে পৃথক য়ে যায়উর্বশী আর্টেমিসযদি প্রথম প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ য়ে থাকে তাহলে, ১৯৩৩ পর্যন্ত যতোসংখ্যক কবিতা এসেছে- ‘উর্বশী আর্টেমিস’-, ততোধিক কবিতা এসেছেচোরাবালি’-তেচোরাবালি-তেকবিতার সংখ্যা বাইশটি এবং শ্রেষ্ঠ কবিতায় উঠে আসে নয়টি কবিতাচোরাবালি’-তে পাওয়া যাবেনির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গনামক একটি কবিতা যেটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতার কথা, ‘আজি প্রভাতে রবির কর কেমনে পশিল প্রাণেরপর, কেমনে পশিল গুহার আঁধার প্রভাত পাখির গান না জানি কেন রে এতদিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণআর সেই একই নামে বিষ্ণু দে বলেছেন, “সে কথা তো জানি তোমাতে আমার মুক্তি নেই, /তবু বারে বারে তোমারই উঠানে যাওয়া আসা/আত্মীয় নও, সমাজের ইকরার-নামায়/কস্মিনকালে বাঁধা হয়নি কো তাই বাসা” “চোরাবালিতে” ‘গার্হস্থ্যাশ্রমকবিতাটিতে পৃথক কিছু কবিতা নিয়ে স্থান নিয়েছেগার্হস্থ্যাশ্রম’-এর অন্তর্ভুক্ত শেষ কবিতাটিআত্মজ্ঞান এই কবিতাটির শেষেই রয়েছে কবিতার রচনাকাল (১৯২৫-১৯৩০) এই কবিতা সমূহ স্বাভাবিক ভাবেই আসার কথা ছিলউর্বশী আর্টেমিস’-, কিন্তু তা-না হয়ে আসেচোরাবালি’-তে, তাইউর্বশী আর্টেমিসথেকে কতটা স্বতন্ত্র রয়েছেচোরাবালি
জীবনানন্দ দাশেরসুদর্শনা’, ‘সবিতা’, ‘সুচেতনা’, ‘বলনতা সেনএবং বুদ্ধদেব বসুরকঙ্কাবতীরমতো, বিষ্ণু দে কবিতায় স্থান পায় এরকম কিছু নাম যে নামগুলোর উপস্থিতি আমরা লক্ষ্য করতে পারি প্রথম কাব্যগ্রন্থ থেকেইউর্বশী আর্টেমিস”-প্রজ্ঞাপারমিতা তাকে করে আশীর্বাদনামক কবিতাটিতে প্রথম উপস্থিত হয়লিলিনামটি এই কবিতার দ্বিতীয় অংশে বলি আমি পল্লবমর্মরে/তোমার নয়নে / লিলি পর্বতেরসরোবর/পেয়েছে ব্যঞ্জনা/ শিখর প্রশান্ত, স্থির, স্বচ্ছ অতল এই একই কবিতায় পরের অংশে আবার দেখতে পাই, মৃদুস্বরে বলি/ তোমার কথা, লিলি, দেয়ালিমক্ষীরা/প্রেমের গুঞ্জন শত হৃদয় আলোর পাশে ঘোরে বর্ষকাল,/ক্ষণিক-তোমার কথা তুমি ভুলে যাও/আমার হৃদয়ে তারা ঘোরে নানা রূপে রূপে নক্ষত্রসভায় আবার এর পরবর্তী কবিতায় বাহুটি জড়িয়ে তাকে বলি,/ তোমার চিত্তের, লিলি চামেলি সৌরভ/যে মায়া ছড়ায় চেতনায়/সে মারায় ফুটেফুটে ওঠে/পৃথিবীর পরম আশ্বাস একই কাব্য গ্রন্থেরগ্রীষ্মনামক কবিতায় চোখ রাখি এই কবিতায় প্রথম দিকে যদিও নামটি পাওয়া যাবে না, কিন্তু অন্যরকম কোনো আহ্বান উল্লেখ রয়েছে: ‘ঘন গ্রীষ্মতাপ / বিশ্বের উত্তপ্ত দাহ আজ বুঝি জমায়েত ভিড়/বেঁধেছে এখানে দানা আমাদের পাশে?/ জমেছে গুমোট আবার শেষের দিকে: ‘অবসন্ন সে দুইজনে/ কর্মহীন অবকাশ কর্কশ কঠিন গুমোট/কাটে রৌদ্রতাপে/আকাশ পৃথিবী: আমবন/অদৃশ্য অস্পৃশ্য হল বর্ণহীন প্রদাহে রোদ্রের/শুধু লিলি, তোমার শরীর/মসৃন, কোমল পান্ডু মর্মর শীতল
চোরাবালিকাব্যগ্রন্থেরওফেলিয়াএকটি চমৎকার কবিতা যে কবিতাটির জন্য কাব্যগ্রন্থটি অনেকটা উজ্জ্বল য়ে ওঠে বিষ্ণু দে কবিতায়ওফেলিয়াআসে কবিতা হয়ে ওফেলিয়ার প্রতি কবির ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন ভাবে যাঁর হৃদয়ে ভালোবাসা ভর করার পর অনেকটা পথ এগিয়ে যায় কবি শুধু ভালোবাসা বা বাহ্যিক সৌন্দর্য্যরে মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে তার প্রকাশ ঘটান বাহিরেও কবি সৌন্দর্যের আহ্বান করতে থাকেন এভাবে: ‘তুমি যেন এক পরদায় ঢাকা বাড়ি/আমি অঘ্রাণ-শিশিরে সিক্ত হাওয়া/ বিনিদ্র তাই দিনরাত ঘুরি ফিরি
লিলিব্যতীতওফেলিয়াকবিতায় ভালোবাসার স্তব কোন অংশ কম মনে হয়নি সমস্ত কিছু ছেঁড়ে কবি দুঃসাহসিক কাজে লিপ্ত হতে পারেন এভাবে ওফেলিয়ার প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ পায় দুঃসাহসিকভাবেওফেলিয়াকবিতা থেকে আবার যখন আমরা অগ্রসর হবোগার্হস্থ্যাশ্রমকবিতার দিকে তখন আবার ফিরে পাবোলিলিকে’ ‘গার্হস্থ্যাশ্রম’-এর অর্ন্তগতআর্ধিদেবিক প্রত্যাদেশকবিতায় কয়েকটি পঙ্ক্তি পড়ার পর অগ্রসর হলেসেই কথা ভাবলুম বসে বসে লেকে/ তোমার রঙেরও লিলি হবে খড় রং’, এবং শেষের দুপঙ্ক্তিতে এসে আবার পাবো : ‘তোমার পাশের তো তাই ঘেঁষে এসে মিলি/ সিগারেট না খেয়েই-হাসছ যে লিলিপরের কবিতাটির দিকে চোখ রাখলেই প্রথম দিকেই পাওয়া যাবেমাঘের মাঝারে ফাল্গুনী হাওয়া বয়?/আজ লিলি শুধু স্বপ্ন দেখার পালা ঘন গ্রীষ্মতাপ থেকে কবি ফিরে এসে আবার যখন ফাল্গুনী হাওয়ার স্পর্শ গায়ে লাগান, এবং স্বপ্ন দেখার পর্ব শুরু করেন নীল শাড়ি পরিহিত কোনো নারীর জন্যে, তখন কবি কতটা স্থির থাকেন নিজের জন্য? লিলিকে উদ্দেশ্য করে আবার যখন প্রকাশ করেন : ‘উদাস উর্দু ঘুর মৃদুমিঠে স্বরে/গুঞ্জন করো, স্বপ্নের জাল টানো/আজ লিলি আর থাকা যায় নাকো ঘরে/ উদাস উর্দু সুর মৃদুমিঠে স্বরে/শহুরে ছাতেও অকাল দখিনা করে/উতলা-উদাস’-সে কথা তো লিলি জানো তাহলে স্বপ্নের জাল টানার পর কবিলিলিকেবাইরে নিয়ে আসতে চান, এবং মৃদুস্বরে আরো কিছু সুর ধ্বনি সৃষ্টি করতে বলেন উতলা উদাসের কথা যেমন জ্ঞাত থাকে লিলির
কবি বার বার এবং বহুবার ফিরে এসেছেন লিলির কাছে, এবং প্রেমের স্তব গেয়ে একাত্বতা প্রকাশ করেছেন তাঁর সাথেগাহস্থ্যাশ্রম’-এরকনডিশনড রিফ্লেকস’- কবি প্রকাশ করেছেনলিলিরকাছে ফিরে আসার কারণটি:
অভ্যাস শুধু অভ্যাস, লিলি, তাই তো আসি
তোমার উষ্ণ প্রেমের হাস্যচপল নীড়ে
অভ্যাস, শুধু অভ্যাস, ভালো তাই তো বাসি,
সহজের পেশা, আরামের নেশা, তাই তো আসি
তোমার শাড়ির ছটায়, কথায় কথায় হাসি-
না হলে ঝঞ্ঝা ফেলত সে সারা জীবন ঘিরে
তাহলে শুধু অভ্যাসের জন্যে লিলির কাছে আসা, এবং এই অভ্যাসের জন্যেই তাঁকে ভালোবাসা, ছাঁড়া অন্য কোনো কারণ নেই? ভালোবাসার ব্যাপারটিকেও তিনি অন্য সব ব্যাপারের মত নিয়েছেন তাহলে অন্য কাউকে ভালোবেসে তিনি লিলির নিকট এসে এটিকে অভ্যাসে পরিণত করতে চেয়েছেন
আত্মজ্ঞানকবিতায় আবার পাওয়া যাবে লিলিকে স্বদেশ বা মাতৃভূমি ছেঁড়ে কবি বহু দূরদেশে জন্মগ্রহণে করলে কিভাবে চিনে নিতেন তাঁকে তা প্রকাশ করেন কতটা তাঁর কথা মনে পড়তো কবির, যাঁর নিকট শুধু অভ্যাসের কারণে ফিরে আসা হয় কবি তখন অষ্পষ্ট ভাবে চিনে নিতে পারেন লিলিকে তাই বলেন, ‘সুযোগ পেয়ে তো তবে পাশাপাশি মিলি?’/ আমাদের ভালোবাসা প্রাকৃতিক, লিলি’ ‘জ্যোকন্দাকবিতায় কবি মলিন আলোয় আসার জন্য আহ্বান করেনমোনালিসাসাইনারাকে যদিও বাস্তবিকভাবে তাঁরা নারী নয় একজন বিখ্যাত শিল্পীর অঙ্কিত চিত্র এবং অপরটি কবিতায় সৃষ্টি হাওয়া চরিত্র কবির অনুরাগ দেখে মনে হতে থাকে, তিনি যেন বাস্তবিক ভাবে পেতে চান দুজনকে দুজনকেই তিনি আহ্বান করেন একই সঙ্গে ওই সৌন্দর্যময় চিত্রটিও কবির কাছে ধরা দেয় বিদেশিনী হয়ে; যা তিরিশি কবিদের অভ্যাসে পরিণত হয় যাঁদেরকে পাওয়ার জন্যে যেন ম্লান য়ে যায় লিলি বিষ্ণু দে প্রথম দুটি কাব্যেয় হাত রাখলে এটা ষ্পষ্ট যে, তাঁর অনুরাগ বা ভালোবাসা একক কোনো নারীর প্রতি নয় বা স্বদেশি কোনো গ্রাম বাঙলার নারীর জন্যেও নয় গ্রীক বা বিদেশী যে কোনো বিখ্যাত শিল্পী বা নাট্যকারের ঐতিহাসিক চরিত্র বা পুরাণের বিখ্যাত নারীচরিত্র-গুলো স্থান করে নেয় কবিতায় এটা কী কবির স্বভাব না স্বতন্ত্র সৃষ্টির কোনো পথ?
চোরাবালি”-কাব্যগ্রন্থেরমন দেয়ানেয়া’-কবিতায়লিলি’, ‘ডলুবামৈত্রেয়ী ঘোষযা- বলিনা কেন, যাঁর দেহের খোঁজ অনেকটা স্বেচ্ছায় তিনি দিয়েছেন কবিকে যাঁর শরীরের আঁচিলটার খবর পর্যন্ত কবি নিয়েছেন যাঁর সাথে কবির সম্পর্ক ড়ে ওঠে, এবং ওই শরীর থেকে কবি নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারছেন না বলে দুঃখবোধ করতে থাকেন কবিকে এখানে ক্লান্ত মনে হচ্ছে, নতুন কী করবেন তার জন্য চিন্তিত দুটি কাব্য গ্রন্থেডনুই-শারীরিক ভাবে ধরা দেন কবিকে, এবং কবিও বিচরণ করতে থাকেন বাঁক থেকে বাঁকে শারীরিক সম্পর্কের কাছে প্রেম কতটা তাচ্ছিল্য য়ে দেখা দিতে পার তা এই কবিতাটি না পড়লে বোঝা সম্ভব নয় দুটি কাব্য জুঁড়ে যখন তিনি প্রেমের স্তরের পর স্তর গাঁথতে থাকেন আর এই কবিতায় এসে বলেন প্রেম-ফ্রেম বাজে, আসলে-আমরা নতুন খুঁজিএই প্রেমে বাঁচাটাই আশ্চর্য য়ে দেখা দেয় তাঁর কাছে কবিতাটির শেষের দিকে কবি ক্লান্ত য়ে পড়েন কবি এখন আর স্বাদ নিতে পারছেন না তাই তাঁকে নতুন পথের সন্ধান সৃষ্টি করতে হচ্ছে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধ সংগ্রহ

সুধীন্দ্রনাথ , সাতটি কাব্যগ্রন্থের মতো সাতটি প্রবন্ধের গ্রন্থ লিখলে খারাপ হতো না , বেশ ভালোই হতো । সুধীন্দ্রনাথের প্রবন্ধগুলো হালকা মানের নয় , যদিও তাঁর কোন রচনাই হালকা নয় । সাহিত্যে বিচারে তা অনেক উঁচুমানের । তার উপর ভাষার ব্যাপারটি তো রয়েছেই । সুধীন্দ্রনাথ মাত্র দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন । গ্রন্থ দুটো ‘ স্বগত ’ ( ১৩৪৫ ঃ ১৯৩৮ ), অপরটি ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’ ( ১৩৬৪ : ১৯৫৭ ) । ‘ স্বগত ’- তে রয়েছে ষোলটি প্রবন্ধ । গ্রন্থ দুটি তিনি রচনা করেছেন দু ’ ভাগে । লরেন্স বা এলিয়ট এর প্রবন্ধ যেমন পাওয়া যাবে না ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’- এ ; তেমনি রবীন্দ্র সম্পর্কিত প্রবন্ধ নেওয়া হয়নি ‘ স্বগত ’- এ । প্রকাশ কাল অনুযায়ী ‘ স্বগত ’- এর প্রবন্ধসমূহ : ‘ কাব্যের মুক্তি ’ ( ১৯৩০ ); ‘ ধ্রুপদ পদ - খেয়াল ’ ( ১৯৩২ ), ‘ ফরাসীর হাদ্য পরিবর্তন ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লিটনস্ট্রেচি ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লরেন্স ও ভার্জনিয়া উল্ফ্ ’ ( ১৯৩২ ), ‘ উপন্যাস তত্ত্ব ও তথ্য ’ ( ১৯৩৩ ), ‘ উইলিয়ম ফকনর ’ ( ১৯৩৪ ), ‘ ঐতিহ্য ও টি , এস , এলিয়ট ’ ( ১৯৩৪ ), ...