সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ প্রজাপতির অত্যাচারে

                   
                   আমার ব্যালকনি আর মসৃণ ট’বে জড়ো হয় শুচ্ছ-গুচ্ছ প্রজাপতি,
                   ভ’রে তোলে আমার নির্জনগৃহ ডানার সৌন্দর্যে, ব’সে পড়ে প্রোজ্জ্বল
                   আলোয়, শাদা দেয়ালের বুকে, ঘূর্ণয়মান প্রসারিত পাখায়, রঙিন পর্দার
                   কর্নারে তারা উ’ড়ে যায় সমস্ত গৃহে। বই, বলপয়েন্ট, দেয়ালে টানানো
                   ফটোফ্রেম, শাদা টাওয়াল, ড্রয়িং টেবিল আর ছাঁদের কার্নিশে জড়ো হয়
                 
                   নিভৃতে উ’ড়ে যায় উচ্চভবনে, সকাল বিকাল সন্ধ্যা আর স্নিগ্ধদিনে;
                   আমার কোমল চুলে ব’সে পড়ে উজ্জ্বল ডানা মেলে বিষাদের গোধূলির মৃদু
                   ঠোঁটে। আমার সমস্ত গৃহ আজ তার হৃদয়ে গেঁথে থাকা গান, নির্মোহে
                   প্রাণে বেঁচে থাকে মধুর বাতাসে। টেবিলের উপর প’ড়ে থাকা আপেলে
                   কীটপতঙ্গের ক্ষয়ে যাওয়া আবাসে তার নিজস্ববাস। আমি বেড়িয়ে পড়ি
                 
                   আপন গৃহ ছেড়ে তার কঠিন অত্যাচারে, রজনী গন্ধা, হাসনাহেনা আর
                   চন্দ্রমল্লিকার সুগন্ধ বু’কে নিয়ে। রঙিন গোলাপের পাপড়িতে উ’ড়ে
                   বেড়ায় ডানা মেলে তার চতুর্দিকে। ব্যস্ততম সড়কে বেড়িয়ে পড়ি
                   নৈমিত্তিক কর্মভেবে, তারাও জড়ো হয় আমার কঠিন পথের নির্মোহ প্রাণে।
                   উইন্ডস্ক্রিন, হেঁটে যাওয়া ধূসর পথে, থেমে থাকা টায়ার আর আমার
                 
                   শহরের সমস্ত ময়লা-আবর্জনার কঠিন স্তূপে উ’ড়ে বেড়ায় সে আপন মনে।
                   আমার ম্লান চোখ বিহ্বল ক’রে তোলে তার সোনালী নিবিড় সৌন্দর্যে।
                   প্রাসাদ, জীর্ণকুঠির আর ভ্রাম্যমাণ দোকানে তার একক আনাগোনা মৌলিক
                   শুভ্রতায়। দানবের কঠিন হাতেও আজ ধরা প’ড়ে উড়ে যাওয়া প্রজাপতির
                   অপার সৌন্দর্য তার দিকে দিকে। নির্মোহ প্রাণে বিস্ময়ের দ্রুতি আজ মুঠোতে
                   ধরা দিক বাঙলার সমস্ত গৃহে প্রজাপতির গেঁথে থাকা গান চোখের আকাশে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বিষ্ণু দে : ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’ থেকে ‘চোরাবালি’

বিষ্ণু দে , তিরিশি কবিদের অন্যতম । কবিতা রচনাই যাঁর কাছে এক এবং অদ্বিতীয় হ ’ য়ে দেখা দেয় । কাব্যে সংখ্যার দিক থেকে অতিক্রম করেছেন সতীর্থদের । বিষ্ণু দে , যাঁর কবিতা রচনার সূচনা পর্বটিও শুরু হয় খুব দ্রুততম সময়ে । কবিতা সৃষ্টির পর্বটি অব্যাহত রেখেছেন সর্বদা । পঁচিশটি কবিতা নিয়ে ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এ নিজেকে প্রকাশ করেন স্ব - মহিমায় । যে কবিতাগুলা বিস্ময়বিমুগ্ধ ক ’ রে অন্যেদেরকেও । ওই কবিতা শুধু বিষ্ণু দে ’ কে নয় , বরং নতুনতর হ ’ য়ে দেখা দেয় বাঙলা কবিতা । বিষ্ণু দে ’ র ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’ রবীন্দ্রনাথকে পড়তে হয়েছিল দু ’ বার । ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এর কবিতাগুলির রচনাকালের ব্যাপ্তি দেওয়া আছে ( ১৯২৮ - ১৯৩৩ ) সময়ের মধ্যে , এবং গ্রন্থকারে প্রকাশ পায় ওই একই বছরে অর্থাৎ , ১৯৩৩ - এ । কিন্তু রচনাকালের ব্যাপ্তি ১৯২৮ দেওয়া থাকলেও প্রকৃত পক্ষে এ সকল কবিতাগুলো রচনা পর্ব শুরু হয় আরো দু ’ বছর পূর্বে অর্থাৎ , ১৯২৬ - এ । যখন কবি হিশেবে বিষ্ণু দে একেবারেই নতুন এবং নবীন । ১৯৩৩ - এ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...