সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ শনিবারের সংগীত



 আমরা কতিপয় ব্যক্তি; তোমাদের শহরে এসেছি, এসেছি আমরা, অনেক দুঃখ
 আর কষ্ট বু’কে ধারণ ক’রে; আমরা সকলে একে অন্যের আত্মার আত্মীয়; বন্ধু
 থেকেও বেশি। একই অঞ্চল থেকে আমাদের আগমন, বিখ্যাত তা তোমাদের
                   মতো, যেখানে রচিত হয়েছিল দুঃখ আর বিষাদের কাব্যগাঁথা। কয়েকটি পঙক্তি
                 
                   ধারণ করেছি বুকের মাঝে; বলেছি তা মিলে মিশে উচ্চস্বরে। পুরোহিত নই, সব
                   পারবো তাও বলিনি, বলেছি শুধু হৃদয়ের জমানো গাঢ় শোকময় শ্লোকগুলো, যা
                   শুনেছিলাম আমাদের পিতামহদের নিকট থেকে। তাকে আমরা দিয়েছি অমর সুর;
                   আর যন্ত্রণাময় বাণী। একা একা বলিনি সবকথা; বলেছি থেমে থেমে, দলবদ্ধ ভাবে,
                  
                   সুরে সুরে। যদি তা মিথ্যা হয়; তা আমাদের জানা নেই, বাস্তবিক কোনো প্রতিকার
                   নেই; যা বলেছি বা বলিনি তোমাদের নিকট, হয়তো, সাদা মেঘে উ’ড়ে যাবে শূন্যলোকে;
                   আমাদের প্রকাশিত বাণী, বিষাদ যন্ত্রণাময় উচ্ছ্বাস; জোর করিনি তোমাদের, যা রয়েছে
                   আমাদের নিকট নেওয়ার জন্য। আমরা এসেছি অনেক অনেক পথ অতিক্রম ক’রে; এই

 সভ্যনগরে। যেখানে তোমাদের আলো আর ছায়া মিশে থাকে; প্রতি কংক্রিটে আপন হ’য়ে।
 আমরা অল্প সময়ের আগুন্তুক মাত্র, এই শহরে, যেখানে নাকি রচিত হয় সফল আর
                   কিংবদন্তিদের স্বপ্নগাঁথা; তার জগত জু’ড়ে। অনেক অনেক আপন মনে তাকিয়েছি;
                   তোমাদের মুখ আর ছায়ার দিকে, যারা বহন ক’রে প্রস্ফুটিত ভাবনার করুণ চিহ্ন; সমস্ত
                 
                   শরীর জুড়ে স্থিতে। আমাদের কণ্ঠের সুর থেকে জেগে উঠেছে; কষ্টের কথা অনেক
                   বেশি; আজ যেন সব সুর হারিয়েছে আমাদের হারানো লৌকিক ভাবনার কল্পলোকে;
                   বিষাদের সুরে কেঁপে কেঁপে, মর্মরিত সকল ভাবনা যা বেঁচে ছিল হৃদয়ের গভীরে,
 সমস্ত স্তব্ধতা যেনো খেলা ক’রে আপন শরীরে, সমবেত কণ্ঠে, বিবর্ণ পূর্ণিমার চাঁদে।

 আমরা থাকতে আসিনি; তোমাদের জড়াজীর্ণ এই শহরে, যাকে অনেক অনেক আপন
 ক’রে তোলো বুকের গভীরে, অদ্ভুত আর আশ্চর্য সুন্দর ক’রে। সন্ধ্যা আর মধ্যেরাতের
 স্তব্ধতা কোমল সুরে; জড়ো হয় রক্তের গভীরে, ধীরে ধীরে, কম্পিত ধারায় আমার দিকে
 দিকে। তোমাদের শহর, রাত্রি আর দিনকে এক ক’রে ফেলে, আমাদের মৌনতায়, তার

 সুরে সুরে। হারিয়েছি আমরা তোমাদের শহরে জ্যোৎস্না আর শ্রাবণ ধারার বিগলিত হিম;  
 শিশির, মেঘ, সুর, কম্পন আর বৈশাখের ঊর্মিল হাওয়া; রৌদ্রমাখা বিস্ময় আর প্রাজ্ঞতায়,
 যেখানে তোমরা ব’লো নিসর্গ নেমে আসে দু’চোখের একান্ত গভীরে; নীল ছোঁয়ায় স্তরে;
 সৌন্দর্যকে পিছে ফেলে আমরা চলে যাবো, সন্ধ্যার ঘন কুয়াশায় গেঁথে থাকা আদিম দিনে।     


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বিষ্ণু দে : ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’ থেকে ‘চোরাবালি’

বিষ্ণু দে , তিরিশি কবিদের অন্যতম । কবিতা রচনাই যাঁর কাছে এক এবং অদ্বিতীয় হ ’ য়ে দেখা দেয় । কাব্যে সংখ্যার দিক থেকে অতিক্রম করেছেন সতীর্থদের । বিষ্ণু দে , যাঁর কবিতা রচনার সূচনা পর্বটিও শুরু হয় খুব দ্রুততম সময়ে । কবিতা সৃষ্টির পর্বটি অব্যাহত রেখেছেন সর্বদা । পঁচিশটি কবিতা নিয়ে ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এ নিজেকে প্রকাশ করেন স্ব - মহিমায় । যে কবিতাগুলা বিস্ময়বিমুগ্ধ ক ’ রে অন্যেদেরকেও । ওই কবিতা শুধু বিষ্ণু দে ’ কে নয় , বরং নতুনতর হ ’ য়ে দেখা দেয় বাঙলা কবিতা । বিষ্ণু দে ’ র ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’ রবীন্দ্রনাথকে পড়তে হয়েছিল দু ’ বার । ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এর কবিতাগুলির রচনাকালের ব্যাপ্তি দেওয়া আছে ( ১৯২৮ - ১৯৩৩ ) সময়ের মধ্যে , এবং গ্রন্থকারে প্রকাশ পায় ওই একই বছরে অর্থাৎ , ১৯৩৩ - এ । কিন্তু রচনাকালের ব্যাপ্তি ১৯২৮ দেওয়া থাকলেও প্রকৃত পক্ষে এ সকল কবিতাগুলো রচনা পর্ব শুরু হয় আরো দু ’ বছর পূর্বে অর্থাৎ , ১৯২৬ - এ । যখন কবি হিশেবে বিষ্ণু দে একেবারেই নতুন এবং নবীন । ১৯৩৩ - এ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...