সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ প্রথম বন্ধু প্রথম বিশ্বাসঘাতক


                            
                            সব কথাইতো তোমাকে বলা হলো
                            আমার শৈশব, কৈশোর আর তার বেড়ে উঠা
                            মধ্যে তিরিশে দু’চোখে জমানো বিষাদের গাঁথা,  
                            আত্মার বিষাদময় বিষণ্ণতায় জ্যোৎস্নার আলো আর
                            বৃষ্টির ফোঁটায় কেঁপে কেঁপে উঠা আমার গ’লে যাওয়া
                            হারানো সন্ধ্যায় ঝ’রে পড়া প্রগাঢ় নক্ষত্রের অপরূপ
                            প্রসারিত স্বপ্নের উজ্জ্বলে খ’সে পড়া ভাবনার কথা;
                            আমার মৌনতা সবুজ উদ্ভিদ আর নিজস্ব সুরে ক্ষণিকের ম্লান
                            ছোঁয়ায় একান্ত আলিঙ্গনের রক্তিম গাঢ় দুঃখময় বিষাদের নিবিড়
                            নীল স্মৃতির পলিমাটি ভেদ ক’রে ক্রমশ যে বেড়ে উ’ঠে মুহূর্তে;  
                            নিশীথের সন্ধ্যার কুয়াশায় গলিত অশ্রুকণায় শাদা হিমে অলৌকিক  
                            নিজস্ব গোলাপে গেঁথে থাকা তৃষ্ণার কোমল সুরের ঐকতানে
                            ছুঁয়ে যাওয়া শিশিরের জলে নক্ষত্রের গভীর ভাবনার সবুজ বনে,
                          
                            নীলাকাশে হেমন্তের বাতাস ব’য়ে যাওয়া গাঢ় সন্ধ্যায় মৌলিক
                            ভাবনার চিত্তে ভেসে আসা নিঃসঙ্গ রাত্রিতে জেগে উঠা স্বপ্নের কথা
                            হৃদয়ের নির্মমতা, কি বিস্ময় প্রেমিকাদের হৃদয়ের আঘাত,
                            সোনালী সন্ধ্যায় প্রোজ্জ্বল ভাবনার গভীরে, নীল ছোঁয়ায়  
                            নিদ্রাহীন সারারাত কেটে গেল একাকী, গভীর ধ্যানে
                            প্রেমিকাদের নরম চুল উ’ড়ে গেল বুকের গভীরে একাকী মেঘের
                            হাওয়ায় বিদ্যুৎ খেলে যায় উত্তরের বাতাসে গানের সুরে সুরে;  
                            কালো জলের গভীরে জমে থাকে তার প্রতিচ্ছবি;  
                            আমার নিশীথের প্রসারিত সবুজ হিমে, অশ্রুবিন্দুর ফোঁটায়
                           
                            চাঁদ ও জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ অমলতায় রাত্রির আকাশে ভেঙে পড়া
                            পুণ্যময় শ্লোক, পবিত্র সম্পর্ক, মেঘমালা, গাঢ় নীলবন আর পুঞ্জ-পুঞ্জ
                            ঝ’রে পড়া জ্যোতির্ময় নির্মম আলো ঢেউয়ের মতো ব’য়ে যায় জ্যোৎস্না
                            ও চাঁদের সাথে; এলোমেলো অলৌকিক স্বপ্নের আঙুলের ঐন্দ্রজালিক
                            সুরে সুরে খেলা ক’রে যায় আমার নদীর ঢেউয়ের সাথে পরম সম্পর্কে
                            নির্জন ভাবনার গভীরে, যার পদতলে সমস্ত পৃথিবীর রঙ বিলিয়ে
                            দিলাম আপন সৌরভে উজ্জ্বল আলোকিত আভায় ভেঙে পড়া
                            সোনালী মধ্যেদিনে, বৃষ্টির ফোঁটায় বুকের কোণে জেগে উঠা
                         
                            রক্তের সমুজ্জ্বল অপার স্বপ্নের গভীরে প্রোজ্জ্বল নিবিড়তা স্থির
                            শব্দহীন নদীর ঢেউয়ের সাথে চৈতন্যের বিহ্বল নির্জন মর্মরে;
                            চাঁদের স্থির আলোয় অবিচল মিশে যাওয়া নীলিমায়, অবক্ষয়,
                            কৃষ্ণপক্ষ আর পূর্ণিমায় লাবণ্য ঝরা সরোবরে ডুবে গেল অমল
                            পুণ্যময় জলে তার সকল সৌন্দর্য অপার পার্থিবের ভিন্নরূপে,
                            রক্তিম আভাসে তারা আমাকে দিয়ে গেল স্বপ্নিল স্পর্শময় দেহ
                           
                            ঠোঁট আর কালো চুলের গ’লে পড়া আমার কোমলময় শরীর
                            মাঘ আর ফাল্গুনের মধ্যেদুপুরে ঝ’রে পড়া আমার মধুময়
                            সুধার কথা, যাকে দু’চোখের মধ্যে গেঁথে রাখি, গ’লে পড়া
                            আঁখিতাঁরার মতো জ’মে থাকা করুণ অশ্রুমালার সন্ধ্যার
                            বাতাসে, রক্তাক্ত হৃদয়ের গভীরে যারা লুকিয়ে ছিল
                            তাদের শাদা হাত প’ড়ে রইলো আমার বুকের গভীরে;
                                                       
                            রৌদ্রময় নীলিমার শান্ত বাতাসে সুবর্ণ উজ্জ্বলের প্রবাহিত ধারায়   
                            পরিচ্ছন্ন সমতলে বিলুপ্ত জলের বিস্তীর্ণ শীতল হিল্লোলে কৃষ্ণপক্ষ
                            দীপ্তির উদ্ভাসে লাবণ্য ঝ’রে যায় স্নায়ুর ঐন্দ্রজালিক বিষণ্ণতায়,  
                          
                            আমার ভেঙে পড়া নীল কণ্ঠে, টলোমলো জলের প্রবাহিত ধারায়,
                            পৃথিবীর ছায়ায় তাদের আমি ক’রে তুলি আত্মার পরম আত্মীয়,
                            শিশিরের ভালোবাসায় যারা ছুঁয়ে যায় মুগ্ধ করা শোকার্ত বাণী;    
                            আমার মায়াবী কল্পনায় ছুঁয়ে যায় মর্মমূলের জ্যোতির্ময় রুপালী
                            স্বর্গছায়া, কঠিন ধূসরদিনে শুভ্রমেঘমালায় শূন্য থেকে শব্দহীন
                            ঊর্ধ্বমুখ আমার গলিত তুষারে নেমে আসে প্রবাহিত নদী;
                         
                            অনিশ্চিত শ্রাবণধারা অন্তরালে জ’মে থাকে বিষ তারই অন্তরে
                            মুহূর্তে লুপ্ত হ’য়ে যায় ম্লান সবুজের বিশাল বাতাসে হারানো সুরে;  
                            আকাশ আর নক্ষত্র বাধা পড়ে আমার নিঃসঙ্গতায়; আবর্তিত ভাবনায়
                            আশ্চর্য, অনন্ত শূন্যতা, আমার নির্বাক পল্লবের হিমে, প্রজ্ঞাময় ধ্যানে
                            সমুদ্রের সমতলে জলরাশির বিকীর্ণ তরঙ্গের পর তরঙ্গের বুকে রইলো
                            প্রতিভা উদ্যম আর সংঘাতময় প্রতীক্ষা বিচূর্ণ পরিত্যক্তময় বিস্তীর্ণ ভূমিতে;
                     
                            বিন্দুতে মিশে আসে নিঃসঙ্গ অনুশোচনা ব্যর্থ ভাবনার
                            শিউরে উঠা কল্পকাহিনী আবৃত ধ্বসে পড়া রাত্রি, 
                            অস্পষ্ট আঁধারে নেমে আসে উত্তরের করুণ হাওয়া
                            মায়াবী নদী ব’য়ে যায় মুহূর্তেই রূপসীর প্রবাহিত বাহুতে
                            নির্বোধ ভাবনার অশ্রুর করুণ প্রান্তের আবর্তনে;
                            দিকচিহ্নহীন নদী সরোবরে আমার শরীর ধুয়ে যায়
                            অলৌকিক জলে, অবলুপ্ত বিমর্ষ ক্লান্তির নীল জলে
                            স্মৃতি খেলা ক’রে নির্মম পবিত্রতায়; কেঁপে কেঁপে
                            উঠে ভেঙে পড়া চন্দ্রালোকের নীল জ্যোৎস্নার অপার
                            সন্ধ্যায়; নির্জন সৌরভে ভেসে উঠে গাঢ় অর্থময় গভীর
                            শব্দের ঝংকারে শাশ্বত ঝ’রে পড়া নিসর্গের নির্জনে,
                            পবিত্র নগরী থেকে বেড়িয়ে পড়া নিবিড় বিচ্যুত সম্পর্কে
                            রক্তহিমে তারা বেঁচে আছে আমার হৃদপিণ্ডের নিবিষ্ট মৌনে
                            শূন্যতার জলতরঙ্গের নীল মাটিতে, তরঙ্গরাশির নির্ঝর
                            স্বপ্নজলে উষ্ণতাপের সঙ্গীতের আপন সোনালী অশ্রুজলে;  
                            আমি সর্বদা তার একান্তই অনুগামী স্বাধীন বুকের প্রান্তে।





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধ সংগ্রহ

সুধীন্দ্রনাথ , সাতটি কাব্যগ্রন্থের মতো সাতটি প্রবন্ধের গ্রন্থ লিখলে খারাপ হতো না , বেশ ভালোই হতো । সুধীন্দ্রনাথের প্রবন্ধগুলো হালকা মানের নয় , যদিও তাঁর কোন রচনাই হালকা নয় । সাহিত্যে বিচারে তা অনেক উঁচুমানের । তার উপর ভাষার ব্যাপারটি তো রয়েছেই । সুধীন্দ্রনাথ মাত্র দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন । গ্রন্থ দুটো ‘ স্বগত ’ ( ১৩৪৫ ঃ ১৯৩৮ ), অপরটি ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’ ( ১৩৬৪ : ১৯৫৭ ) । ‘ স্বগত ’- তে রয়েছে ষোলটি প্রবন্ধ । গ্রন্থ দুটি তিনি রচনা করেছেন দু ’ ভাগে । লরেন্স বা এলিয়ট এর প্রবন্ধ যেমন পাওয়া যাবে না ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’- এ ; তেমনি রবীন্দ্র সম্পর্কিত প্রবন্ধ নেওয়া হয়নি ‘ স্বগত ’- এ । প্রকাশ কাল অনুযায়ী ‘ স্বগত ’- এর প্রবন্ধসমূহ : ‘ কাব্যের মুক্তি ’ ( ১৯৩০ ); ‘ ধ্রুপদ পদ - খেয়াল ’ ( ১৯৩২ ), ‘ ফরাসীর হাদ্য পরিবর্তন ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লিটনস্ট্রেচি ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লরেন্স ও ভার্জনিয়া উল্ফ্ ’ ( ১৯৩২ ), ‘ উপন্যাস তত্ত্ব ও তথ্য ’ ( ১৯৩৩ ), ‘ উইলিয়ম ফকনর ’ ( ১৯৩৪ ), ‘ ঐতিহ্য ও টি , এস , এলিয়ট ’ ( ১৯৩৪ ), ...