সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ মধুমতী



নদী ব’য়ে যায়, সবুজ শস্যের বুকে, বাঙলার মাটিতে আমার স্বপ্নের গভীরে।
জলের চ্ছল চ্ছল শব্দে পলিমাটি ভেদ ক’রে নীরবে ব’য়ে যায় স্মৃতির আঙিনায়, 
ঢেউয়ের বুকে আমি ভেসে যাই, হারিয়ে যায় তার গতিপ্রগতিতে গাঢ় অন্ধকারে;
জল ঢেউ আর আমার প্রবাহিত নৌকা ছুটে যায় গলিত স্বপ্নের নিজস্ব ঠিকানায়,
আষাঢ়ের বৃষ্টির ফোঁটায় ভ’রে যায় আমার নৌকার মসৃণ গলুই, শান্ত অপরূপ
আলোয় কেঁপে উঠে শরীর, মায়াবী নদীর সোনালী জলে স্তব্ধতার সুর বাজে
শ্রাবণধারায়, প্রাণের সব সুর খেলা ক’রে, গভীর রুপালী জ্যোতির্ময় আলোয়,
মধুমতীর নিবিড় বাতাস আমাকে নিঃসঙ্গ ক’রে তোলে, শিশিরের জলে লুপ্ত
হ’য়ে যায় আমার সমস্ত স্বপ্ন, আঁখিতারায় গ’লে গ’লে ঝ’রে যায় সবুজ পল্লব,
নিসর্গের শাদা হিমে। শূন্যতার বুকে উদ্ভাসিত আলোয় বিহ্বল ক’রে ঝলমলে
নিথর স্তব্ধতার সুর। তোমার খরস্রোতা বুক দিয়ে ভেসে যায় বজরা, পানসি,
টাবুরিয়া, ডিঙ্গি সহ আরো কতো না নৌকা। বাঁকে-বাঁকে খেলা ক’রে জলের
প্রবাহিতধারা। গভীর রুপালী নদী, বেঁচে থাকে আঁখিকোণে শিশিরের ছোঁয়ায়,
সকাল-সন্ধ্যায় ফিরে যাই রাশি রাশি স্বপ্ন নিয়ে উজ্জ্বল আভায়, ঢেউয়ের পর
ঢেউ এসে আমাকে নিয়ে যায় গভীর শূন্যতায়, শিহরণ জাগায় আমার নিথর
দেহে। তোমার শোভা-সৌন্দর্যময় রূপ ব’য়ে যায় কিংবদন্তী পুরুষের রক্তে,
হৃদপিণ্ডে আর শব্দহীন স্মৃতিতে। নক্ষত্রের হারানো শিশিরের ফোঁটায় তোমার
আকাশে তারা বাঁধে অম্লান সুর। নিঃশব্দে হৃদয়ের গভীরে আলো-আঁধারে
মিশে যায় মায়াবী নদী। হারানো স্নিগ্ধময় আলোয় সব নদী মিশে যায় চন্দ্র-
মল্লিকার বনে। তোমার জল আর বাতাস মিশে থাকে রক্তিম নিস্তব্ধাতায়,
বহমান ধারার শব্দের সুর আমার হৃদয়ের উজ্জ্বল আভা; প্রজ্জলিত মৌনে
ঢেউয়ের বুকে নিঃশব্দে ছুটে চলে আমার আঁখিতারায় নিঃসঙ্গ মায়াবী নদী 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধ সংগ্রহ

সুধীন্দ্রনাথ , সাতটি কাব্যগ্রন্থের মতো সাতটি প্রবন্ধের গ্রন্থ লিখলে খারাপ হতো না , বেশ ভালোই হতো । সুধীন্দ্রনাথের প্রবন্ধগুলো হালকা মানের নয় , যদিও তাঁর কোন রচনাই হালকা নয় । সাহিত্যে বিচারে তা অনেক উঁচুমানের । তার উপর ভাষার ব্যাপারটি তো রয়েছেই । সুধীন্দ্রনাথ মাত্র দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন । গ্রন্থ দুটো ‘ স্বগত ’ ( ১৩৪৫ ঃ ১৯৩৮ ), অপরটি ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’ ( ১৩৬৪ : ১৯৫৭ ) । ‘ স্বগত ’- তে রয়েছে ষোলটি প্রবন্ধ । গ্রন্থ দুটি তিনি রচনা করেছেন দু ’ ভাগে । লরেন্স বা এলিয়ট এর প্রবন্ধ যেমন পাওয়া যাবে না ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’- এ ; তেমনি রবীন্দ্র সম্পর্কিত প্রবন্ধ নেওয়া হয়নি ‘ স্বগত ’- এ । প্রকাশ কাল অনুযায়ী ‘ স্বগত ’- এর প্রবন্ধসমূহ : ‘ কাব্যের মুক্তি ’ ( ১৯৩০ ); ‘ ধ্রুপদ পদ - খেয়াল ’ ( ১৯৩২ ), ‘ ফরাসীর হাদ্য পরিবর্তন ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লিটনস্ট্রেচি ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লরেন্স ও ভার্জনিয়া উল্ফ্ ’ ( ১৯৩২ ), ‘ উপন্যাস তত্ত্ব ও তথ্য ’ ( ১৯৩৩ ), ‘ উইলিয়ম ফকনর ’ ( ১৯৩৪ ), ‘ ঐতিহ্য ও টি , এস , এলিয়ট ’ ( ১৯৩৪ ), ...