সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ লেটার বক্স


হৃদয়ের সব সম্পর্ক আজ বৈদ্যুতিক, মিশে না কোন সম্পর্ক আর মনের গভীরে;
                              কিছুই আর অপেক্ষায় থাকে না প্রাপ্তির অপেক্ষায় দিনের শেষে-  
                             ক্ষণে-ক্ষণে যা মিলে যায় মুহূর্তে, অপূর্ণতা নেই কিছুতেই;
                     শনি-সোম আর বুধের অপেক্ষায় চেয়ে থাকে না অমলিন দু’চোখ
                  আমার মরচে পড়া লেটার বক্স শূন্য পড়ে রয় সুরম্য অট্টালিকার কোণে কেঁপে-কেঁপে,  
               কেউ আর উজার ক’রে বলে না তাঁর সকল কথা অন্যের সাথে স্নিগ্ধ সৌরভে,  
                     মেঘ ও জ্যোৎস্নার সাথে উ’ড়ে গেছে আমাদের সকল কথা হৃদয়ের গভীর থেকে; 
                              হৃদয়ের গাঢ় দুঃখ আজ রূপান্তরিত হ’য়ে উ’ঠে পারদের হিমে,
                                            নীল সবুজে মিশে থাকে রক্তের সম্পর্ক নিবিড় বু’কে;
                             অলৌকিক ভাবনা জমে স্নিগ্ধ আবেগে, ছুঁয়ে যাওয়া মৌনে,
                                        পলি মাটির বু’কে ঝ’রে পড়ে নীল বৃষ্টিপাত ক্ষণে-ক্ষণে;
                             তীব্র আবেগ মিশে যায় হৃদপিণ্ডের সাথে লাল-নীল আলোর বিচ্ছুরণে-  
                  ভেঙে পড়া মনে আর কোনো কথা জমে না অতীত সম্পর্কের মাধুর্যের কোমল সুরে;   
                                 সবুজ বাতাসে দুলতে থাকে সেই লেটার বক্স সকাল আর সন্ধ্যায়
                  যেথায় একদা জমা হতো সকল রাজ্যের দশদিগন্ত থেকে আসা পদাবলী
                     প্রেমিকার স্পর্শে কেঁপে উঠা আঙুলে, বুকের গভীর থেকে
সংগোপনে রেখে দিই বু’কের জমা ব্যথা সেই নীল বক্সে অতি আপন মনে;   
                  দিন আর রাতের ব্যবধানে যেখানে জমে উ’ঠে অনেক অজানা কাহিনি
                            হৃদয় ছেড়ার গল্পগাঁথা উত্তর আর পশ্চিম কোণের,
ঝ’রে পড়া চাঁদ আর মধুমতীর পালতোলা নাউয়ের চিত্র গেঁথে রয় লিপির বিন্যাসে কোমল পাতায়, শিশির আর শাদা মেঘের সাথে মিশে যাই সেই সব সময়ের স্রোতে,  
                                            গত হয়েছে যা কয়েক দশক ভাবনার আড়ালে,
                  অশ্রুবিন্দু আজ চলে গেছে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল ছেড়ে,
                তার পদচিহ্ন শুধুই স্মৃতি আমার কারুকার্য হারানো বুকের গভীরে-
                           নিঃশব্দে জমে না কোন কথা মনের আড়ালে                
                  কেঁপে উঠা দিন আর রাত্রির নিদ্রাহীন দুপুরে; সংক্ষিপ্ত আজ সব কিছু বু’কের কোণে,
              কিছুই পারে না জমাতে হিমপল্লবে পরস্পরের কেঁপে উঠা ঠোঁটে,
সব’ই ফুরিয়ে গেছে বেহালার হৃদয় কাঁপানো শ্রাবণ জলের সুরে;   
                                     জ্যোতির্ময় ভাবনায় নিরন্তর গোপন সুর দুস্প্রাপ্ত প্রেমে,
                       আমার হারানো আঁখিকোণে প্রাত্যহিক সম্পর্ক মুছে যায় নীল খামে,
                              উদাসীন জড়তায় জীবনের অক্ষরে, পরিপূর্ণতায় ভ’রে উঠুক নিঃসঙ্গ,
                                       একাকী প’ড়ে থাকা শূন্যেময় তোমার নামের শব্দে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বিষ্ণু দে : ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’ থেকে ‘চোরাবালি’

বিষ্ণু দে , তিরিশি কবিদের অন্যতম । কবিতা রচনাই যাঁর কাছে এক এবং অদ্বিতীয় হ ’ য়ে দেখা দেয় । কাব্যে সংখ্যার দিক থেকে অতিক্রম করেছেন সতীর্থদের । বিষ্ণু দে , যাঁর কবিতা রচনার সূচনা পর্বটিও শুরু হয় খুব দ্রুততম সময়ে । কবিতা সৃষ্টির পর্বটি অব্যাহত রেখেছেন সর্বদা । পঁচিশটি কবিতা নিয়ে ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এ নিজেকে প্রকাশ করেন স্ব - মহিমায় । যে কবিতাগুলা বিস্ময়বিমুগ্ধ ক ’ রে অন্যেদেরকেও । ওই কবিতা শুধু বিষ্ণু দে ’ কে নয় , বরং নতুনতর হ ’ য়ে দেখা দেয় বাঙলা কবিতা । বিষ্ণু দে ’ র ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’ রবীন্দ্রনাথকে পড়তে হয়েছিল দু ’ বার । ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এর কবিতাগুলির রচনাকালের ব্যাপ্তি দেওয়া আছে ( ১৯২৮ - ১৯৩৩ ) সময়ের মধ্যে , এবং গ্রন্থকারে প্রকাশ পায় ওই একই বছরে অর্থাৎ , ১৯৩৩ - এ । কিন্তু রচনাকালের ব্যাপ্তি ১৯২৮ দেওয়া থাকলেও প্রকৃত পক্ষে এ সকল কবিতাগুলো রচনা পর্ব শুরু হয় আরো দু ’ বছর পূর্বে অর্থাৎ , ১৯২৬ - এ । যখন কবি হিশেবে বিষ্ণু দে একেবারেই নতুন এবং নবীন । ১৯৩৩ - এ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...