সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ মন ভালো নেই


  আজ মন ভালো নেই, রবিরারে দিন ক্লান্ত মাখা, মিলিত ভাবনায়-   
  ফিরে-ফিরে আকাশের দিকে তাকাই; বাসের শব্দ, মানুষের কোলাহল,
  আর নিত্য দিনের ফেরিওয়ালার চীৎকার মিশে থাকে দিনের প্রতিমুহূর্তে,
  আবার ফিরে আসি লুপ্ত স্মৃতিতে, যেখানে বাসা বাধে বিভিন্ন রঙের স্বপ্ন,
  শাদা রঙের অট্টালিকায় দাঁড়িয়ে থাকে কিছু অচেনা তরুণী, আমার মতো
  নিঃসঙ্গ ও একাকী, আপন শরীরটা তারা দুলিয়ে দেয় রেলিঙে ভর ক’রে,
  আকাশের সেই চিলটা, সারাদিন উ’ড়ে উ’ড়ে ক্লান্ত হ’য়ে ফিরে আসে
  দীর্ঘ মাঠের পাশে, একটু উষ্ণতার জন্য সে তাকিয়ে থাকে আমার
  দৃষ্টির দিকে, ভাঙা স্বপ্নের মাঝে তাকে মিলিয়ে নিই সবুজ হৃদয়ের সাথে-
  রাত্রি গভীর হয়, চাঁদ জেগে উ’ঠে, অচেনা কণ্ঠস্বর ভেসে আসে কানে,

  হলুদ মেঘে ভর ক’রে ছায়া মেখে দেয় আমার উত্তরতিরিশ যৌবনে-
  ভেঙে প’ড়ে সব স্থাপত্য, নগরীর প্রধান সড়কে জড় হয় কিছু নির্মম চোখ
  কয়েক মুহূর্তে, তাদের কী আমি চিনি ? আপনজন-বন্ধু-আত্মার আত্মীয় ?
  কিছুই জানা নেই আমার ! তীব্রবেগে পথ ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ি নিজস্ব গন্তব্যেয় 

  ঝরা চাঁপা ফুলের গন্ধ মেখে থাকে আমার স্নিগ্ধ শরীরে, জ্যোতির্ময় আভাসে-
  গভীর কথা বলা হয় না সেই অচেনা মানুষটির সাথে, যে পবিত্র আর
  নিঃস্বার্থ ভাবে আমাকে, ‘শব্দহীন মানুষ’ বলে সম্বোধন ক’রে মাঝে-মাঝে,    

  বেঁছে-বেঁছে শব্দ নিয়ে কবিতা লেখা হয় না অনেকদিন, পুরনো পাণ্ডুলিপিতে
  হাত পড়ে না কয়েক মাস, শব্দগুলো কী বেঁচে আছে ? না-হলদে রঙে 
  হারিয়ে গেছে শাদা মসৃণ পাতা থেকে, মায়াবী টেবিল, আমার প্রিয় কবিতার
  বই, পেন্সিলের সরল রেখার দাগগুলো মিশে গেছে শাদা মেঘের মত-
  সেই প্রিয় পংক্তিগুলো থেকে, অন্ততপক্ষে দু’দশক বয়স হয়েছে যার; 
  মসৃণ আঙুলের ছোঁয়ায় ব্যস্ত ছিলাম বিষণ্ণ সন্ধ্যায় ! পার্থিব সৌন্দর্যে    

  আশ্বিনের বাতাসে উড়ে গেছে আমার রচিত সমস্ত সংগীত দীপ্ত পথে;
  একবিন্দু সৌন্দর্য মেখে, উষ্ণতার জন্য অপেক্ষা করতাম চৈত্রের পূর্ণিমায়-
  সন্ধ্যার বিবর্ণ ছায়ায় হারিয়ে যায়, মিথ্যা প্রতিশ্রুতির অনেক কিছু ইঙ্গিতে,
  কিছু স্মৃতি, সম্পর্ক, হাওয়ার রাত, বৃষ্টির শব্দ, জলের গভীর ছায়া মিশে
  থাকে ভাবনার বু’কে, জ্যোৎস্না আর শিশিরে বিস্ময় জাগায় সমুজ্জ্বল
  কথামালার বিস্ময়কর সীমাহীন মর্মে, নিস্তব্ধতায় হারিয়ে ফেলি নিজেকে,
  মৌলিক ভাবনার চিত্তে; চন্দ্রমল্লিকার বনে অলৌকিক নীল সমুদ্রের ঢেউয়ে       

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধ সংগ্রহ

সুধীন্দ্রনাথ , সাতটি কাব্যগ্রন্থের মতো সাতটি প্রবন্ধের গ্রন্থ লিখলে খারাপ হতো না , বেশ ভালোই হতো । সুধীন্দ্রনাথের প্রবন্ধগুলো হালকা মানের নয় , যদিও তাঁর কোন রচনাই হালকা নয় । সাহিত্যে বিচারে তা অনেক উঁচুমানের । তার উপর ভাষার ব্যাপারটি তো রয়েছেই । সুধীন্দ্রনাথ মাত্র দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন । গ্রন্থ দুটো ‘ স্বগত ’ ( ১৩৪৫ ঃ ১৯৩৮ ), অপরটি ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’ ( ১৩৬৪ : ১৯৫৭ ) । ‘ স্বগত ’- তে রয়েছে ষোলটি প্রবন্ধ । গ্রন্থ দুটি তিনি রচনা করেছেন দু ’ ভাগে । লরেন্স বা এলিয়ট এর প্রবন্ধ যেমন পাওয়া যাবে না ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’- এ ; তেমনি রবীন্দ্র সম্পর্কিত প্রবন্ধ নেওয়া হয়নি ‘ স্বগত ’- এ । প্রকাশ কাল অনুযায়ী ‘ স্বগত ’- এর প্রবন্ধসমূহ : ‘ কাব্যের মুক্তি ’ ( ১৯৩০ ); ‘ ধ্রুপদ পদ - খেয়াল ’ ( ১৯৩২ ), ‘ ফরাসীর হাদ্য পরিবর্তন ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লিটনস্ট্রেচি ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লরেন্স ও ভার্জনিয়া উল্ফ্ ’ ( ১৯৩২ ), ‘ উপন্যাস তত্ত্ব ও তথ্য ’ ( ১৯৩৩ ), ‘ উইলিয়ম ফকনর ’ ( ১৯৩৪ ), ‘ ঐতিহ্য ও টি , এস , এলিয়ট ’ ( ১৯৩৪ ), ...