সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ হাওয়ার রাত


 চৈত্রের বাতাসে কেঁপে-কেঁপে ধরা দেয় আমার মসৃণ দেহে, জীবনের রঙে,
  সে বড় হাওয়ার রাত, কল্পনায় বেজে উ’ঠে পুরাতন ঢেউ দিগন্তের শেষে-
  মাটির দেয়ালে লেপে দিই কঠিন চিত্র, শিল্পীর তুলিতে, হারানো গল্প বলি
  মনের শূন্য বুক থেকে, ফিরে আয় আমার হারানো স্মৃতি- যা নিভে গেছে
  কয়েক দশক পূর্বে বুকের গভীর থেকে, অথচ অনেক আবর্জনা জ’মে গেছে
  কোমল আর শুভ্র বেষ্টিত সবুজ অরণ্যেয়; আমার দীর্ঘশ্বাস, তাদের খুঁজে ফিরি
  জ্যোৎস্না আর রাশি-রাশি রৌদ্রজ্জ্বল দিনের শেষে, কোমল বাহুতে ধরা দাও;
  স্তব্ধ প্রতীক্ষার অবসান ঘুচে যাক অগ্নিগিরির উত্তাপে পার্থিব জ্যোতির্ময়ে,
  আশ্রয় পাক আমার অলৌকিক হৃদয়ের নক্ষত্রে, শ্রাবণের অমল শিশিরে-  

   
  আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রাখ, নিশ্চয়তা দাও সকল সৌন্দর্যের  
                 শব্দ গেঁথে থাকবে অতল বু’কে; শিশিরের মতো শব্দ ক’রে ঝ’রে প’ড়ে
                 আমার গাঢ় অশ্রুকণা, স্লিগ্ধ চোখের কোণে ঘুরে ফিরে আলো ও আঁধারে,
                 হাওয়ার রাতে ধরা দেয় শাদা হাত, শ্রাবণের সন্ধ্যায়, আমি জ্বেলে দিই
                 উজ্জ্বল আলো আমার চতুর্দিকে; সোনালি হৃদয়ে, নক্ষত্রের সুপ্ত প্রান্তরে,

                 শালবন আর দেবদারুর ছায়া একাকার হ’য়ে মিশে যায় বিবর্ণ সংলাপে,  
                 আমার বাগানে গন্ধ ছড়ায় চন্দ্রমল্লিকা, হাসনাহেনা, কামিনী আর গন্ধরাজ
                 হাওয়ার রাত, তুমি ফিরে আসো হালকা ছায়া মেখে ঝিরঝিরে বাতাসে
                 আমার বিষণ্ণতা আর ছুঁয়ে যাওয়া গোলাপ পাপড়িতে, দীপাবলির আলোয়,  

                 পলিমাটির বু’কে জমে উ’ঠে সবুজ ফসল, উজ্জ্বল-সোনালি কারুকার্যময়  
                 ভালোবাসার হাতে, বিস্ময়কর আমার আশ্চর্যজনক সৌন্দর্যের লীলাভূমি,
                 শোভাময় তার রচিত দিনলিপি, নিসর্গের ভাবনার স্বপ্নজলে, দিগন্তপ্রলুব্ধ  
                 অলৌকিক বাতাসে, শিশির ফোঁটায় ভ’রে উ’ঠে আমার হলদে সর্ষেক্ষেত,     
                 হাওয়ার রাত, তুমি ফিরে আসো চাঁদজ্বলা আলো নিয়ে কিশোরের বুকে।   




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বিষ্ণু দে : ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’ থেকে ‘চোরাবালি’

বিষ্ণু দে , তিরিশি কবিদের অন্যতম । কবিতা রচনাই যাঁর কাছে এক এবং অদ্বিতীয় হ ’ য়ে দেখা দেয় । কাব্যে সংখ্যার দিক থেকে অতিক্রম করেছেন সতীর্থদের । বিষ্ণু দে , যাঁর কবিতা রচনার সূচনা পর্বটিও শুরু হয় খুব দ্রুততম সময়ে । কবিতা সৃষ্টির পর্বটি অব্যাহত রেখেছেন সর্বদা । পঁচিশটি কবিতা নিয়ে ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এ নিজেকে প্রকাশ করেন স্ব - মহিমায় । যে কবিতাগুলা বিস্ময়বিমুগ্ধ ক ’ রে অন্যেদেরকেও । ওই কবিতা শুধু বিষ্ণু দে ’ কে নয় , বরং নতুনতর হ ’ য়ে দেখা দেয় বাঙলা কবিতা । বিষ্ণু দে ’ র ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’ রবীন্দ্রনাথকে পড়তে হয়েছিল দু ’ বার । ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এর কবিতাগুলির রচনাকালের ব্যাপ্তি দেওয়া আছে ( ১৯২৮ - ১৯৩৩ ) সময়ের মধ্যে , এবং গ্রন্থকারে প্রকাশ পায় ওই একই বছরে অর্থাৎ , ১৯৩৩ - এ । কিন্তু রচনাকালের ব্যাপ্তি ১৯২৮ দেওয়া থাকলেও প্রকৃত পক্ষে এ সকল কবিতাগুলো রচনা পর্ব শুরু হয় আরো দু ’ বছর পূর্বে অর্থাৎ , ১৯২৬ - এ । যখন কবি হিশেবে বিষ্ণু দে একেবারেই নতুন এবং নবীন । ১৯৩৩ - এ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...