সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ অনেক দিন তাঁদেরকে দেখি না

 

অনেক দিন তাঁদেরকে দেখি না, যাঁদেরকে চোখের কোণে লুকিয়ে রেখেছি

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে; অশ্রুকোণে তারা লুকিয়ে থাকে গভীর স্মৃতির অন্তরালে

আমার নিরর্থক দিনগুলি বেড়ে উ’ঠে দুঃস্বপ্নে, অতীত স্মৃতি খেলা ক’রে ভাবনার শরীরে

নিঃশব্দে, জলের উপর দীর্ঘ ঢেউ ফেলে-ফেলে তারাও হারিয়ে যায় আমার শূন্য বুক থেকে;

টলোমলো চোখের ভেতর নেমে আসে কোনো এক বিষাদের চিহ্ন কয়েক মুহূর্তে দীর্ঘ হ’য়ে

শুভ্র জ্যোৎস্নার সৌন্দর্যও যেন হারিয়ে যায় নীল বুক থেকে মাঘের কোমল বাতাসে তীব্রভাবে

                                     আবেগের সমস্ত কিছু যেন ধুয়ে-মুছে গেছে হৃদয়ের সজীব কোণ থেকে মায়াবী শূন্যলোকে

 

প্রোজ্জ্বলিত দিনের শেষে নেমে আসে গাঢ় রাত্রি নিভৃত বু’কে, শাশ্বত ভাবনার মহাবিশ্বে

একাকী চাঁদও ভুলে যায় আলো-আঁধারের সমস্ত স্মৃতির কথা বিবর্ণ ধারায় নিঃশব্দে;

সমস্ত দুঃস্বপ্ন যেন জড়ো হয় আমার চতুর্দিকে, হারানো স্মৃতির ফেলে আসা উজ্জ্বল নক্ষত্রে,

ফিরে তাকাই সৌন্দর্যময় সেই দিনগুলির দিকে, আশ্চর্য ঠোঁটে কেঁপে উ’ঠে শূন্যতার ব্যবচ্ছেদ

স্মৃতিকাতর আমার হারানো সুর, তাৎপর্যময় হ’য়ে উঠেনি কোন কিছুই সুনিপুণ আঙুলের ছোঁয়ায়

শব্দহীন নিরিবিলি জীবনে সেই স্মৃতি ফিরে আসে আশ্বিনের ভোরের মসৃণ কোমল আলোয়;  

 

স্মৃতির স্পর্শ রেখে যাই বিস্ময়ে প্রাগৈতিহাসিক সমতলে, ঐশ্বর্যময় জ্যোতির্ময়ের দিগন্তে

আমি ছুঁয়ে যাই তাঁদের মৃদু স্পর্শ স্বরহীন বিচিত্র স্নিগ্ধময় করতলে, ইন্দ্রিয়ের পূর্ণময় নির্মলে

কালের ধূসর সন্ধ্যায় তাঁদের হারিয়ে ফেলি বিধ্বস্ত নীলিমায়, বাহুর বন্ধন ভেঙে দীর্ঘশ্বাসে

রাত্রি নামে গাঢ় হ’য়ে আমার রক্তিম আভাসে, নিবিড় টানে আর ফিরে আসি না আপন গৃহে

শূন্যতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকি মৌলিক চিত্তে, নিসর্গের ব’য়ে যাওয়া সবুজ শিশিরে প’ড়ে

আবেগের সমস্ত কিছু শিলার স্তূপে মিশে যায় হৃদয়ের কোণ থেকে শুভ্রতার ছায়া মেখে  

ঐন্দ্রজালিক কণ্ঠ আর পূর্ণিমার আলো ছড়ায় না আমার ভেঙে পড়া সৌন্দর্যময় চোখ থেকে।

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধ সংগ্রহ

সুধীন্দ্রনাথ , সাতটি কাব্যগ্রন্থের মতো সাতটি প্রবন্ধের গ্রন্থ লিখলে খারাপ হতো না , বেশ ভালোই হতো । সুধীন্দ্রনাথের প্রবন্ধগুলো হালকা মানের নয় , যদিও তাঁর কোন রচনাই হালকা নয় । সাহিত্যে বিচারে তা অনেক উঁচুমানের । তার উপর ভাষার ব্যাপারটি তো রয়েছেই । সুধীন্দ্রনাথ মাত্র দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন । গ্রন্থ দুটো ‘ স্বগত ’ ( ১৩৪৫ ঃ ১৯৩৮ ), অপরটি ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’ ( ১৩৬৪ : ১৯৫৭ ) । ‘ স্বগত ’- তে রয়েছে ষোলটি প্রবন্ধ । গ্রন্থ দুটি তিনি রচনা করেছেন দু ’ ভাগে । লরেন্স বা এলিয়ট এর প্রবন্ধ যেমন পাওয়া যাবে না ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’- এ ; তেমনি রবীন্দ্র সম্পর্কিত প্রবন্ধ নেওয়া হয়নি ‘ স্বগত ’- এ । প্রকাশ কাল অনুযায়ী ‘ স্বগত ’- এর প্রবন্ধসমূহ : ‘ কাব্যের মুক্তি ’ ( ১৯৩০ ); ‘ ধ্রুপদ পদ - খেয়াল ’ ( ১৯৩২ ), ‘ ফরাসীর হাদ্য পরিবর্তন ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লিটনস্ট্রেচি ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লরেন্স ও ভার্জনিয়া উল্ফ্ ’ ( ১৯৩২ ), ‘ উপন্যাস তত্ত্ব ও তথ্য ’ ( ১৯৩৩ ), ‘ উইলিয়ম ফকনর ’ ( ১৯৩৪ ), ‘ ঐতিহ্য ও টি , এস , এলিয়ট ’ ( ১৯৩৪ ), ...