সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

মুহূর্তের ভালোবাসা

                     পৌষের কোমল সন্ধ্যায়, মুহূর্তে হারিয়ে যায় সমস্ত শিথিল ভাবনাগুলো                    আমার মন থেকে, অনুভূতির কোষগুলো ছড়িয়ে প’ড়ে রক্তকণিকার গহ্বরে                    আমি বেঁচে থাকি উজ্জ্বল আলো গায়ে মেখে; বিহব্বল চেতনায় যারা একে                  দিয়ে যায় সুতীব্র কামনা শিশিরের অমল ছোঁয়ায়; চাঁদ আর জ্যোৎস্নার                  আলোয় খেলা ক’রে ইন্দ্রিয়ের অজস্র রূপ, সৌন্দর্যের অমলতার শিশিরে,                    উষ্ণ কোমল সুখ ফিরে আসে আবর্জনাময় বেড়ে উঠা স্বপ্নের গভীরে-   ...

জীবনানন্দ দাশঃ উজ্জ্বল আলোয় স্মৃতি-বিস্মৃতি

জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাংলা কবি। তাঁকে বাংলা ভাষার ‘ শুদ্ধতম ’ কবি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে এসে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন, এবং ১৯৯৯ সালে যখন তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল তত দিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। তিরিশে আধুনিক কবিদের মধ্যে ভাব ও ভাষার সার্থক ব্যবহারের জন্য, অনেকের কাছে তিনি-ই ঐ দশকের শ্রেষ্ঠ কবি বলে গণ্য হোন। রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক বাংলা সাহিত্যের পুরোহিতপ্রতিম ব্যক্তিত্ব বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪) তাঁকে ‘নির্জনতম কবি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি শুধু আধুনিক বাংলা কবিতার নয়; চৌদ্দশো বছরের বাংলা সাহিত্যের তথা কবিতার ইতিহাসেরও একজন অন্যতম কবি বলে বিবেচিত হোন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রণেতা শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯২-১৯৭০) ‘বাংলা সাহিত্যের বিকাশের ধারা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘জয়দেব-চণ্ডীদাস-বিদ্যাপতি-রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকার যে আধুনিক বাংলায়ও সম্পূর্ণ অপচিত হয় নাই, জীবনানন্দের কবিতা সেই আশ্...

প্রবন্ধঃ পত্রিকা সম্পাদনা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) ব্যাপক সাহিত্য রচনার মধ্যেও সাময়িক পত্র সম্পাদনার দায়িত্বটাও তিনি বহন করেছেন নিজ আগ্রহে। সংখ্যাগত দিক থেকে সেটা যে খুব কম হবে, তা কিন্তু বলা যাবে না। সেই সম্পাদনার ভারটা অনেকটাই প্রাসঙ্গিক হয়ে দেখা দেয় রবীন্দ্রনাথের জীবনে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে, সম্পাদনা নিয়ে অনেক বেশী চিন্তা-ভাবনা করেছেন। এর সুস্পষ্ট চিত্র দেখতে পাই তারই সম্পাদিত পত্রিকার দিকে চোখ দিলে। আমাদের চিন্তায় বিস্ময়কর হয়ে দেখা দেয়, তাঁর প্রতিভার এ-দিকটির দিকে চোখ দিলে। তাঁর সৃষ্টিশীলতাকে বিচিত্র পথে প্রবাহিত করার জন্য, এ-ধরনের সম্পাদনার কাজটি যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি, তা কিন্তু বলা যাবে না। রবীন্দ্রনাথ, একত্রে অনেকগুলো পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নিলেও খুব বেশী সময় ধরে কোথাও স্থায়ী ভাবে অবস্থান করেননি, বঙ্গদর্শন ব্যতীত। এ-ধরনের কাজের মানসিকতার চিত্র আমরা দেখতে পাই, জোড়াসাঁকোতে রবীন্দ্রনাথের বেঁড়ে উঠা বয়স থেকেই। জোড়াসাঁকো থেকে যখন কিশোরদের জন্য প্রকাশিত হচ্ছিল হাউস জার্নাল ও বালক, সেখানেও সুস্পষ্টভাবে না হলেও ছায়ার মতো কাজ করেছেন তিনি। স্পষ্টভাবে বলে রাখি যে, বালকে ’র সম্পাদক ছিলেন...

কয়েকটি স্মৃতি

                   রাত্রির গাঢ় অন্ধকারে নিজেকে হারিয়ে ফেলি কয়েক মুহূর্তে;                 ধূসর মেঘ থেকে কখন যে ঝ’রে পড়লো বৃষ্টির ফোঁটাগুলো নিঃশব্দে                                             ভাবনার জগত থেকে তাও জানি না-                 সমুদ্রের ঢেউগুলো ভেঙে পড়ছে লালমেঘের আড়ালে, দূষিত রক্তে মিশে আছে                  রাত্রির নিবিড়তা, তীব্র আর উজ্জ্বল হ’য়ে নক্ষত্রের আড়ালে;                 দিগন্ত বিস্...

বসন্তের হাওয়া উত্তরের সুর

                    বিস্মৃতির কণ্ঠে, হাওয়ার শব্দে কেঁপে উ’ঠে আমার নিস্তব্ধতার কোমল সুর,                   ভাবনার গভীর থেকে কৃষ্ণচূড়ার গাঢ়রঙে চাঁদও কেঁপে উ’ঠে কয়েক মুহূর্তে                   ভালোবাসার হলুদরঙে, ম্লান হ’য়ে জেগে রই শব্দহীন সবুজ শিশিরে;                   দিগন্তের শেষ সীমানায় রেখে যাই ব্যর্থ সুখ, আপন ব’লে মনের কোণে                   যাকে লুকিয়ে রেখেছি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধ’রে; আমি যেন                   বেঁচে থাকি স্বপ্নের গভীরে তাকে ভালোবেসে,          ...

রূপালি বৃষ্টির গান

  মাঝে মাঝে সন্ধ্যার আলোয় শুভ্র জ্যোৎস্না ছড়িয়ে প’ড়ে আমার বুক থেকে, কোনো ভালোবাসার সুতীব্র অভাবে; দুঃস্বপ্নের ভেতর তাকে আপন ক’রে  দিই উজ্জ্বল সৌন্দর্যে, নিবিড় অন্ধকারে গ’ড়ে ওঠে পৃথিবীর ব্যর্থ সম্পর্ক গভীর শূন্যতায়, মেঘের লাল-নীল দিগন্তে, শিশিরের ফোঁটায় ভ’রে যায় আমাদের সমস্ত পথ রাত্রির নিঃশব্দতায়, ঠাণ্ডা হাওয়ায় হিম হ’য়ে উ’ঠে আমার কোমল হৃদয়,   তোমার কঠিন আহ্বানে, হারিয়ে ফেলি রাশি-রাশি নীল স্বপ্ন রক্তিম মৌন ঠোঁটে, সাদা মেঘ ছড়িয়ে প’ড়ে দিনের ঝিলিমিলি রোদে, দিঘীর নীল জলে ভেসে উ’ঠ তোমার কঠিন মুখ কল্পনার দীর্ঘ ছায়ায়, সংগীতের সব সুর মুছে যায় নক্ষত্রের রাতে আমাদের গভীর ভালোবাসায়, আবার নিরর্থক মানুষের মতো প’ড়ে রই সবুজ ঘাসে তোমার চোখের ভেতর, নরম শরীরে মিশে যাই রক্তের অনুভবে, স্তব্ধতা খেলা ক’রে বিবর্ণময় শুভ্র কালো রাতে, আমি সাড়া শরীরে একে দিই প্রাজ্ঞতার কঠিন চিহ্ন যুগ-যুগান্তরে, পালতোলা নাউয়ের মতো ভেসে যাই ঢেউয়ের বাঁকে-বাঁকে জলের কঠিন শব্দে, সব সুর মিশে যায় শব্দহীন হৃদয়ে,         সোনালি বৃষ্টির মতো ঝ’রে প’ড়ে আমার সকল কষ্ট কয়েক মুহূর্তে নিবিড় আঁখ...

রবীন্দ্রনাথের বৌঠান কাদম্বরী দেবী

কুশারীবংশের জয়রাম ঠাকুরের কনিষ্ঠ সন্তান গোবিন্দরাম ঠাকুর। তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় খুলনার দক্ষিণডিহি গ্রামের নন্দরাম গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে রামপ্রিয়া দেবীর। গোবিন্দরামের মৃত্যুর পর; রামপ্রিয়া দেবী তাঁর বিষয়-সম্পত্তি গোবিন্দরামের ভাইদের কাছ থেকে আলাদা করে নেন আইনের আশ্রয়ের মাধ্যমে। রামপ্রিয়া দেবীর ভ্রাতুষ্পুত্র জগন্মোহনকে তিনি লালনপালন করতে শুরু করেন। রামপ্রিয়া দেবী, তাকে কলকাতার ‘হাড়কাটা’ এলাকায় নিজ উদ্যোগে একটি বাড়ী তৈরি করে দেন। তিনি জগন্মোহনকে বিয়ে দেন দ্বারকানাথ ঠাকুরের মামা কেনারাম রায়চৌধুরীর মেয়ে শিরোমণির সাথে। ঠাকুর পরিবারের সাথে রামপ্রিয়া দেবীর সম্পর্ক ছিল পূর্ব থেকেই। কুশারীবংশের পঞ্চানন ঠাকুর ছিলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরদেরও পূর্ব আদিপুরুষ। এই বিয়ের মাধ্যমে আবার যেন সম্পর্কের প্রাণ পেল। ভোজনরসিক, সুস্বাস্থ্যর অধিকারী জগন্মোহনের সঙ্গীতপ্রীতি ছিল অসাধারণ। সঙ্গীতের একজন যথার্থ সমজদার ব্যক্তি হিসেবে সেকালে তাঁর নাম ফুটে উঠেছিল চতুর্দিকে। জগন্মোহনের পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় রসিকলালের দুই মেয়ের বিয়ে হয় দ্বারকানাথ ঠাকুরের ভাগ্নে ও দাদার পৌত্রের সঙ্গে। ঠনঠনের শশিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে ত্রৈলোক্...