সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

বনফুলের কিশোর গল্প

রবীন্দ্রনাথের হাতে বাংলা ছোটগল্পের যে বিস্তৃত পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলো, তার উজ্জ্বল সৌন্দর্য যেন আজও আমাদের বিমোহিত ক’রে তোলে। তার পরবর্তীতে; যে কজন সেই আলোর পথে এগিয়েছেন তাঁদের কথামালা নিয়ে, বনফুল তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ছোটগল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রে, তিনি নিজস্ব এক জীবন দৃষ্টির পরিচয় দিয়েছেন। বাক্যের সংক্ষিপ্ততা,  ভাবানুষঙ্গে অনির্বচনীয় রহস্যকরতা, পরিহাস-রসিকতা তাঁর রচিত ছোটগল্পের প্রাণ বলে আমরা মনে করি। এখানে আমরা আরও বলে নিতে পারি, বাক্যের সংক্ষিপ্ততা এবং অনুষঙ্গ জীবনদৃষ্টির কারণে তাঁর রচনাকে হঠাৎ ক’রে অকিঞ্চিৎকর বলে মনে হতে পারে। সাম্প্রতিককালে, বাংলাসাহিত্য সম্পর্কিত আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির সাহিত্য সমালোচনায় বনফুলের সাহিত্য কিছুটা ম্লান মনে হ’তে পারে। শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রাজ্ঞ সমালোচকও একই ধরনের ভ্রান্তির ভুক্তভোগী হয়ে লিখেছিলেন, ‘ তিনি ছোটগল্পের শিল্পরূপ ও ঘটনা বিন্যাসের যথার্থতা লইয়া বিশেষ মাথা ঘামান নাই। স্বল্পতম পরিসরের মধ্যে ইহার অন্তর্নিহিত পরিহাসটুকু ব্যক্ত করিয়া, অতর্কিতের ধাক্কায় পাঠককে খানিকটা চকিত করিয়া, গল্প শেষ করিয়াছেন। কথামালা, হিতোপদেশ প্রভৃতি প্রাচীন গল্প সং...

বনফুলের সাহিত্যঃ সহজ ভাবনার সংমিশ্রণ

  বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (১৮৯৯-১৯৭৯) একজন বাঙা লি   কবি , কথাশিল্পী , নাট্যকার , প্রবন্ধকার। সাহিত্য জগতে তিনি  ‘বনফুল’ ছদ্মনামে বেশি পরিচিত। তাঁর জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৯ জুলাই বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী গ্রামে। বলাইচাঁদের পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল হুগলি জেলার শিয়ালখালায়। পিতা সত্যচরণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড হাসপাতালের ডাক্তার। মাতা মৃণালিনী দেবী। বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় পূর্ণিয়ার সাহেবগঞ্জ স্কুল থেকে ১৯১৮-তে ম্যাট্রিক এবং হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজ থেকে ১৯২০-এ আইএসসি পাশ করেন। একই বছরে তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। তবে তিনি যখন   ষষ্ঠ বার্ষিক শ্রেণিতে পড়েন , তখন বিহারের পাটনায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিহার থেকে আসা ছাত্র হিসেবে তিনি এ নব প্রতিষ্ঠিত কলেজে স্থানান্তরিত হন এবং সেখান থেকে এমবিবিএস পাস করেন ১৯২৮-এ। বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় কর্মজীবন শুরু করেন কলকাতার একটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে নিয়োগ লাভের মধ্য দিয়ে। পরে মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জের মিউনিসিপ্যালিটি হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার পদে কিছুকাল দায়িত্ব পালন কর...

প্রেমেন্দ্র মিত্রঃ ছোট গল্পের ছোট কথা

  প্রেমেন্দ্র মিত্রের বাংলা কথাসাহিত্যে প্রবেশ যেমন নাটকীয়, তেমনি আকস্মিক ও বলা যায়। প্রেমেন্দ্র মিত্রের জীবনীকার শ্রীমতী সুমিতা চক্রবর্তীর আলোচনা থেকে জানা যায়, তিনি ঢাকায় জগন্নাথ কলেজে ইন্টারমিডিয়েট সায়েন্স পড়ার সময় কলকাতা এসে ‘২৮নং গোবিন্দ ঘোষাল লেনের’ মেস বাড়িতে থাকেন। সেই সময় সমস্ত বর্ডাররাই ছুটিতে বাড়িতে চলে গেছেন। খালি মেঘের ঘরের জানালায় গোঁজা একটি পোস্টকার্ড লেখকের হাতে আসে। চিঠির বিষয়বস্তু এক নববিবাহিতা নারীর প্রবাসী স্বামীকে লেখা সামান্য কয়েকটি কথা, যা পাথেয় করে রাতারাতি প্রেমেন্দ্র লিখে ফেলেন দু’টি ছোটগল্প ‘শুধু কেরানী’ ও ‘ গোপনচারিণী ’। এর পরবর্তী অধ্যায় এক প্রসারিত জীবনের। একের পর এক ছোটগল্পের সংকলন যেমন প্রকাশিত হয়েছে; তেমনি কাব্যগ্রন্থ ও উপন্যাস রচনাতেও তিনি রেখেছেন মৌলিকতার স্বাক্ষর। কল্লোলে’ র নতুন ধারায় রচনা শৈলীর তিনি ছিলেন এক অগ্রগণ্য কারিগর। অভিনব বিষয়বস্তু, সুক্ষ্ম ভাবাবেগ, নাটকীয়তা ও স্বাভাবিক সুলভ উপস্থাপনা-এ সবই তাঁর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’য়ে ধরা পড়ল। প্রবাহিত এক জীবনে বহু রকমের জীবিকার সঙ্গে পরিচিতির সুত্রে কখনও তিনি স্কুল মাস্টার, বিজ্ঞাপন লেখক, পত্রি...

মুহূর্তের ভালোবাসা

                     পৌষের কোমল সন্ধ্যায়, মুহূর্তে হারিয়ে যায় সমস্ত শিথিল ভাবনাগুলো                    আমার মন থেকে, অনুভূতির কোষগুলো ছড়িয়ে প’ড়ে রক্তকণিকার গহ্বরে                    আমি বেঁচে থাকি উজ্জ্বল আলো গায়ে মেখে; বিহব্বল চেতনায় যারা একে                  দিয়ে যায় সুতীব্র কামনা শিশিরের অমল ছোঁয়ায়; চাঁদ আর জ্যোৎস্নার                  আলোয় খেলা ক’রে ইন্দ্রিয়ের অজস্র রূপ, সৌন্দর্যের অমলতার শিশিরে,                    উষ্ণ কোমল সুখ ফিরে আসে আবর্জনাময় বেড়ে উঠা স্বপ্নের গভীরে-   ...

জীবনানন্দ দাশঃ উজ্জ্বল আলোয় স্মৃতি-বিস্মৃতি

জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাংলা কবি। তাঁকে বাংলা ভাষার ‘ শুদ্ধতম ’ কবি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে এসে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন, এবং ১৯৯৯ সালে যখন তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল তত দিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। তিরিশে আধুনিক কবিদের মধ্যে ভাব ও ভাষার সার্থক ব্যবহারের জন্য, অনেকের কাছে তিনি-ই ঐ দশকের শ্রেষ্ঠ কবি বলে গণ্য হোন। রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক বাংলা সাহিত্যের পুরোহিতপ্রতিম ব্যক্তিত্ব বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪) তাঁকে ‘নির্জনতম কবি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি শুধু আধুনিক বাংলা কবিতার নয়; চৌদ্দশো বছরের বাংলা সাহিত্যের তথা কবিতার ইতিহাসেরও একজন অন্যতম কবি বলে বিবেচিত হোন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রণেতা শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯২-১৯৭০) ‘বাংলা সাহিত্যের বিকাশের ধারা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘জয়দেব-চণ্ডীদাস-বিদ্যাপতি-রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকার যে আধুনিক বাংলায়ও সম্পূর্ণ অপচিত হয় নাই, জীবনানন্দের কবিতা সেই আশ্...

প্রবন্ধঃ পত্রিকা সম্পাদনা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) ব্যাপক সাহিত্য রচনার মধ্যেও সাময়িক পত্র সম্পাদনার দায়িত্বটাও তিনি বহন করেছেন নিজ আগ্রহে। সংখ্যাগত দিক থেকে সেটা যে খুব কম হবে, তা কিন্তু বলা যাবে না। সেই সম্পাদনার ভারটা অনেকটাই প্রাসঙ্গিক হয়ে দেখা দেয় রবীন্দ্রনাথের জীবনে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে, সম্পাদনা নিয়ে অনেক বেশী চিন্তা-ভাবনা করেছেন। এর সুস্পষ্ট চিত্র দেখতে পাই তারই সম্পাদিত পত্রিকার দিকে চোখ দিলে। আমাদের চিন্তায় বিস্ময়কর হয়ে দেখা দেয়, তাঁর প্রতিভার এ-দিকটির দিকে চোখ দিলে। তাঁর সৃষ্টিশীলতাকে বিচিত্র পথে প্রবাহিত করার জন্য, এ-ধরনের সম্পাদনার কাজটি যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি, তা কিন্তু বলা যাবে না। রবীন্দ্রনাথ, একত্রে অনেকগুলো পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নিলেও খুব বেশী সময় ধরে কোথাও স্থায়ী ভাবে অবস্থান করেননি, বঙ্গদর্শন ব্যতীত। এ-ধরনের কাজের মানসিকতার চিত্র আমরা দেখতে পাই, জোড়াসাঁকোতে রবীন্দ্রনাথের বেঁড়ে উঠা বয়স থেকেই। জোড়াসাঁকো থেকে যখন কিশোরদের জন্য প্রকাশিত হচ্ছিল হাউস জার্নাল ও বালক, সেখানেও সুস্পষ্টভাবে না হলেও ছায়ার মতো কাজ করেছেন তিনি। স্পষ্টভাবে বলে রাখি যে, বালকে ’র সম্পাদক ছিলেন...

কয়েকটি স্মৃতি

                   রাত্রির গাঢ় অন্ধকারে নিজেকে হারিয়ে ফেলি কয়েক মুহূর্তে;                 ধূসর মেঘ থেকে কখন যে ঝ’রে পড়লো বৃষ্টির ফোঁটাগুলো নিঃশব্দে                                             ভাবনার জগত থেকে তাও জানি না-                 সমুদ্রের ঢেউগুলো ভেঙে পড়ছে লালমেঘের আড়ালে, দূষিত রক্তে মিশে আছে                  রাত্রির নিবিড়তা, তীব্র আর উজ্জ্বল হ’য়ে নক্ষত্রের আড়ালে;                 দিগন্ত বিস্...