‘বাঙালি একটি জাতিগোষ্ঠী’ এই বাক্যের ভিতর লুকিয়ে আছে এমন এক ইতিহাস, যার সূচনা অনির্দিষ্ট কালের অভ্যন্তরে; এমন এক সমাজজৈব বিবর্তন, যাকে শুধু ভূগোল নয়, ভাষা, সংস্কৃতি, স্বপ্ন, সংগ্রাম, বেদনা, সংগীত, দর্শন, সব মিলেই গ’ড়ে তুলেছে; মানুষের জাতিগত পরিচয়ের ইতিহাস সাধারণত যুদ্ধ, পরিযান, রক্তের মিশ্রণ, খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক রীতি, ভূগোল, ঋতুচক্র, নদীর প্রবাহ, বনের বিস্তার, এসবের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়; কিন্তু বাঙালির পরিচয় এতটাই বিস্তৃত যে একে একক কোনো উৎসের সন্তান বলা যায় না; বরং বলা যায় সে বহু ধারার মিলিত সন্তান, পুরোনো সভ্যতার মাটিতে শিকড় গাড়া, বহু জাতির স্পর্শে গঠিত, বহু ভাষার শব্দে নির্মিত, বহু সংস্কৃতির ধ্বনিতে পরিণত এক সম্মিলিত মানবসত্তা। এই অঞ্চলে যে মানুষ প্রথম বসবাস শুরু ক’রে তারা ছিল প্রথম সন্তান, নদীর সন্তান, মাটির সন্তান; তারা বনের ছায়া, পাহাড়ের ঢাল, নদীর দুয়ারে আশ্রয় খুঁজতো; তাদের জীবন ছিল ঋতু ও প্রকৃতির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল, খাদ্যসংগ্রহ, শিকার, মাছ ধরা, প্রাকৃতিক ফলমূল, এসব ছিল তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা; তাদের সৃষ্ট প্রথম গান ছিল বৃষ্টি নামার শব্দে, প্রথম নৃত্য ছিল নদীর তটে, প্রথ...
মামুনুর রহমান, সমকালীন বাংলা সাহিত্যের এক অদ্বিতীয় সংবেদনশীল কণ্ঠ। তাঁর লেখায় জীবনের সাধারণ মুহূর্তগুলোও নতুন এক আলোর আভায় ফু’টে ওঠে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, কবিতা কেবল শব্দের খেলায় সীমাবদ্ধ নয়; এটি সেই নীরব ভাষা, যা অন্তরের গভীরে বাস ক’রে, পাঠকের অভ্যন্তরীণ অনুভূতির সঙ্গে মিশে এক অনন্য প্রতিধ্বনি সৃষ্টি ক’রে। তেমনি তাঁর গদ্য রচনা পাঠককে শুধু ভাবায় না, বরং অনুভব করায়, জীবনের ক্ষুদ্রতম ছোঁয়ায়ও গভীর মানসিক ধ্বনিতে স্পন্দিত ক’রে। তিনি খেয়াল রাখেন পাঠকের মন ও মননশীল দিকটি।