সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ আমাকে ছুঁয়ে যাও


একটু ছোঁয়া দাও, আমার নষ্ট-আবর্জনাময় শরীরে, যে বড় প্রত্যাশী,
অনেকদিন আমি উপলব্ধি করিনি, কী তার স্বাদ, আরক্ত শিশিরে,
ঠোঁটের কোণে, কিভাবে ঢেউ খেলে যায় শরীর থেকে শরীরে, ধীরে-ধীরে
আলিঙ্গনের পর কতক্ষণ কাঁপতে থাকে আমাদের অভ্যন্তরে ভেজা রক্তপদ্মে;   
অমল জ্যোৎস্নায় ছুঁয়ে দেখছ তা-কখনও, কেঁপে-কেঁপে স্বপ্নের গভীরে  
সব ভুলে গেছি রূপান্তরের স্বপ্নলোকে; আঙুলের কোমল ছোঁয়ায়-গ্রীবায়,  
তোমার অপার্থিব হীরকখচিত স্বর্ণের শরীর, ঢেউ খেলানো মসৃণ চুল আর
ঝর্ণাস্রোতে ব’য়ে যাওয়া গোলাপী আভা, যেন ছিটিয়ে-ছিটিয়ে দেখানো পথে  
স্বর্ণ ছড়াচ্ছ ইস্পাতমিশ্রিত কঠিন শরীরে-পদ্ম আর জ্যোতির্ময় চোখের কোণে;     
আমি হেঁটে যাচ্ছি মধুমতী, শৈলদাহ, বারাসিয়া আর ঘাঘর নদীর পাড় ধ’রে;    
চাঁদ আর জ্যোৎস্নার সাথে কথা বলে-বলে নিসর্গপ্রদীপে, আশ্বিনের বাতাসে  
মুহূর্তে ছুঁয়ে যাও, ঠোঁটের কোমল স্পর্শে, কেঁপে উঠা আঙুলের শ্রাবণ জলে,  
তোমার সাম্রাজ্যেয় তুমি সম্রাজ্ঞী, মাতাল আমি বিবর্ণ মধ্যেদিনে-বিস্তৃত ভূমিতে    
যদি চোখ রাখি তোমার নীল ঢেউয়ে, চাঁদ আর নরম ঘাস ফুলের সন্ধ্যাতারায়,  
কোমল শিশিরে আমাকে ছুঁয়ে যাও, ঘন বৃষ্টির সন্ধ্যার আকাশে, শব্দহীন বু’কে
গাঢ় রাত্রি এসে মিশে যায় অপূর্ব দুই ঠোঁটের কোণে-ভালোবাসার মসৃণ গল্পে,  
দৃষ্টি দাও, উজ্জ্বল রঙে, শব্দমালার গভীরে, প্রোজ্জ্বল রৌদ্রলোকে, গভীর মননে 
আমার কঠিন আঙুলে, বিষণ্ণ ভাবনায় তারা খেলা ক’রে যায় নির্মল সৌরভে;   
উড়ন্ত দিনের রেখে যাওয়া ভাবনার গভীরে, নিঃশব্দে হারানো কণ্ঠস্বরে বাতাসে,
ছুঁয়ে যাও মায়ানদীর কোমল ঢেউয়ে, ভেঙে পড়া সৌন্দর্যে, ইন্দ্রিয়ের উজ্জ্বল
বিবর্ণ মাখা দিনে, মধ্যে দুপুরে গ’লে প’ড়ে ফাল্গুনের হাওয়ায় আমার মসৃণ
শরীরে-নক্ষত্র পুঞ্জের বিস্ময়ে আঁধারের গভীরে, স্মৃতিরা ফিরে গেছে অতীতে,
ঐশ্বর্যের বিচ্ছেদে রোপণ করি নতুন স্বপ্ন, শ্রাবণের ধারায় মিশে থাকে কোমল
বাহু মুহূর্তের নিশ্বাসে, কষ্ট পাব বু’কের কোণে জমানো গাঢ় দুঃখে-দীপ্ত স্বরে,
তার পরও বলি, আমাকে ছুঁয়ে যাও নির্ঝরের জ্যোতির্ময় আলোয় সুসম্পর্কে।    
  

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধ সংগ্রহ

সুধীন্দ্রনাথ , সাতটি কাব্যগ্রন্থের মতো সাতটি প্রবন্ধের গ্রন্থ লিখলে খারাপ হতো না , বেশ ভালোই হতো । সুধীন্দ্রনাথের প্রবন্ধগুলো হালকা মানের নয় , যদিও তাঁর কোন রচনাই হালকা নয় । সাহিত্যে বিচারে তা অনেক উঁচুমানের । তার উপর ভাষার ব্যাপারটি তো রয়েছেই । সুধীন্দ্রনাথ মাত্র দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন । গ্রন্থ দুটো ‘ স্বগত ’ ( ১৩৪৫ ঃ ১৯৩৮ ), অপরটি ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’ ( ১৩৬৪ : ১৯৫৭ ) । ‘ স্বগত ’- তে রয়েছে ষোলটি প্রবন্ধ । গ্রন্থ দুটি তিনি রচনা করেছেন দু ’ ভাগে । লরেন্স বা এলিয়ট এর প্রবন্ধ যেমন পাওয়া যাবে না ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’- এ ; তেমনি রবীন্দ্র সম্পর্কিত প্রবন্ধ নেওয়া হয়নি ‘ স্বগত ’- এ । প্রকাশ কাল অনুযায়ী ‘ স্বগত ’- এর প্রবন্ধসমূহ : ‘ কাব্যের মুক্তি ’ ( ১৯৩০ ); ‘ ধ্রুপদ পদ - খেয়াল ’ ( ১৯৩২ ), ‘ ফরাসীর হাদ্য পরিবর্তন ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লিটনস্ট্রেচি ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লরেন্স ও ভার্জনিয়া উল্ফ্ ’ ( ১৯৩২ ), ‘ উপন্যাস তত্ত্ব ও তথ্য ’ ( ১৯৩৩ ), ‘ উইলিয়ম ফকনর ’ ( ১৯৩৪ ), ‘ ঐতিহ্য ও টি , এস , এলিয়ট ’ ( ১৯৩৪ ), ...