সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

নভেম্বর, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

পুরোনো স্টেশনের বিকেল

  পুরোনো স্টেশনে বসে আজও ভাবি, কত ট্রেন এলো, কত মুখ হারিয়ে গেল, তুমি এসেছিলে এক বিকেলে, হালকা বৃষ্টি আর কুয়াশা ভেজা চুলে আমার হাতে এক কাপ কফি, তোমার ঠোঁটে নরম হাসি ঘড়ির কাঁটা যেন থেমে ছিল, সময় শুধু তোমার চোখে দুলছিল রেলগাড়ির মতো একটি সিটি বাজল, তুমি উঠলে, আমিও চুপ করে রইলাম, কিছু কথারা রেললাইনে পড়ে রইল, যাদের শব্দ আজও রাতের বাতাসে ভেসে আসে এখনও যাই কখনও, দেখি বেঞ্চটা আছে, কিন্তু তুমি নেই স্টেশনের আলো নিভে গেলে মনে হয়, তুমি বুঝি কোথাও পাশে বসে বলছো, সময়টা একটু থেমে যাক।

নামহীন বিদায়

  বিদায়টা ছিল খুব সাধারণ না কোনো কান্না, না কোনো কথার ভিড়, শুধু দুটো চোখে আটকে থাকা অসংখ্য অব্যক্ত শব্দ; তুমি হেঁটে গেলে ধীরে, রাস্তার ওপারে ঝুলে ছিল সন্ধ্যার আলো, আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, যেন ছায়া হয়ে গেছি নিজেরই গল্পে তারপর দিন গড়াল, রাত কাটল, সবই আগের মতো শুধু আয়নায় নিজের চোখে তোমাকে দেখি না আর, কখনও মনে হয়, আমরা কেউই কাউকে ছেড়ে যাইনি, শুধু সময় আমাদের আলাদা করে রেখেছে দুটি কাঁটার মতো একই ঘড়ির ভিতরে, যারা ছুঁয়ে যায়, তবুও এক হতে পারে না কখনো।

শহরের নীরবতা

এই শহর ঘুমায় না, রাত তিনটেতেও জানালায় আলো জ্বলে, মানুষেরা ঘোরে অজস্র দিকেই, কিন্তু কোথাও যেন কেউ পৌঁছায় না, কফিশপের ধোঁয়ায় ভেসে থাকে অর্ধেক বলা গল্পের গন্ধ তুমি বসেছিলে একদিন, হাতে কফির কাপ, চোখে বিষণ্ণ আলো, বলেছিলে, ভালোবাসা মানে ভুল সময়েও অপেক্ষা করা' এখনও ওই টেবিলটা খালি, তবু মনে হয় তুমি ঠিক পাশেই আছো রাত বাড়ে, আকাশ ধূসর হয়, আমি একাই হাঁটি মিরপুর রোডে, মনে হয়, শহরটা আমাদের ব্যথা চিনে গেছে নীরবতারও একটা শব্দ আছে, যেখানে কেবল তোমার শব্দ বাজে।  

তোমার নামে বৃষ্টি ঝ’রে

  বৃষ্টি নামে আমার শহরে নরম শব্দে, জানালার ধারে বসে থাকি, হাতে পুরোনো এক কাপ কফি, যার গন্ধে মিশে আছে তোমার প্রথম বিকেল তুমি বলেছিলে, বৃষ্টি মানে শুরু, শেষ নয় তখন জানতাম না, একদিন এই বৃষ্টিই হবে আমাদের নিঃশব্দ বিদায়ের শেষ সাক্ষী, ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আমরা হাঁটলাম শহরের ভেজা রাস্তায়, রাস্তার আলোগুলো যেন গ’লে পড়ছিল তোমার শরীরে আর আমি ভাবলাম, ভালোবাসা হয়তো এমনই হয়;   ভিজে, নরম কুয়াশা, তবু আলোকিত, নিবিড় ছোঁয়া তুমি হেসে উঠলে, চুলে বৃষ্টির ফোঁটা জমে যাচ্ছিল অগোচরে, আমি সাহস ক’রে বলতে চেয়েছিলাম, এই মুহূর্তে আমি তোমায় ভালোবাসি পৃথিবীর সব বৃষ্টির চেয়েও বেশি, কিন্তু মুখ খুলিনি, কারণ ভয় ছিল, শব্দে ভেঙে যাবে সেই নিস্তব্ধ যাদুতে, আজ এত বছর পরেও যখন বৃষ্টি নামে, আমার জানালায় ঠোঁট রেখে আমি শুনি তোমার নিঃশ্বাসের মতো শব্দ, ‘টুপ-টুপ-টুপ’ কখনও মনে হয় তুমি পাশে বসে আছো, চুপচাপ, শুধু চোখে জল, আমিও কিছু বলিনি কারণ ভালোবাসা মানে কখনও কখনও শুধু একই নীরবতায় ভিজে থাকা, রাস্তার ওপারে কেউ হেটে যায়, আমি তাকিয়ে থাকি, আর বলি ওটাই কি তুমি নও ? না, হয়তো কোনো অপরিচিত মেয়ে, তবুও হৃদয় চেনে, গন্ধ নেয় ভেজা পদধ্...

শামসুর রাহমানের কবিতার সৌন্দর্য

  শামসুর রাহমানের (১৯২৯-২০০৬) কবিতার ভুবনে প্রবেশ করা মানে এমন এক আলোক-অন্ধকারের জগতে প্রবেশ করা, যেখানে শব্দ শুধু প্রকাশের মাধ্যম নয়, বরং অস্তিত্বের প্রমাণ। তাঁর কবিতা সেই শহরের মতো—যেখানে একদিকে আছে ধূলিধূসর রাস্তাঘাট, রাজনৈতিক উত্থান,পতনের গর্জন, মুক্তির জন্য লড়াই করা মানুষের উদ্বেল আবেগ; অন্যদিকে আছে প্রেমের নরম নিশ্বাস, প্রকৃতির অলৌকিক স্পর্শ, আর নিঃসঙ্গ মানুষের আদিম আতঙ্ক। তাঁর কবিতা এমনই—দ্বৈততার মধ্যে দাঁড়িয়ে এক অনন্য সাম্য রচনা করে, যেখানে শব্দের ভেতরে লুকিয়ে থাকে মানুষের ইতিহাস, মানুষের স্বপ্ন, মানুষের পরাজয় ও পুনর্জাগরণ। শামসুর রাহমানের কাব্যজগতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানুষ। মানুষের জীবন, মানুষের সংগ্রাম, মানুষের যন্ত্রণা, মানুষের অপরূপ সৌন্দর্য—সবই তাঁর কাব্যে বারবার ফিরে আসে। তবে মানুষকে তিনি যেভাবে দেখেন, তা কোনো একমাত্রিক দৃষ্টিতে নয়; মানুষের ভেতরের আলো, ছায়ার ভীষণ বৈচিত্র্য তাঁকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে। মানুষের দুর্বলতা যেমন তাঁকে ব্যথিত করে, তেমনি মানুষের সম্ভাবনা তাঁকে উদ্বেলিত করে। তাই তাঁর কবিতা কখনো নিঃস্বতার অন্ধকারে ডুবে যায়, আবার হঠাৎই সমুদ্রের কাছে ফিরে আসে...

বাঙলা ভাষার পুরানো সংবাদপত্র

বাঙলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে; ১৮১৮ সালটি, খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত হয়, বাঙলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সাময়িকপত্র , দিগ্দর্শন। প্রথমদিকে, এটি ছিল একটি মাসিক পত্রিকা; যার সম্পাদক ছিলেন জোশুয়া মার্শম্যানের পুত্র জন ক্লার্ক মার্শম্যান। এই পত্রিকাটির প্রকাশক হিসেবে নাম পাওয়া যায়  শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস । দিগ্দর্শন -এর জীবনকালে মোট প্রকাশিত সংখ্যা ২৬টি। সেগুলো আবার দেখা দেয়, তিনটি বিভিন্ন সংস্করণে, বিভিন্নরুপে। এর বাঙলা সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল ১-২৬ সংখ্যা। আবার;  ইংরেজি-বাঙলা সংস্করণ দেখা দেয় ১-১৬ সংখ্যাগুলো; এবং ইংরেজি সংস্করণ হিশেবে দেখা দেয় ১-১৬ সংখ্যাগুলো। দিগ্দর্শন  সংবাদপত্র হিসাবে পরিচিত পায়, এটা যেমন সত্য, কিন্তু সংবাদপত্র বলতে প্রকৃতপক্ষে যা বোঝায়, দিগ্দর্শনে তা ছিল না। এতে সংবাদ তেমন বেশী খুঁজে পাওয়া যায় না। পত্রিকাটির প্রচার যে খুব বেশী ছিল তা কিন্তু বলা যাবে না। ২৬টি সংখ্যায় মোট ছাপা হয়েছিল ১০,৬৭৬টি কপি; অর্থাৎ, প্রতিটি সংখ্যা গ’ড়ে প্রকাশিত হয় চারশো’র কিছু বেশী। দিগ্দর্শনে চিত্র ছিল না বললেই চলে; বেশীর ভাগ স্থান জু’ড়ে থাকতো বিভিন্ন ...