সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ জল ও জ্যোৎস্নার শোকগাঁথা



ব্যর্থ মানুষের মতো পড়ে রই; যেখানে নেমে আসে গভীর অন্ধকার,
              নীল বনে জাগায় অপার সৌন্দর্য আমার আঙুল ও রক্তিম ঠোঁটে,
               ঝ’রে প’ড়ে তীব্র জ্যোৎস্না
                           আমার বন-উপবনে।
কেঁপে-কেঁপে আবার স্পর্শের জ’লে ডুব দিই অমল ছোঁয়ায়;
               জলকে তু’লে নিই আমার সমস্ত শরীর জুড়ে,
                      অস্তি মাংস জুড়ে গেঁথে থাকে শতো 
      পতঙ্গের সৌরভ, উজাড় ক’রে তোলে আমার শৈশবের বেঁচে থাকা নিবিড় স্মৃতি।
রুপালি জলে ধুয়ে গেছে হৃদয়ের হারানো সুর,
                মাঘের হাওয়ায় নিস্তব্ধ হ’য়ে রই,
         দেহের ক্ষতে জমে আছে পুঁজ, আঙুলের রুপালি ঝর্না সমুজ্জ্বল রক্তের গভীরে;
সাড়া দিই মাঘের তীব্র বাতাসে,
                বিষণ্ণ স্মৃতির মতো খেলা ক’রে যায় জলধারা,
নিঃশব্দে রুপালি জলে সন্ধ্যায় নেমে যাই
                         দেহের সব মাধুর্য অম্লান ক’রে একা,
বিষণ্ণ সুর হারিয়ে যায় আমার বিবর্ণমাখা মৌনে,
                 শিশিরে মেখে থাকে জলকণা,
নিদ্রাহীন বেঁচে আছি, ঝ’রে পড়া স্নিগ্ধ স্মরমালা বেদনা জাগায় দুর্ভেদ্য নিশীথে;
নিজস্ব জ্যোতির্ময় আলোয় আর ফিরে আসি না,
                             সবুজ উদ্ভিদ ভেদ ক’রে,
           আমার আপন মাটিতে।
রোদনের চিহ্ন ব’য়ে বেড়াই সুগন্ধ শরীরে, শূন্যলোকে নিসর্গের
                                       বিগলিত ঠাণ্ডা হিমে,
       গ’লে গ’লে করুণ হ’য়ে যাচ্ছে আমার নিথর আঁখিতারায়, 
             গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাবো,
উজ্জ্বল-উৎসবে কোমল শিশির জড়ানো অজানা পথে।
       প্রসারিত ভাবনায়; অর্থহীন হ’য়ে বেঁচে থাকে হৃদপিণ্ডের স্পন্দিত অতলে। 
অব্যক্ত কণ্ঠস্বরে আভাময় শ্রুতি রাত্রিদিন
                    ব’য়ে যায় আমার সবুজ পাতার নিঃসৃত
জলতরঙ্গের মৌলিক শূন্যতায়।
                গভীর জ্যোৎস্নায় আমিও হারিয়ে যাই নিবিড় আলিঙ্গনে;
ঢেউ বয়ে যায়, শ্যামল মেঘের দেশে পলি মাটির প্রান্ত মোহনায়,
গাঢ় দুঃখ শোক গেঁথে থাকে ভরা পূর্ণিমায় আমার অতীন্দ্রিয় জল ও জ্যোৎস্নায়  
    


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বিষ্ণু দে : ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’ থেকে ‘চোরাবালি’

বিষ্ণু দে , তিরিশি কবিদের অন্যতম । কবিতা রচনাই যাঁর কাছে এক এবং অদ্বিতীয় হ ’ য়ে দেখা দেয় । কাব্যে সংখ্যার দিক থেকে অতিক্রম করেছেন সতীর্থদের । বিষ্ণু দে , যাঁর কবিতা রচনার সূচনা পর্বটিও শুরু হয় খুব দ্রুততম সময়ে । কবিতা সৃষ্টির পর্বটি অব্যাহত রেখেছেন সর্বদা । পঁচিশটি কবিতা নিয়ে ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এ নিজেকে প্রকাশ করেন স্ব - মহিমায় । যে কবিতাগুলা বিস্ময়বিমুগ্ধ ক ’ রে অন্যেদেরকেও । ওই কবিতা শুধু বিষ্ণু দে ’ কে নয় , বরং নতুনতর হ ’ য়ে দেখা দেয় বাঙলা কবিতা । বিষ্ণু দে ’ র ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’ রবীন্দ্রনাথকে পড়তে হয়েছিল দু ’ বার । ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এর কবিতাগুলির রচনাকালের ব্যাপ্তি দেওয়া আছে ( ১৯২৮ - ১৯৩৩ ) সময়ের মধ্যে , এবং গ্রন্থকারে প্রকাশ পায় ওই একই বছরে অর্থাৎ , ১৯৩৩ - এ । কিন্তু রচনাকালের ব্যাপ্তি ১৯২৮ দেওয়া থাকলেও প্রকৃত পক্ষে এ সকল কবিতাগুলো রচনা পর্ব শুরু হয় আরো দু ’ বছর পূর্বে অর্থাৎ , ১৯২৬ - এ । যখন কবি হিশেবে বিষ্ণু দে একেবারেই নতুন এবং নবীন । ১৯৩৩ - এ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...