সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ আমিও এককালে হৃদয়ের কাছাকাছি ছিলাম...


                  
                  বলবো না ভালোবাসি, তোমাকে চাই, অনাবৃষ্টির এই বু’কে; অন্তহীন গভীর স্পন্দনে;

শূন্যেতা আর বিহব্বলতা যেখানে মিশে আছে, হেমন্তের তীব্র কঠিন সুখ; নীলবনে,  
প্রতিজ্ঞায় মনে মনে, জ’মে থাক অব্যক্ত কণ্ঠস্বর, যে কথা রক্তিম আনন্দ, স্তব্ধতা,  
শূন্যের নির্ঝরে, হৃদয় উত্তাপ তার রোদের ঝিলিক; হৃদপিণ্ডে জ’মে থাকে মধুরতা,
বিষাদের কঠিন সুর; জলে-জলে নিবিড় সমুদ্রে উচ্ছ্বাস; ফাল্গুনের মধ্যেদিনে রক্তিম
                  
                    শূন্যতা, কৃষ্ণচূড়া, রক্তজবা প্রতিধ্বনি আমার বু’কে; কেঁপে উঠা স্বরে তোমার প্রেম;
                    আজ নির্বাসিত; পরিত্যক্ত। হৃদয় আজ মূল্যহীন; তার গভীর আবেদনে,যারা চলে
গেছে আমার বন-উপবন উপড়িয়ে; তাঁদের আর ডাকি না করুণ স্বরে হিল্লোলে;
মধ্যেরাতে কান পেতে শুনি নীরবতার কণ্ঠস্বর; যারা নিদ্রাহীন ফেলে গেছে আমায়
তবুও; আমি স্নিগ্ধ চাঁদকে বু’কে তু’লে নিই ভেঙে পড়া জ্যোৎস্না জ্বেলে দিবে সন্ধ্যায়
                    
                     তার আপন আলোয়। বুঝতে পারি দগ্ধ হবো; ক্ষতে ভ’রে যাবে আমার মসৃণ শরীর;
মাছির প্রিয় খাদ্য হ’বে; আমার রক্তে জ’মে থাকা অম্লান জল, মুছে যাবে সমস্ত স্বরে
                     যা, বিষে মিশিয়ে যাবে সঙ্গীতের প্রগাঢ় সুরে; আমার পাঁচ আঙুল তাঁদের নীল বৃষ্টিপাত;
যারা সঙ্গোপনে বেঁছে নেয় আমার সোনালী দিন। হয়তো গ’লে যাবো; নিসর্গ অশ্রুতে; 
ঢেউয়ের গভীর শব্দে; মেঘমালা আর ঝ’রে পড়া নিসর্গের বিষাক্ত ছোঁয়ায়, শাদা হিমে,
                  
                     আমার হৃদপিণ্ড, তোমার হাতে দিয়েছি; উল্টে-পাল্টে দেখতে পারো তার রক্তিম
ছোঁয়ায় মিশে আছে কঠিন পবিত্রতায়। গ’লে যাওয়া শরীরে; আবার ফিরে আসুক
রোদনের চিহ্ন নিয়ে; সামান্য বাতাসে ভেঙে পড়ে আমার স্বপ্ন; নির্মমভাবে আমাকে
                    নিয়ে যায় দু’চোখের একান্ত গভীরেকরুণ তোমার অশ্রুমালা; আঁখি তাঁরায় গেঁথে
থাকে সন্ধ্যার কুয়াশায়; গাঢ় নিসর্গ সন্ধ্যায়; আমাকে তু’লে নিয়েছে কৃষ্ণচূড়ার ব্যর্থ
                 
                    রঙে; তোমার করতলে প’ড়ে থাক সুনিবিড় আলিঙ্গনে, যা নিপুণ হাতে নিয়ে যায়
কঠিন জ্যোৎস্নার রক্তবীথি হিমে। আমার উদ্যান উদ্ভিদহীন; তার জীর্ণ নীলছায়ায়
জ’মে থাক হারানো আলিঙ্গনে; যারা আমাকে তু’লে নিয়েছিল শরীরের গভীরে;
যেখানে প্রচণ্ড সুখে গিয়েছে কেটে প্রজাপতি আর ঝ’রে পড়া কোমল স্নিগ্ধস্বরে; 
                    নীল জলে মুছে গেছে জমানো সব দুঃখ; চাঁদ আর জ্যোৎস্না যেখানে জ’ড়ো হয়
                   
                    পবিত্র রাত ভেবে; কোমল বাতাসে সুঘ্রাণ ছড়ায় তার দিকে দিকে; সংগীতময়
আমার নীলছোঁয়া, প্রোজ্জ্বল গভীরে জ্যোতির্ময় পড়ে থাকা ব্যর্থ সম্পর্ক, শূন্যতা
আদিম উৎসবে; চিত্রকল্পের সব ভাবনা ইন্দ্রিয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকার মতো
আঁখিপাতে; ঝ’রে পড়ে মৃদুবাতাসে, সোনালী সম্পর্ক ফিরে পায় নির্মম ফাল্গুনে,
সব উদ্যান, নিবিড় জ্যোৎস্না আর নিসর্গ সন্ধ্যা ভুলে যাও; আমার স্নিগ্ধ মননে। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বিষ্ণু দে : ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’ থেকে ‘চোরাবালি’

বিষ্ণু দে , তিরিশি কবিদের অন্যতম । কবিতা রচনাই যাঁর কাছে এক এবং অদ্বিতীয় হ ’ য়ে দেখা দেয় । কাব্যে সংখ্যার দিক থেকে অতিক্রম করেছেন সতীর্থদের । বিষ্ণু দে , যাঁর কবিতা রচনার সূচনা পর্বটিও শুরু হয় খুব দ্রুততম সময়ে । কবিতা সৃষ্টির পর্বটি অব্যাহত রেখেছেন সর্বদা । পঁচিশটি কবিতা নিয়ে ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এ নিজেকে প্রকাশ করেন স্ব - মহিমায় । যে কবিতাগুলা বিস্ময়বিমুগ্ধ ক ’ রে অন্যেদেরকেও । ওই কবিতা শুধু বিষ্ণু দে ’ কে নয় , বরং নতুনতর হ ’ য়ে দেখা দেয় বাঙলা কবিতা । বিষ্ণু দে ’ র ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’ রবীন্দ্রনাথকে পড়তে হয়েছিল দু ’ বার । ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এর কবিতাগুলির রচনাকালের ব্যাপ্তি দেওয়া আছে ( ১৯২৮ - ১৯৩৩ ) সময়ের মধ্যে , এবং গ্রন্থকারে প্রকাশ পায় ওই একই বছরে অর্থাৎ , ১৯৩৩ - এ । কিন্তু রচনাকালের ব্যাপ্তি ১৯২৮ দেওয়া থাকলেও প্রকৃত পক্ষে এ সকল কবিতাগুলো রচনা পর্ব শুরু হয় আরো দু ’ বছর পূর্বে অর্থাৎ , ১৯২৬ - এ । যখন কবি হিশেবে বিষ্ণু দে একেবারেই নতুন এবং নবীন । ১৯৩৩ - এ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...