সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ আমার সন্তান ছুঁড়ে ফেলে তার সব কিছু

             
            মায়ের বুক থেকে লুকিয়েছে মুখ, তাকায় চতুর্দিকে মিটি মিটি, মৃদুসুরে  
             মাঝে মাঝে পরম আদরে, তাঁর মুখে তু’লে দেই এলডোবেবী ওয়ান;
             আদর আর ভালোবাসায় কেটে গেছে আরও ছয়টি মাস ফুলে ফুলে;   
             এলডোবেবী ওয়ান পিছে ফেলে তার মুখে তু’লে দিই এলডোবেবী টু;
             দিন আর রাত্রে ঘাসের উপর তার টলোমোলে সুখ, বেড়ে উ’ঠে সে তাঁর
             মতো ক’রে আমার সকাল আর সন্ধ্যায়। বৈশাখ আর শ্রাবণ তাঁকে ক’রে
             তোলে শব্দহীন স্মৃতি, যে আমারই কণ্ঠস্বরে কথা বলে সুরে সুরে, সম্পূর্ণ
             একা ছিলাম আমি আমার সবুজ অরণ্যেয়। আমার সন্তান বেড়ে উ’ঠে তার
             দূষিত বাতাসে, আমার নষ্টভ্রষ্ট চোখের ভিতর। দিকে দিকে তাঁকে ছেয়ে যায়
             এক একটি বছর। বাড়ায় হাত তাঁর চতুর্দিকে মুঠোতে তু’লে নিবে সব কিছু;  
             পরম আদরে। নিজের নয় সব কিছু, জানা নেই তার, তবুও বাড়ায় হাত চাঁদ,
              জ্যোৎস্না, শিশির, কুয়াশা, কচুরি ফুল আর শিউলির বোঁটায়। কণ্ঠ আর হাত,
              দিয়েছে আমাকে আপন ব’লে। আমার গৃহকোণ তার পরম আশ্রয় পঙ্কের স্নিগ্ধ, 
              ঘুমে থাকে যখন, যেনো আমি এক হারানো অরণ্যের মাঝে ব’য়ে চলা ঢেউ,
              আমার হৃদপিণ্ডে কেঁপে কেঁপে জমতে থাকে ফুল, মেঘ, বৃষ্টি আর ঠোঁটে পূর্ণিমার
              ছোঁয়া। তার কণ্ঠ আমার অমল সুর; লাল আর নীল মেঘের দিকে দিকে গভীরে;    
সে তার মতো মুঠো ক’রে ধ’রে সব কিছু, যা তার প্রয়োজন নয় নিজের জন্য,
তারপরও তা তার দরকার, আপন মুঠোতে নিজ মনে। আমার সব কিছু আজ তাঁর,
যাতে রাখে হাত মৃদুভাবে। আমার দরকারি জিনিস ছুঁড়ে ফেলে দিক্বিদিক শক্ত হাতে।
সে কি ছুঁড়ে ফেলবে তার চারিপাশে যা দেখা যায় ? আমার সমাজ রাষ্ট্র সভ্যতার
চারিদিকে যা কিছু দেখা যায় সে কি উপড়িয়ে ফেলবে তার সব কিছু ? ক’রে নিবে
                    নিজের মতো দু’হাতে, পরিবর্তনশীল নতুন কোনো কাঠামো কি ধরা দিবে হাতে ?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বিষ্ণু দে : ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’ থেকে ‘চোরাবালি’

বিষ্ণু দে , তিরিশি কবিদের অন্যতম । কবিতা রচনাই যাঁর কাছে এক এবং অদ্বিতীয় হ ’ য়ে দেখা দেয় । কাব্যে সংখ্যার দিক থেকে অতিক্রম করেছেন সতীর্থদের । বিষ্ণু দে , যাঁর কবিতা রচনার সূচনা পর্বটিও শুরু হয় খুব দ্রুততম সময়ে । কবিতা সৃষ্টির পর্বটি অব্যাহত রেখেছেন সর্বদা । পঁচিশটি কবিতা নিয়ে ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এ নিজেকে প্রকাশ করেন স্ব - মহিমায় । যে কবিতাগুলা বিস্ময়বিমুগ্ধ ক ’ রে অন্যেদেরকেও । ওই কবিতা শুধু বিষ্ণু দে ’ কে নয় , বরং নতুনতর হ ’ য়ে দেখা দেয় বাঙলা কবিতা । বিষ্ণু দে ’ র ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’ রবীন্দ্রনাথকে পড়তে হয়েছিল দু ’ বার । ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এর কবিতাগুলির রচনাকালের ব্যাপ্তি দেওয়া আছে ( ১৯২৮ - ১৯৩৩ ) সময়ের মধ্যে , এবং গ্রন্থকারে প্রকাশ পায় ওই একই বছরে অর্থাৎ , ১৯৩৩ - এ । কিন্তু রচনাকালের ব্যাপ্তি ১৯২৮ দেওয়া থাকলেও প্রকৃত পক্ষে এ সকল কবিতাগুলো রচনা পর্ব শুরু হয় আরো দু ’ বছর পূর্বে অর্থাৎ , ১৯২৬ - এ । যখন কবি হিশেবে বিষ্ণু দে একেবারেই নতুন এবং নবীন । ১৯৩৩ - এ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...