সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ হারানো সৌন্দর্য


কোমল মসৃণ ত্বক হারাচ্ছে সৌন্দর্য; খসে-খসে ঝ’রে পড়ে অমল শৈল্পিক চিত্তে
কঠিন অবয়ব কয়েক মুহূর্তে নীল হ’য়ে উ’ঠে পবিত্র দেহে কুয়াশার শিশিরে;
তাতে গেঁথে থাকে একশো একটি রক্তগোলাপ, পূর্ণিমার ভরা জ্যোৎস্নায় নীলে;  
মাংস ভেদ ক’রে পৌঁছে যায় আশ্চর্য আঙুল বিস্ময়কর শরীরে; নিঃসঙ্গ ভাবনায়  
উজ্জ্বল জলে তা ভেসে উ’ঠে দুর্ভেদ্য নির্ঝরে; আমার হারানো অতীত সম্পর্কে,  
শহরের সকল আবর্জনা যেন দিন দিন জড়ো হয় গোপন শুভ্রতার আঁখিকোণে,  
স্বপ্ন ও বস্তুর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য আজ দেখতে পাই না আমার মৌনে;  
টলোমলো জলে কালো ছায়া ভেসে উ’ঠে ছুঁয়ে যাওয়া সোনালী রূপের দিগন্তে,     
‘কালো মেঘে ছেয়ে গেছে পশ্চিমের আকাশ’ এ-কথা শুনিনি কোন কথার সুরে;  
বাল্যস্মৃতি আজও ফিরে পাই একাকী মধ্যেরাতে, জ্যোৎস্নাময় নিসর্গ সন্ধ্যায়,  
কেঁপে-কেঁপে ছুঁয়ে যায় আমার হারানো দীর্ঘ আঙুলে গেঁথে থাকা শূন্যেলোকে;
প’ড়ে রয় নরম শরীর লাল মেঘের ঢেউয়ে, পাললিক জলে, মধুমতীর তীরে,
জ্যোৎস্না মাখা চাঁদের তলে নিথর আর স্তব্ধ হ’য়ে পড়ে রয় আমার অমল ঠোঁট;  
ফোঁটায়-ফোঁটায় শিশির জ’মে উ’ঠে সবুজ ঘাসে; অনুভূতির শূন্যময় মুগ্ধহিমে; 
ইন্দ্রিয়ে ছুঁয়ে যায় কোমল ঠোঁট কিশোরীর হারানো আলিঙ্গনে; কল্পনার নিশিতে;
স্থির নিশ্চল নিঃশব্দে গেঁথে থাকে মৌলিক ভাবনার অবিরল সৌন্দর্য, নীলাকাশে,
নিজের মধ্যে মগ্ন থাকি, সকাল কি সন্ধ্যার শূন্যতায়, আলোয় ছড়িয়ে পড়া মর্মরে,  
মুছে যায় প্রসারিত রূপ আঙুলের ছোঁয়ায়; আশ্বিনের বাতাসে, টলোমলো শিশিরে;
আশ্চর্য, সব রঙ ধুয়ে-মুছে যায় শুভ্রতার কেঁপে উঠা ঝিলিকে, ঠোঁট আর নদীতে,
রূপসীর নিজস্ব রূপ আবার ফিরে পায় অদ্ভুত আভাসে, রূপান্তরিত চাঁদ-তাঁরায়; 
অনন্ত শূন্যতা; বিচ্ছেদে যারা দিয়ে গেল রাশি-রাশি প্রতিশ্রুতি; আজ বা কালের,
গ’লে পড়া স্বপ্নে, তাঁরা মিশে থাকে আত্মার পরম অস্তিতে; নীলবীথির সুনিবিড়ে;
বিস্ময়কর সব মর্মর ধ্বনি রূপান্তরিত হয়ে উঠে পৃথিবীর গাঢ় অন্ধকারের পথে;
মুহূর্তে মধ্যে সব মুছে যায় প্লাবনে; হারানো নীলিমার জ্যোতির কম্পন সবুজে;   
বিন্দু বিন্দু মেঘে নেমে আসে গাঢ় বৃষ্টি, নক্ষত্রপুঞ্জে উজ্জ্বল ঐশ্বর্য, আলোর জুড়ে;     
আমার সৌন্দর্য, প্রাগৈতিহাসিক নীলিমায়, পৃথিবী, আলো, সন্ধ্যা আর নিবিড়ে
মিশে গেছে হৃদপিণ্ড আর নির্ঘুম ভাবনার অবসরে; ঠোঁটের জন্য উন্মুখ রাখি;   
ফাল্গুন বিকেলে গেঁথে থাকে সমুদ্রের ফেনাময় আলিঙ্গনে, স্নিগ্ধ সৌন্দর্য মৌনে; 
নিবিড় সন্ধ্যায় আমি পড়ে রই তীব্র চুম্বনে; হীরকময় কুমারীর কোমল বাহুতে;  
সবুজ বিস্তৃত সমতলে, আকাঙ্ক্ষা আর সব ইচ্ছা নিঃসঙ্গতায় চ’লে গেছে নীলে;
শাদা মেঘের পূর্ণ, নিটোল ঠোঁটে আমি গেঁথে রই মায়া নদীর দুর্ভেদ্য বাহুপাশে;    



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধ সংগ্রহ

সুধীন্দ্রনাথ , সাতটি কাব্যগ্রন্থের মতো সাতটি প্রবন্ধের গ্রন্থ লিখলে খারাপ হতো না , বেশ ভালোই হতো । সুধীন্দ্রনাথের প্রবন্ধগুলো হালকা মানের নয় , যদিও তাঁর কোন রচনাই হালকা নয় । সাহিত্যে বিচারে তা অনেক উঁচুমানের । তার উপর ভাষার ব্যাপারটি তো রয়েছেই । সুধীন্দ্রনাথ মাত্র দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন । গ্রন্থ দুটো ‘ স্বগত ’ ( ১৩৪৫ ঃ ১৯৩৮ ), অপরটি ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’ ( ১৩৬৪ : ১৯৫৭ ) । ‘ স্বগত ’- তে রয়েছে ষোলটি প্রবন্ধ । গ্রন্থ দুটি তিনি রচনা করেছেন দু ’ ভাগে । লরেন্স বা এলিয়ট এর প্রবন্ধ যেমন পাওয়া যাবে না ‘ কুলায় ও কালপুরুষ ’- এ ; তেমনি রবীন্দ্র সম্পর্কিত প্রবন্ধ নেওয়া হয়নি ‘ স্বগত ’- এ । প্রকাশ কাল অনুযায়ী ‘ স্বগত ’- এর প্রবন্ধসমূহ : ‘ কাব্যের মুক্তি ’ ( ১৯৩০ ); ‘ ধ্রুপদ পদ - খেয়াল ’ ( ১৯৩২ ), ‘ ফরাসীর হাদ্য পরিবর্তন ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লিটনস্ট্রেচি ’ ( ১৯৩২ ), ‘ লরেন্স ও ভার্জনিয়া উল্ফ্ ’ ( ১৯৩২ ), ‘ উপন্যাস তত্ত্ব ও তথ্য ’ ( ১৯৩৩ ), ‘ উইলিয়ম ফকনর ’ ( ১৯৩৪ ), ‘ ঐতিহ্য ও টি , এস , এলিয়ট ’ ( ১৯৩৪ ), ...