সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ নিস্তব্ধতার সুর


অন্ধের মতো পা রাখি, শত পথ হয়তো আমাকে অতিক্রম করতে হবে জীবনভর;
ডুব দেই নিজের মাঝে, স্বপ্নের গভীরে, তীব্র ক্ষোভ জ’মে উ’ঠে সব  
রক্তের হিমে, ঐন্দ্রজালিক আলোয় বসে থাকি, সবুজ বাতাস আমাকে নিয়ে যায়
রুপালী স্বপ্নের গভীরে, বৈচিত্র্যময় মুহূর্তে হারিয়ে ফেলি গাঢ় নিঃসঙ্গতা;
বু’কের গভীর থেকে নেমে প’ড়ে শক্ত নীল পাথর, মাঘের বাতাসে-নিরুদ্দেশে  
যাদের রোপণ করেছি মনের কিনারায়, শিশিরের জলে-হলুদ রঙয়ের আলোয়;  
পূর্ণিমায় ম্লান হ’য়ে উ’ঠে ধূসর সন্ধ্যায়, জীবনের মানচিত্রে, রাতের নক্ষত্রে
ঠোঁটের ছোঁয়াও বিষাক্তে পরিণত হয় সুগন্ধময় আকুল হৃদয়ে বিবর্ণ প্রান্তরে,
নির্বিকার চেতনায় তাঁদের আর বেঁধে রাখি না-মোহিনী অন্ধকারে জীবনের রঙে
শত কথার ধারায় যাদের গান বেজে উ’ঠে অমল ধারায় সুরে-সুরে শূন্যমনে  

আমার শব্দের সম্ভারে, প্রতিধ্বনি হ’তে থাকে সেই কণ্ঠস্বর-শতাব্দীর উৎসবে;
নক্ষত্রের আড়ালে, মর্মর ধ্বনি সর্বত্র মিশে থাকে অবিন্যস্ত মুগ্ধতা-শত রূপান্তরে-
রাতের হারানো অপূর্ব সৌন্দর্য, জ্বেলে উঠা লাল আগুনে নিসর্গময় নিস্তব্ধে উত্তপ্ত
হ’তে থাকে আমার বিগলিত জ্যোৎস্না প্রবাহিত শরীরের অলৌকিক শুভ্রতায়,
শাশ্বতীর স্বপ্নচিত্তে একে যাই অস্তিত্বে; ক্লান্ত দেহে নিদ্রিত আমি ভোরের আলোয়,
বিলুপ্ত ভেজা ঠোঁটে কেঁপে উ’ঠে শাদা মেঘে, তোমাকে গেঁথে রাখি মেঘের ভিতরে;   
নক্ষত্রের প্রতীক্ষায় ধু’য়ে যায় প্রোজ্জ্বলের ক্ষত নষ্ট শরীরে; ফু’টে উঠা শুভ্রতায়
হিম ছড়ায় রক্তকোমল বিস্ময়কর আশ্চর্যজনক লীলাভূমিতে, শিশিরে ছুঁয়ে যায়
ক্ষণে-ক্ষণে তরঙ্গের আঘাতে, বিস্ময়ে ইন্দ্রিয়ে গ’ড়ে উ’ঠে আঁধারের অশ্রুকণা,
রাত্রির আকাশে, স্রোতে ভেসে যায় লাবণ্যের উচ্ছ্বাস, আমার জ্যোতির্ময় ভাবনায়,

                তারা বেড়ে উ’ঠে আমার স্বপ্নে ভর ক’রে, অন্তরালে জন্ম নেয় আশ্চর্য অতীন্দ্রিয় সুর,
                মুগ্ধময় অরণ্যের গভীরে উজ্জ্বলতর খরস্রোতে, রক্তের গভীরে জমে উ’ঠে শাদা স্বপ্ন
প্রাত্যহিক জীবনে, নিঃশেষ মুহূর্তে ভালোবাসি নিস্তব্ধতার সুর অক্ষরে-অক্ষরে প্রান্তরে
কবিতার শরীরে গেঁথে দেই প্রেমের পবিত্র পংক্তি, নয়নের কানে-কানে, টুকরো মেঘে,
ফাল্গুনের হাওয়ায় গেয়ে যায় গান নিস্তব্ধতার সুরে-সুরে, রৌদ্রের প্রোজ্জ্বল আলোয়
ভেঙে যায় সব স্বপ্ন, আমার আরক্ত হৃদয়ে কোমল স্পর্শে, স্বপ্নের দেয়ালে গেঁথে রাখি;
অন্ধকার নদীর ছায়া দিগন্তের স্রোতে, বিবর্ণ নীলিমার আশ্চার্য পৃথিবীর গভীর ছায়ায়
নিস্তব্ধতার সুর, তুমি আমাকে ছুঁয়ে যাও রুপালী জলের মেঘে, শতাব্দীর অমর প্রেমে।


              

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বিষ্ণু দে : ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’ থেকে ‘চোরাবালি’

বিষ্ণু দে , তিরিশি কবিদের অন্যতম । কবিতা রচনাই যাঁর কাছে এক এবং অদ্বিতীয় হ ’ য়ে দেখা দেয় । কাব্যে সংখ্যার দিক থেকে অতিক্রম করেছেন সতীর্থদের । বিষ্ণু দে , যাঁর কবিতা রচনার সূচনা পর্বটিও শুরু হয় খুব দ্রুততম সময়ে । কবিতা সৃষ্টির পর্বটি অব্যাহত রেখেছেন সর্বদা । পঁচিশটি কবিতা নিয়ে ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এ নিজেকে প্রকাশ করেন স্ব - মহিমায় । যে কবিতাগুলা বিস্ময়বিমুগ্ধ ক ’ রে অন্যেদেরকেও । ওই কবিতা শুধু বিষ্ণু দে ’ কে নয় , বরং নতুনতর হ ’ য়ে দেখা দেয় বাঙলা কবিতা । বিষ্ণু দে ’ র ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’ রবীন্দ্রনাথকে পড়তে হয়েছিল দু ’ বার । ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এর কবিতাগুলির রচনাকালের ব্যাপ্তি দেওয়া আছে ( ১৯২৮ - ১৯৩৩ ) সময়ের মধ্যে , এবং গ্রন্থকারে প্রকাশ পায় ওই একই বছরে অর্থাৎ , ১৯৩৩ - এ । কিন্তু রচনাকালের ব্যাপ্তি ১৯২৮ দেওয়া থাকলেও প্রকৃত পক্ষে এ সকল কবিতাগুলো রচনা পর্ব শুরু হয় আরো দু ’ বছর পূর্বে অর্থাৎ , ১৯২৬ - এ । যখন কবি হিশেবে বিষ্ণু দে একেবারেই নতুন এবং নবীন । ১৯৩৩ - এ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...