সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবিতাঃ যাচ্ছ তবে, আমাকে ছেড়ে


যাচ্ছ তবে আমাকে ছেড়ে, বিন্দু-বিন্দু অশ্রু ঝ’রে প’ড়ে অবিরল নদীর
জলের সাথে, লাবণ্যরূপে তা-বিলীন হয় দিগন্তের হাওয়ায়-
শুধু মনে প’ড়ে কোনো উত্তর দেইনি তোমার কথায়,
মানবিক সব সম্পর্ক তোমার অধীন অলৌকিক প্রতিশ্রুতিতে,
ঐশ্বর্য-স্বপ্ন-সৌন্দর্য আদিম ভাষার মতো মিশে থাকে কঠিন চিত্তে,
মুগ্ধ হ’য়ে তাকিয়ে থাকি সেই ছায়ার দিকে, বৃষ্টির ফোঁটার সাথে মধ্যেদিনে  
আমার স্বপ্নলোকে ভেসে উ’ঠে উজ্জ্বল দ্যুতিময় তীব্র শিহরণ মুহূর্তে-  
গ’লে প’ড়ে জ্যোতির্ময় চাঁদ সকল সৌন্দর্য ভেদ ক’রে,
নির্নিমেষ সুবর্ণদিনের হারানো সুরে, অন্ধকারের অবিচল পথে,
যাচ্ছ তুমি আমাকে ছেড়ে, সকল স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরমার ক’রে,
প্রতিহিংসা ছুঁড়ে- আমার জ্যোতির্ময় শরীরে, ব’য়ে যাওয়া স্রোতের দিকে   
বিষাদের চিহ্নে হৃদয় ছুঁয়ে যায় জীবনের হৃদয়স্পন্দনে     
বিতৃষ্ণার বিশাল ঠোঁটে, নক্ষত্রের আলিঙ্গনের নিবিড় স্পর্শে-
জমে উ’ঠে নির্বোধ ধ্যানে, পতঙ্গের লাল কীটের বিষাক্তে  
বিস্ময় জাগায় আমার প্রাগৈতিহাসিক সমতলে আলো ও আঁধারের বু’কে,
কালো ছায়া দৃষ্টি ছড়ায় নদীর বু’কে, মেঘের আড়ালে খেলা করে
আমার অনিশ্চিত জীবন, তোমার ভাবনার সাথে আমি মিশে থাকি
সকাল-সন্ধ্যায় স্মৃতির পাতায়, ইন্দ্রিয়ে বিষণ্ণ নিঃসরণ চেতনার ধারা,
নিটোল কঠিন রাত্রি কেটে যায় উজ্জ্বল প্রতীক্ষার অবসানে-
হিম ভাবনায় তোমাকে নিয়ে বাঁচি, ভেঙে পড়া সম্পর্কে বিধ্বস্ত নীলিমায়,
অদ্ভুত সেই অব্যক্ত কথা, দৃষ্টির সীমানায় গেঁথে থাকে নীল হাওয়ায়
ভেসে উঠা মৌলিক রূপান্তরে, পুঞ্জ-পুঞ্জ সৌন্দর্য হারিয়ে যায়
আমার গাঢ় বুক থেকে মুহূর্তে হারানো স্বপ্নলোকে,
শব্দহীন ভাবে বেঁচে থাকি নিঃসঙ্গে, জ্যোতির্ময় আলোকে 
অলৌকিক আমার সন্ধ্যা, অন্তহীন রাত্রির সুর মর্মে-মর্মে,   
সঙ্গীতের সুর আমার অমর কাব্যেয়, ধ্যানের অর্থহীন আয়ুষ্কালে গভীর
শূন্যতা আমার হারানো দিনে; সবকিছু ভেঙে পড়ে জ্যোৎস্নার আলোয় শ্রাবণের
অমল বাতাসে রৌদ্রময় বিবর্ণ দিনে, প্রতীক্ষার সমস্ত অবসান মুছে গেল,
যাচ্ছ তবে, আমাকে ছেড়ে বুকের গভীর থেকে সমস্ত স্মৃতি ভুলে।    


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রবন্ধঃ বিষ্ণু দে : ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’ থেকে ‘চোরাবালি’

বিষ্ণু দে , তিরিশি কবিদের অন্যতম । কবিতা রচনাই যাঁর কাছে এক এবং অদ্বিতীয় হ ’ য়ে দেখা দেয় । কাব্যে সংখ্যার দিক থেকে অতিক্রম করেছেন সতীর্থদের । বিষ্ণু দে , যাঁর কবিতা রচনার সূচনা পর্বটিও শুরু হয় খুব দ্রুততম সময়ে । কবিতা সৃষ্টির পর্বটি অব্যাহত রেখেছেন সর্বদা । পঁচিশটি কবিতা নিয়ে ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এ নিজেকে প্রকাশ করেন স্ব - মহিমায় । যে কবিতাগুলা বিস্ময়বিমুগ্ধ ক ’ রে অন্যেদেরকেও । ওই কবিতা শুধু বিষ্ণু দে ’ কে নয় , বরং নতুনতর হ ’ য়ে দেখা দেয় বাঙলা কবিতা । বিষ্ণু দে ’ র ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’ রবীন্দ্রনাথকে পড়তে হয়েছিল দু ’ বার । ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ’- এর কবিতাগুলির রচনাকালের ব্যাপ্তি দেওয়া আছে ( ১৯২৮ - ১৯৩৩ ) সময়ের মধ্যে , এবং গ্রন্থকারে প্রকাশ পায় ওই একই বছরে অর্থাৎ , ১৯৩৩ - এ । কিন্তু রচনাকালের ব্যাপ্তি ১৯২৮ দেওয়া থাকলেও প্রকৃত পক্ষে এ সকল কবিতাগুলো রচনা পর্ব শুরু হয় আরো দু ’ বছর পূর্বে অর্থাৎ , ১৯২৬ - এ । যখন কবি হিশেবে বিষ্ণু দে একেবারেই নতুন এবং নবীন । ১৯৩৩ - এ ...

প্রবন্ধঃ অমিয় চক্রবর্তী : ‘বৃষ্টি’ নিয়ে তিনটি কবিতা

রবীন্দ্রনাথ, মেঘ-বরষা বৃষ্টি নিয়ে এতো সংখ্যক কবিতা লিখেছেন যে তাঁর সমান বা সমসংখ্যক কবিতা বাঙলায় কেউ লিখেনি। রবীন্দ্রনাথ, যাঁর কবিতায় বার বার এবং বহুবার ফিরে ফিরে এসেছে মেঘ, বরষা, বৃষ্টি। বৃষ্টি নামটি নিলেই মনে পড়ে কৈশোর পেড়িয়ে আসা রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটির কথা। ‘দিনের আলো নিবে এল সূর্য্যি ডোবে ডোবে আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।’ বৃষ্টি নিয়ে কবিতা পড়ার কথা মনে পড়লে এটাই চলে আসে আমার মনে। অমিয় চক্রবর্তী বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা। বাঙলায় বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লিখেনি এমন কবির সংখ্যা খুব কম বা নেই বললেই চলে। অমিয় চক্রবর্তী, যাঁর কবিতায় পাই ‘বৃষ্টি’ নামক কিছু সৌন্দর্যময় কবিতা। যে কবিতাগুলো আমাকে বিস্ময় বিমুগ্ধ ক’রে। ওই কবিদের কারো কারো কবিতা দ্রুত নিঃশ্বাসে পড়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বৃষ্টি নামক প্রথম কবিতাটি পাওয়া যাবে অমিয় চক্রবর্তীর ‘একমুঠোতে’। উন্নিশটি কবিতা নিয়ে গ’ড়ে উঠে ‘একমুঠো’ নামক কাব্য গ্রন্থটি। যেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতায় তুলে নেওয়া হয় চারটি কবিতা। আমার আরো ভালোলাগে ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি ওই তালিকায় উঠে আসে। শ্রেষ্ঠ কবিতায় না আসলে আমার যে খুব খারাপ লাগতে তা-ও নয়। ওই কবিতা...

প্রবন্ধঃ বুদ্ধদেব বসু ও ‘কঙ্কাবতী’

বুদ্ধদেব বসু প্রেমের অজস্র কবিতা রচনা করেছেন । অন্য অনেকের মতো তিনিও বেছে নেন একজন প্রেমিকাকে , যে হ ’ য়ে উঠে বুদ্ধদেবের অতুল্য প্রেমিকা হিশেবে । ‘ কঙ্কাবতী ’ অনিন্দ্য প্রেমিকা হ ’ য়ে বুদ্ধদেবের কাব্যতে বিচরণ ক ’ রে স্বচ্ছন্দে । স্থির হয়ে বসে পড়ে কঙ্কাবতী ’ কাব্যগ্রন্থে । যে কাব্যগ্রন্থে ‘ কঙ্কাবতী ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে ‘ কঙ্কাবতীকে ’ দেখা দেয় অনৈসর্গিক হয়ে । ‘ কঙ্কাবতী ’ কাব্য রচনার পূর্বে কঙ্কাবতীকে আমরা দেখতে পাই অন্য কোনো কবিতায় । যেখানে সে প্রেমিকার কাছে হয়ে ওঠে কুৎসিত কঙ্কাল ব্যতীত অন্য কিছু নয় । প্রগাঢ় ভাবে প্রাপ্তির জন্যে সমস্ত কবিতা জুঁড়ে দেখতে পাই কবির অপরিবর্তনীয় আবেদন । কঙ্কাবতী , যাঁর সাথে কিছু বাক্য বিনিময়ের জন্যে রক্তের হিমবাহে দেখা দেয় চঞ্চলতা । সুপ্রিয়া প্রেমিকা মুখ তোলা মাত্র কবি হাঁরিয়ে ফেলেন ওই সৌন্দর্যময় বাক্যগুলো , যা বলার জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন কবি দীর্ঘদিন । প্রেমিকা যখন খুব কাছাকাছি হয়ে এগিয়ে আসেন , ওই ব্যর্থ ...