আমাদের ক্লাসটা কখনও এমন নীরব হয়ে উঠে না, আজ যেভাবে রয়েছে। সবাই খুব চুপচাপ। যেন কারও মুখ দিয়েও শ্বাস-প্রশ্বাস পড়ছে না। এতগুলো ছাত্র, কিন্তু কারও মুখে কোন কথা নেই। ক্লাসের চতুর্দিকে যেন একপ্রকার গভীর নীরবতা বয়ে যাচ্ছে। যদিও ক্লাসের এমন আচরণ কখনও কারও জন্য কাম্য হয়ে উঠে না। স্যার ক্লাসে ঢুকা মাত্রই সবাই যেন আরও বরফ হয়ে উঠল। না জানি কার কপালে আজ কি আছে। একজন আর একজনের মুখের দিকে শুধুই তাকিয়ে আছে। সাথে-সাথে সকলের বুকটা কেঁপে উঠছে। কিন্ত কোন কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। স্যার অন্যদিনের তুলনায় খুবই গম্ভীর হয়ে আছেন। চেয়ারে বসে আবার একটু চুপ করে রয়েছেন। এবার ডাকলেন, ‘সুমন, তুই এদিকে আয় ?’ তাকে ডাকা মাত্রই সে উত্তর দেয়, স্যার, ‘আমি তো কিছু করিনি?’, স্যার বলে, ‘আমি তো তোকে কিছু করার কথা বলিনি। তোকে এদিকে আসতে বলেছি।‘ ‘সুমন বলে, ‘স্যার, কাজটা কে করেছে তাও আমি জানি না।‘ স্যার বলে, ‘আমি তোর কাছে এত কথা শুনতে চায়নি। তুই এদিকে আয়।’ সুমন ভয়ে-ভয়ে ডেস্ক ছেড়ে স্যারের দিকে এগিয়ে যায়। কিছু বুঝার আগেই, তার যে ডাক পড়বে সে কখনও তা ভাবেনি। মনে মনে সুমন ভাবতে থাকে, না জানি কি কপালে আছে...
মামুনুর রহমান, সমকালীন বাংলা সাহিত্যের এক অদ্বিতীয় সংবেদনশীল কণ্ঠ। তাঁর লেখায় জীবনের সাধারণ মুহূর্তগুলোও নতুন এক আলোর আভায় ফু’টে ওঠে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, কবিতা কেবল শব্দের খেলায় সীমাবদ্ধ নয়; এটি সেই নীরব ভাষা, যা অন্তরের গভীরে বাস ক’রে, পাঠকের অভ্যন্তরীণ অনুভূতির সঙ্গে মিশে এক অনন্য প্রতিধ্বনি সৃষ্টি ক’রে। তেমনি তাঁর গদ্য রচনা পাঠককে শুধু ভাবায় না, বরং অনুভব করায়, জীবনের ক্ষুদ্রতম ছোঁয়ায়ও গভীর মানসিক ধ্বনিতে স্পন্দিত ক’রে। তিনি খেয়াল রাখেন পাঠকের মন ও মননশীল দিকটি।